যে দেশে টাকার অভাবে মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করে, সেদেশে জামায়াত স্বাধীনতা উদযাপন করতেই পারে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এই ৪ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় টাকার অভাবে নিজের চিকিৎসা করাতে না পেরে, ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস মিয়া। আর ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়তে ইসলামী ঘোষণা দেয়, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে। নিয়তির কী নির্মম পরিহাস!
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। দিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা লাইনটির অর্থই বদলে গেছে এখন। যে দেশ স্বাধীন করা মানুষগুলোকে অনাদরে বেছে নিতে হয় আত্মহত্যার পথ এবং স্বাধীনতা বিরোধীরা উদযাপন করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী; এমন দেশ আসলেই কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটাই কি তবে স্বাধীনতার নমুনা? এমন দেশই কি আমরা চেয়েছিলাম? দেশটা কি আসলেই স্বাধীন হয়েছে? প্রশ্নগুলো থেকেই যায়।
আমরা একই সাথে মুজিববর্ষ উদযাপনের নামে শতকোটি টাকার হরিলুট দেখছি, আবার টাকার অভাবে একজন দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতেও দেখছি। আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়তো এমন দিন দেখতে হতো না। তিনি নিশ্চয়ই তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সেই অসহায় মুক্তিযোদ্ধার কাঁধে হাত রেখে বলতেন, ‘কিরে ব্যাটা চিন্তা করিস কেন? আমি আছি না’।
আত্মহত্যা করতে বাধ্য হওয়া সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আব্দুল কুদ্দুস মিয়া। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের চণ্ডিয়া গ্রামের এই বাসিন্দা ৪১ ব্যাটালিয়নের ১১ নং সেক্টর থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৮৩ বছর বয়সী এই মানুষটা দীর্ঘদিন ধরে লিভার আলসার ও গ্যাস্ট্রিকের রোগে ভুগছিলেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। তার দিনমজুর ছেলেরদের পক্ষেও চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছিলো না। আর কোনো উপায় না দেখে স্থানীয় মিয়াপাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব নেন। একে তো অসুস্থ শরীর, সঙ্গে বয়সের ভার, এই দুই মিলিয়ে সেই দায়িত্বও পালন করা সম্ভব হয়নি বেশিদিন।
অর্থাভাবে উন্মাদের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন সাহায্যের জন্য। তবুও নিজের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করাতে পারেননি এই মুক্তিযোদ্ধা। আচ্ছা, মুক্তিযুদ্ধ না করলেও কি বেঁচে থাকার কোনো অধিকার ছিলো না তার? তিনি একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। সে মসজিদ কমিটিও কি তাকে সাহায্য করতে পারলো না? এলাকাবাসীদের মধ্যেও কি কেউ এগিয়ে আসতে পারলো না একজন অসহায় বৃদ্ধ মানুষকে সাহায্য করার জন্য? এদেশে ওয়াজ মাহফিলের জন্য টাকার অভাব হয় না, অথচ একজন মুয়াজ্জিন টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। সামান্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি দেখার জন্য হলেও আমরা ভিড় জমাই, অথচ একটা মানুষ চিকিৎসার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালো কেউ এগিয়ে আসলো না। আমরা কী তাহলে ভুল জায়গায় ভিড় জমানোই শিখেছি শুধু?
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী ও তৎকালীন দলটির অনুসারী সংগঠন ছাত্র সংঘ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সক্রিয় বিরোধিতা করেছিলো। পাকিস্তানি হানাদার ও বাংলাদেশি আলবদর বাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিলো তারা। ত্রিশ লাখ প্রাণ ও আড়াই লাখ মা বোনদের সম্মান ছিনিয়ে নেয়া সেই বর্বরতায় সরাসরি অংশগ্রহণ করা জামায়াতে ইসলামী এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে চায়। কতোটা নির্লজ্জ হলে এমন ঘোষণা দেয়া সম্ভব। নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত না হয়ে উল্টো উৎসব পালন করতে চাচ্ছে। যে দলের ৫ জন নেতার ফাঁসিই ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে, তারা কিনা স্বাধীনতার জয়ল্লাস করবে। কী হাস্যকর!
এই ৪ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস মিয়া। আর ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়তে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করার ঘোষণা দেয়। কী অদ্ভুত তাই না? জাতির কাছে ক্ষমা তো চাচ্ছেই না, বরং বেহায়ার মতো ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে। নির্লজ্জ জামায়েতের তো উচিত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয়া। অথচ যারা দেশটাকে স্বাধীন করলো তাদের আত্মহত্যা করতে হচ্ছে। আর যারা দেশ স্বাধীনের বিপক্ষে ছিলো তারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে। আসলেই, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!