মহানবীর ব্যাঙ্গচিত্র, মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া ও ফ্রান্সের 'বাক-স্বাধীনতা'র স্ট্র্যাটেজি
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ধর্ম চর্চার ভালো-খারাপ নিয়ে কথা বলতে চাইলেও সেটা নিয়ে কনস্ট্রাকটিভ আলোচনা-সমালোচনা হতে পারে। অনেক আর্গুমেন্টাল টক শো হয় পৃথিবীজুড়ে। কিন্তু একদমই মিনিংলেস কার্টুন আঁকার মানে হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে কোন সততা নাই...
অনেকে আছেন যারা বলে, খ্রিস্টান ধর্মে খ্রিস্টানেরাই নিয়মিতই যীশু খ্রিস্টকে নিয়ে অনেক মজা করে, প্রচুর ট্রল করে। বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই তাঁদের দেব-দেবীদের নিয়ে কার্টুন আঁকে। কিন্তু এসব নিয়ে তাঁরা কখনো উগ্রতা দেখায় না। মুসলমানেরা কেন এই ধরনের ঘটনায় এতো প্রতিক্রিয়াশীল হয়, তাঁরা কেন সহনশীল না?
প্রথম কথা হচ্ছে, উগ্রতা বা হত্যা কখনোই সমর্থনযোগ্য না, ঘৃণ্যতম অপরাধ। ফ্রান্সে যে শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে তাঁর বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত। এইটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।
এখন এই ঘটনায় ফ্রান্সের "বাক-স্বাধীনতার" স্ট্র্যাটেজি কি সমর্থনযোগ্য? একজন মুসলিম হিসেবে সেটার উত্তর 'না'-ই হবে! হত্যা বা কোন ধরনের অপরাধ না করে সহনশীলভাবে তাঁদের বুঝাতে হবে যতই বাক-স্বাধীনতার কথা কপচানো হোক না কেন, মানুষের বেসিক "ধর্মের" আবেগের জায়গাটায় একদমই অপ্রাসঙ্গিক 'বাক-স্বাধীনতা' বিরোধীতাযোগ্য। এইটা যেকোন ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ধর্ম চর্চার ভালো-খারাপ নিয়ে কথা বলতে চাইলেও সেটা নিয়ে কনস্ট্রাকটিভ আলোচনা-সমালোচনা হতে পারে। অনেক আর্গুমেন্টাল টক শো হয় পৃথিবীজুড়ে। কিন্তু একদমই মিনিংলেস কার্টুন আঁকার মানে হচ্ছে তাঁদের উদ্দেশ্যে কোন সততা নাই।
যদি তাঁরা বাক-স্বাধীনতার নামে এই কাজগুলো অব্যাহতও রাখে, তাহলেও মারামারি না করে তাঁদের বুঝাতে হবে যে তাঁরা এইগুলো করতে পারে না! কোন মুসলিম যদি সেই উগ্রতার পথে না গিয়ে ভিন্নপথে "ফ্রান্সের প্রডাক্ট বর্জন" বা সমাবেশ- এই ধরনের কাজ করে শান্তি পায়- তাহলে সেটাই উত্তম। এইখানে তো কোন সহিংসতা নাই। সেটাকেও কেন ট্রল করা হবে?
অন্য ধর্মের সাথে মুসলিমদের প্রতিক্রিয়াশীলতার কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। কেন খ্রিষ্টানদের কাছে যীশু খ্রিস্টের (ঈসা (আ))-এর প্রতিকৃতির বাক-স্বাধীনতা আর মুসলমানদের কাছে মুহাম্মদ (সা) এর প্রতিকৃতির বাক-স্বাধীনতা ডিফ্রেন্ট।
মুহাম্মদ (সা) নিজে তার কোন ছবি বা প্রতিকৃতি আঁকতে নিষেধ করে গেছেন। এর কারণটাও খুব স্বাভাবিক। দেখেন, যীশু খ্রিস্ট বা ঈসা (আ) এর প্রতিকৃতি ছিল বলেই পরবর্তীতে মানুষ তার প্রতিকৃতি দেখে খ্রিস্টকে গড ভেবে তাঁর প্রার্থনা করা শুরু করে। প্রার্থনার মধ্যে ঈসা (আ) এর ক্রুশবিদ্ধ যে প্রতিকৃতি আছে সেটাই খ্রিস্টান ধর্মের প্রার্থনার মূল অনুষঙ্গ।
এখন ইসলাম ধর্মের মূল ব্যাপার হচ্ছে তাওহীদ বা একত্ববাদ। আল্লাহ একাই এবং প্রার্থনা শুধুমাত্র তাঁরই করতে হবে। এই কন্সেপ্টের পরেও বিভিন্ন জায়গায় এতো মাজার পূজা হয়। মুহাম্মদ (সা) এর কোন ছবি নাই। তারপরেও এক ধরনের মিলাদের নামে অনেকে প্রায় তাঁর নামেই প্রার্থনা করে।
এখন চিন্তা করে দেখেন মুহাম্মদ (সা) এর ছবি থাকলে কী হতো। অনেক মুসলমানই উনাকে যেভাবে বিশ্বাস করে, দেখা যেতো মুহাম্মদ (সা) এর ক্ষেত্রেও যীশু খ্রিস্টের মতো পরিণতি হতো। মানুষজন মুহাম্মদ (সা) এর ছবি সম্বলিত টি-শার্ট পড়তো, তাবিজ বানিয়ে ঘুরতো। ইসলামও তখন আরেকটা শিরকের ধর্মে পরিণত হতো।
অন্য অনেক ধর্মের উদাহরণ যারা দিচ্ছেন সেটার বেসিক কন্সেপ্টে 'গড' মাল্টিপল হতে পারে। কিন্তু ইসলামে সেটা একদমই নিষিদ্ধ। সেজন্য সতর্কতা হিসেবেই মুহাম্মদ (সা) এর ছবিও নিষিদ্ধ।