সময় থাকতে মানুষ হোন, পাঁঠা হয়ে থাকা নিশ্চয়ই খুব ট্যাঁশশশ না!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
পিরিয়ড নিয়ে যে পরিমাণ লেখালিখি ফেসবুকে হয়েছে, তাতে আমার মনে হয়েছিল, পিরিয়ড যে একটা স্বাভাবিক বিষয়, সেটা এতদিনে নিশ্চই বাঙালী বুঝে গেছে। প্রতি মাসে আমি এবং আমরা মেয়েরা যে অমানসিক কষ্ট পাই, সেটা নিশ্চয়ই এখন সবাই বোঝে। তাই বহুদিন এই বিষয় নিয়ে লিখিনি। কিন্তু...
সম্প্রতি সেনোরার পিরিয়ড নিয়ে বানানো বিজ্ঞাপনটার নিচে, এবং সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে কচি পাঁঠা সম্প্রদায়ের প্রচুর ম্যাৎকার দেখে মনে হলো, চুপ থাকলে অন্যায় হবে। অন্তত প্রত্যেকটা সচেতন এবং বিবেকবান মানুষের জন্য হলেও আমার লেখা উচিৎ। এরপর পাঁঠাগন মানুষ হবেন কিনা, সেটা উনারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
সেনোরার এই এডটার কনসেপ্ট হলো, ভাই তার বোনকে, করোনার এই ঘর-বন্দি সময়ে, অনলাইন থেকে প্যাড কিনে দিচ্ছে। কি চমৎকার একটা বিষয়! এডটা দেখে আমার ছোট ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। আমরা দুই ভাই বোন। আমার ছোট ভাইটা কেন আমার বোন হল না, সেই আক্ষেপ আমার কখনো হয়নি। কি করে হবে, ভাই আর বোন যে আলাদা হয়, এই ধারণাই আমাদের মধ্যে কখনো হয়নি। আমার প্যাড আমার ভাই কিনে আনুক, আমার বাবা আনুক, আমার আত্মীয়, কিংবা বন্ধু সেটাই তো স্বাভাবিক বিষয়। ভাইকে যদি আমি আমার শারীরিক কষ্টের কথা বলতে না পারি, তবে সে কিসের ভাই, কিসের বোন, কিসের আপন জন!
এবার ফিরি বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে। বিজ্ঞাপনটার বিষয়ে পাঁঠাগণ উনাদের কমেন্টে লিখছেন, পিরিয়ড মানে নোংরা বিষয়! কেউ কেউ স্বপ্নদোষ, মাস্টারবেশনের সাথে পিরিয়ডের তুলনাও দিয়ে দিছেন! এক কাঠি বেশী পাঁঠাগন, প্যাডকে কনডমের সাথে তুলনা করছেন!
অথচ পিরিয়ড হলে কেউ যৌন সুখ পায় না, পর্ণ দেখে কারো পিরিয়ড হয় না। যৌনাঙ্গ দিয়ে তিন চার দিন ধরে ক্রমাগত রক্ত ঝরা কোন আনন্দের বিষয় না, তলপেটে অসহ্য ব্যথা হওয়া, সারা রাত না ঘুমিয়ে বসে থাকা কোন উচ্ছ্বাসের ব্যাপার না। এরপর প্যাড কিনে আনার সময় দোকানদার থেকে শুরু করে চারপাশের মানুষের কুৎসিত দৃষ্টির সম্মুখীন হওয়াটাও নিশ্চয়ই উপভোগ্য না।
তারা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারতেন, উনাদের জন্ম যে প্রক্রিয়ায়, যে প্রক্রিয়ায় সমস্ত মানুষ এর জন্ম- সেটা নোংরা না। এই যে প্রতি মাসে মেয়েরা পিরিয়ডের ব্যথা সহ্য করে, তার ফলাফল উনাদের পৃথিবীতে আগমন; উনারা, আমি কিংবা আমাদের অস্তিত্ব টিকে থাকা। উনাদের মায়েরা এই কষ্ট মেনে নেয়া প্রত্যাখ্যান করলে, উনাদের এসব লেখার সুযোগ হত না। তারা একটু গুগল করলেই জানতেন, যে সব মেয়েরা প্যাড কিনতে পারে না, তারা নোংরা কাপড়, তুলা এসব ব্যবহার করে রোগে আক্রান্ত হন। প্রচুর মেয়ে প্রতি বছর এসব রোগে ভুুুগে মারা যান।
এই স্বাভাবিক বিষয়টা প্লিজ বুঝুন, ভাই যদি বোনের জন্য ওষুধ কিনতে পারে তবে প্যাডও কিনতে পারবে, বাবা যদি মেয়ের জন্য ব্রাশ কিনতে পারে তবে প্যাডও কিনতে পারবে। আপনার বোনটা যে প্রতি মাসে প্রচণ্ড কষ্ট পায় সেটা বুঝুন। তাকে সাহস দিন, তার পাশে থাকুন। তার কি লাগবে জিজ্ঞেস করুন। সময় থাকতে মানুষ হোন, পাঁঠা হয়ে থাকাটা নিশ্চয়ই খুব ট্যাঁশশশ না!