মৃত্যুর ওপারে বসে হাসছেন গ্যালিলিও, আর গোটা দুনিয়াকে দেখিয়ে যাচ্ছেন মিডল ফিঙ্গার!

ফ্লোরেন্স শহরের মূল ফ্রান্সিস্কান চার্চ ব্যাসিলিকা ডি সান্টা ক্রোস-এ সংরক্ষিত আছে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলির মরদেহ। ষোড়শ শতাব্দীর এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীর পাশেই শুয়ে আছেন শিল্পী মাইকেল এঞ্জেলো, ম্যাকিয়াভেল্লি, কবি ফোস্কোলো, দার্শনিক জেন্টাইল এবং সুরস্রষ্টা রসিনি। ১৬৪২ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও যখন মারা যান, তাস্কানির গ্র্যান্ড ডিউক তাকে এখানেই বিজ্ঞানীর পূর্বপুরুষদের সাথে সমাধিস্থ করতে চেয়েছিলেন। গ্যালিলিওর বলা তত্ত্ব পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে, এই কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে চার্চ গ্যালিলিওকে সাক্ষাত শয়তান এবং চার্চের শত্রু বলে ঘোষনা দেয়ায় ডিউকের পরিকল্পনা সফল হয়নি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন গৃহবন্দী। তাঁকে নভিস চ্যাপেলের এক ছোট্ট একটা কক্ষে সমাধিস্থ করা হয়। 

গ্যালিলিওর মৃত্যুর পর চার্চের সর্বোচ্চ চেষ্টায় তাঁর সমস্ত তত্ত্ব এবং কাজ লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। ৪৫ বছর পর বৃটিশ বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন লেখেন পৃথিবী কাঁপানো এক বই “ম্যাথমেটিকাল প্রিন্সিপ্যালস অফ ন্যাচারাল ফিলোসফি”। তাঁর দেয়া অভিকর্ষ এবং গতিসূত্র প্রমাণ করে দেয় যে পৃথিবী আসলেই সূর্যের চারদিকে ঘোরে, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে না, গ্যালিলিও ঠিকই বলেছিলেন!

অবশেষে ১৭১৮ সালে চার্চ নিজেদের ভুল স্বীকার করে গ্যালিলিওর কাজের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয়। ১৭৩৭ সালে গ্যালিলিওর দেহ সমাধি থেকে উত্তোলন করে পূর্ণ সম্মানের সাথে ব্যাসিলিকায় সমাধিস্থ করা হয়। পুনরায় সমাধিস্থ করার আগে কিছু ভাবশিষ্য বেচারা গ্যালিলিওর শরীর থেকে হাতের তিনটা আঙুল, একটা দাঁত আর মেরুদন্ডের একটা হাঁড় রেখে দেয়। মেরুদন্ডের হাঁড় রাখা হয় গ্যালিলিও যে বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন, সেই ইউনিভার্সিটি অফ পাদুয়া'তে। দাঁত আর হাতের আঙুল প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ছিলো কালেকটরদের কাছে। পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে। ১৯০৫ সালে এগুলো হারিয়ে যায়। 

গতালিলিওর সে আঙ্গুল

২০০৯ সালে এক অকশন হাউজে সপ্তদশ শতকের কিছু ধর্মীয় আচারের উপকরণ দেখা গেলো। সাথে একটা কাঠের বাক্স। গোটাটাই বিক্রি হয়ে যায় ‘আননৌন অবজেক্ট’ হিসেবে। ক্রেতা ফ্লোরেন্সের স্বনামধন্য কালেক্টর আলবার্টো ব্রুসকি। ব্রুসকি না জেনেই কিনেছিলেন। ব্রুসকি এবং তার কন্যা বাক্স খুলে দেখলেন গ্যালিলিওর নাম খোদাই করে একটা ছোট বাক্স আছে ওর ভেতর। এবং তার ভেতর কাঁচের ডিম্বাকৃতির একটি বয়্যাম। তার মধ্যে শুকানো একটা আঙুল আর একটা দাঁত।

ইতিহাস বহু ঘাঁটাঘাটি করে জানতে পারলেন গ্যালিলিওর শরীর পুনঃসমাধিস্থ করার আগে তার ভাবশিষ্যদের করা কীর্তির কথা। তারপর তারা মিউজিয়াম কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। কতৃপক্ষ ল্যাবরেটরীতে নানাবিধ টেষ্ট এবং নিজেরাও গবেষণা করে নিশ্চিত হয় যে ওগুলো গ্যালিলিওর শরীরের অংশ।

ব্যাসিলিকা ডি সান্টা ক্রোসের পাশে হাঁটা দুরত্বেই আছে মিউজিও গ্যালিলিও। এই মিউজিয়ামে গ্যালিলিওর ব্যবহৃত নানা দ্রব্যাদি সংরক্ষিত আছে, যেমন- এক্সট্যান্ট টেলিস্কোপ, থার্মোমিটার, গ্যালিলিওর নিজের বানানো সেলেস্টিয়াল এবং টেরেট্রিয়াল গ্লোব। এখন এগুলোর পাশাপাশি আছে গ্যালিলিওর দাঁত আর আঙুল। মধ্যমা। মৃত্যুর ওপারে বসে হাসছেন গ্যালিলিও, আর গোটা দুনিয়াকে দেখিয়ে যাচ্ছেন মিডল ফিঙ্গার!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা