চায়ের দাম মেটানো যায়, স্মৃতির দাম কি করে মেটাই?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
শাহরিয়ার নাফিস ভাই এই মামার হাতে চা খাচ্ছেন, আজকের দিনে ছবিটা দেখে কি স্পেশাল মনে হচ্ছে! এমনই অসংখ্য স্পেশাল মুহুর্ত এই মামারা তৈরি করে যান প্রতিদিনই...
শাহরিয়ার নাফিসের এই ছবিটা নটরডেম কলেজের এক পেজে দেখলাম। তিনি নটরডেমেও পড়তেন তা জানতাম না। যাইহোক, এই ছবিটা কিন্তু আমাদের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের) বিজন্যাস ফ্যাকাল্টির ভেতরে। ছবিটায় যিনি নাফিস ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন, তিনি আমাদের খুবই চেনা। বিড়ি চত্বরে যে চাওয়ালা মামাদের মুখ দেখে দেখে বিজনেস ফ্যাকাল্টির ছেলেপেলেরা বড় হয়, এই মামা তাদের একজন।
বিড়ি চত্বরে একটা মজার ব্যাপার ঘটে। তিনজন চা ওয়ালা মামা কাপে চা ঢেলে একজন ছাত্রের দিকে এগিয়ে যান। এটা তাদের প্রতিযোগিতা। কে আগে স্টুডেন্টদের হাতে চা তুলে দিবেন৷ তাদের প্রতিযোগিতার পাল্লায় পড়েনি এমন ছেলেমেয়ে খুব কমই আছে এফবিএসে।
-মামা চা খামুনা।
-আরে লন। লেবু দিয়া দিসি।
-মাত্র খাইয়া আসলাম।
-আরেকবার খাইলে কিছু হইবো না। খান।
ধরেন আমার হাতে এক মামা চা তুলে দিলো তো আমার বন্ধুর হাতে আরেক মামা চা গছিয়ে দিলো। তাদের এই ব্যাপারটা মাঝেমধ্যে বিরক্তিরও কারণ। এমন অনেক দিন ছিল যে চা খাওয়ার তৃষ্ণা হয় নি কিন্তু তাদের জন্যে চা খেতে হয়েছে। এক কাপ চা-ই তো। আমি ভাবি এতো অনুরোধ করে চা সাধছে, না নিলে খারাপ লাগে যদি তাদের। আমাদের স্যারেরাও এই মামাদের চা খেতে খেতে স্যার হয়ে গেছেন। অনেকে স্যার হয়েও তাদের চা খান। এটা এক অদ্ভুত চক্র।
একবার দেখি এক ভদ্রলোককে এক মামা চা খাওয়াচ্ছেন আর বলছেন, আপনে তো দেখি আসেন না এইদিকে, কতদিন পর আইলেন, কতদিন পর আপনেরে চা খাওয়াইতেসি... চলে যাওয়ার পর মামা বললো, বুঝলেন মামা এই যে দেখলেন একটু আগে চা খাইয়া গেছে খুব ভাল মানুষ। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে বিরাট চাকরি করে। স্টুডেন থাকতে ডেইলি চা খাইতো আমার থিকা...
অদ্ভুত ব্যাপার। আপনি চলে যাচ্ছেন। বহু দিন বাদে ফিরে এসে আবার যখন দেখেন ক্যাম্পাসে আপনার স্মৃতি কেউ অপার মমতায় স্মরণে রাখছে এই এচিভমেন্টের কথা হয়ত কোনো সিভিতে লেখা যায় না কিন্তু এই আনন্দ তুচ্ছ করার মতো না মোটেও...
নাফিস ভাই এই মামার হাতে চা খাচ্ছেন, আজকের দিনে ছবিটা দেখে কি স্পেশাল মনে হচ্ছে! এমনই অসংখ্য স্পেশাল মুহুর্ত এই মামারা তৈরি করে যান প্রতিদিনই। তাদের চা খুব স্পেশাল তা দাবি করবো না কিন্তু পাঁচজনে দাঁড়িয়ে বিড়ি চত্বরে স্যাগারিন মেশানো চা খেতে খেতে সময়ের যে অপচয়টা ছেলেপেলে করে, সেই অপচয়টাই খুব স্পেশাল।
আজকে ছবিটা দেখে ভাই বন্ধুরা নাফিস ভাইয়ের কথা লিখছেন। নাফিস ভাই নিঃসন্দেহে আমাদের গর্বের জায়গা। সেই সাথে এই চাওয়ালা মামাদের কথা বলতে ইচ্ছে করলো। তারা নাফিস ভাইদের যেমন চা খাওয়ায়ে চাঙ্গা রেখেছেন, আজও প্রতিবছর ক্যাম্পাসে আসা নতুন নতুন মানুষদের তারা চা সার্ভ করে যান৷ চা-কে উপলক্ষ করে যে হাজারো স্মৃতি তৈরি হয় সেই কারখানার অন্যতম কারিগর এই মানুষগুলো।
আমরা চায়ের দাম মেটাই কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপার থাকে যার দাম কখনো মেটানো হয় না। সেই সাধ্যই বা কার আছে যে স্মৃতির দাম মেটাতে পারে!