অরণ্যে রোদন নয়, নারী হয়ে একটি দাবী নিয়ে এসেছি...
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
স্কটল্যান্ডের মতো উদ্যোগ আমাদের দেশেও নেওয়া হোক, পিরিয়ড পণ্য ফ্রী করা হোক সকল শ্রেণির নারীর জন্য, সরকারের কাছে এ অরণ্যে রোদন করবো না, তবে একজন নারী হিসেবে, সচেতন নাগরিক হিসেবে এই দাবীটুকু করতেই পারি...
নারীদের জন্য পিরিয়ডের সকল পণ্য বিনামূল্যে দিচ্ছে স্কটল্যান্ড। পিরিয়ডের পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিন, তুলা, ট্যাম্পন ইত্যাদি। এর আগে ২০১৮ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড দেওয়া শুরু করে স্কটল্যান্ড। এখন থেকে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও দেশের প্রত্যেক নারী এই সুবিধা ভোগ করবে। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ঐতিহাসিক এ আইন পাশ হওয়াতে দারুণ খুশি বিলটির উত্থাপনকারী মণিকা লেনন। 'পিরিয়ড পোভার্টি' দূরীকরণের লক্ষ্যে ২০১৯ সালে পার্লামেন্টে তিনি এ বিলটি উত্থাপন করেছিলেন।
অসাধারণ এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করছে সমগ্র বিশ্বের মানুষ। বেশীরভাগ দেশে যেখানে পিরিয়ড এখনো ট্যাবু হয়েই আছে, সেখানে স্কটল্যান্ড এ আইন পাশ করে দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছে, সাধুবাদ জানাই আমরাও। তবে সংবাদটি পড়ে চলতি বছরের 'নো ভ্যাট অন প্যাড' আন্দোলনের কথা মনে পড়ে গেল আমার।
বেশীদিন আগের কথা না, নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে স্যানিটারি ন্যাপকিনের কাঁচামাল আমদানিতে ৪০% ভ্যাট আরোপ করা হয়। অতিরিক্ত এ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবীতেই এ আন্দোলনের সূত্রপাত। আন্দোলনকারীদের মতে- স্যানিটারি ন্যাপকিন নারীদের অতি প্রয়োজনীয় পণ্য হলেও এটাকে বিলাসী পণ্য ধরে 'পিংক ট্যাক্স' আরোপ করা হয়েছে। যদিও আন্দোলনের মুখে পড়ে পরবর্তীতে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয় সরকার, তবুও এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট যে এখনো স্যানিটারি ন্যাপকিনকে বিলাসী দ্রব্য হিসেবেই দেখা হয়!
এ ধারণা শিক্ষিত মহলেও যে কতটা প্রকট, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তার আরেকটি উদাহরণ দেই। একটি ভলান্টিয়ারিং অর্গানাইজেশনে কাজ করার সুবাদে কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত গ্রামে ত্রান নিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল একবার। প্রতিবারের মতো সেবারও চাল-ডাল-আলু, অর্থাৎ খাদ্যসামগ্রীর বাইরে বন্যাকবলিত নারীদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি থেকে। এ কথা শোনার পর পরিচিত এক 'শিক্ষিত' ব্যক্তি ব্যঙ্গ করে বলেছিল, 'প্যাড কেন দেওয়া হচ্ছে? বেঁচে থাকার আবশ্যিক উপকরণই পায় না, আবার বিলাসীতা!’
এই 'বিলাসীতা' ধারণার কারণে দেশের অধিকাংশ নারীদের পিরিয়ডকালীন সময়ে পুরোনো কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহার করতে হয়, যা ভিষণ অস্বাস্থ্যকর। এক ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভেতে দেখা গেছে, মেন্সট্রুয়াল হাইজিন মেনে না চলার কারণে বাংলাদেশের ৭৩ শতাংশ নারী জরায়ু, জরায়ুমুখ ও মূত্রনালির সংক্রমণের শিকার হন, যা থেকে পরবর্তীতে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে প্রবল।
যদিও আমাদের দেশে পিরিয়ড নিয়ে সচেতনতা শুরু হয়েছে, বিইউপি-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্যাড কর্ণার চালু হয়েছে, সচেতন শ্রেনীতে পিরিয়ড যে ট্যাবু নয়, সে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, হচ্ছে.. কিন্তু সংখ্যায় তা এখনো অত্যন্ত নগণ্য। দেশের অধিকাংশ মানুষই পিরিয়ডকে এখনো ট্যাবু মনে করে এবং রক্ষনশীল মানসিকতা থেকেই এ নিয়ে তারা আলাপ-আলোচনা করতে চায় না।
বেসরকারিভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান এ ট্যাবু ভাঙায় এগিয়ে আসলেও প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ। সরকারী প্রচারণা না হলে মেন্সট্রুয়াল হাইজিন নিয়ে সতর্ক হবে না দেশের মানুষ। ফলে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের মতো মরনব্যধীতে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা কেবল বেড়েই যাবে৷
স্কটল্যান্ডের মতো উদ্যোগ আমাদের দেশেও নেওয়া হোক, পিরিয়ড পণ্য ফ্রী করা হোক সকল শ্রেণির নারীর জন্য, সরকারের কাছে এ অরণ্যে রোদন করবো না, তবে একজন নারী হিসেবে, সচেতন নাগরিক হিসেবে এতটুকু দাবী করতেই পারি- ফ্রী না হলেও দেশের প্রত্যেক প্রান্তের নারীদের স্বল্পমূল্যে পিরিয়ড পণ্য যোগান দেওয়া হোক; তাদের মেস্ট্রুয়াল হাইজিন নিশ্চিত করা হোক।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন