তিন বছর বয়সে বাবা আর পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারালো একটা মেয়ে। এতিম সেই মেয়েটার শিশুকালেই বিয়ে হলো শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে। বঙ্গবন্ধুকে আমরা কম-বেশি জানি, অথচ বেগম ফ‌জিলাতুন্নেছার সংগ্রামটা আড়ালেই রয়ে যায় সবসময়...

মানুষকে আমরা এমনিতেই মানুষের মানুষের মর্যাদা দেই না। আর তি‌নি য‌দি হন নারী তাহলে  তো কথাই নেই। আর সে কারণেই  বাঙালি প্র‌তিটা নারীর ত্যাগ সংগ্রামের মহাকাব্যগুলো আড়ালে থেকে যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মু‌জিবের সংগ্রামের কাব্যটাও তাই সাধারণ মানুষ সেভাবে জানেন না। 

একবার ভাবুন, তিন বছর বয়সে বাবা হারালো একটা মেয়ে। পাঁচ বছর বয়সে হারিযেছে মা। এতিম সেই মেয়েটার শিশুকালেই বিয়ে হলো শেখ মুজিবের সঙ্গে যিনি একসময় হয়ে উঠলেন এই বাংলার ত্রাতা বঙ্গবন্ধু। সেই বঙ্গবন্ধুকে আমরা কম-বেশি জানি অথচ বেগম ফ‌জিলাতুন্নেছার সংগ্রামটা আড়ালেই রয়ে গেল। 

বেগম ফ‌জিলাতুন্নেছা ছিলেন উদার আর নির্লোভী মানুষ। শেখ রেহানা লিখেছেন, ‘গ্রামে জন্ম হওয়া একজন সাধারণ নারী আমার মা।  ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়েছেন মিশনারি স্কুলে। কিন্তু কী যে প্রজ্ঞা, কী যে তাঁর ধৈর্য। আমার মায়ের কাছে আমাদের যে জিনিসটা সবার আগে শেখা উচিত, তা হলো ধৈর্য আর সাহস। সবাইকে এক করে রাখা'। 

শেখ রেহানা লিখেছেন, এতগুলো লোক বাড়িতে খাচ্ছে, দাচ্ছে, আমাদের গ্রামে কোন মেয়ে ম্যাট্রিক পাস করেছে, তাকে এনে ঢাকায় কলেজে ভর্তি করে দাও, কাকে বিয়ে দিতে হবে! সব সামলাচ্ছেন। এর মধ্যে আমাদের সকালে কোরআন শরিফ পড়া শেখাতে মৌলভি সাহেব আসছেন, তারপর নাচ শিখছি, সেতার শিখছি, বেহালা শিখছি—সব কিন্তু মায়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু তাঁর নিজের বয়স কত! আমার তো মনে হয়, আমার মা কি কোনো দিন তাঁর শৈশবে কিংবা কৈশোরে একটা ফিতা বা রঙিন চুড়ি চেয়েছেন কারও কাছে! মা-ই তো সব থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অথচ তিনি হাসিমুখে সব সামলাচ্ছেন।’

স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব

বঙ্গবন্ধুেকে বঙ্গবন্ধু হ‌য়ে উঠতে প্র‌তি‌নিয়ত নেপথ্যে থেকে  লড়াই করেছেন বেগম ফ‌জিলাতু‌ন্নেছা। কোন‌দিন কোন অ‌ভিযোগ করেননি। বঙ্গবন্ধু দিনের পর দিন জেলে ছিলেন। এ সময় কাপড় সেলাই করে বাড়ি ভাড়া, সংসার চালানোর সবটাই তিনি করতেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনাসহ বঙ্গবন্ধুর পাঁচ সন্তানের তি‌নি শুধু জননী ছিলেন না, ছিলেন তাদের আশ্রয়। 

বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাকালে প্রতিটা আন্দোলনের সময়ও জেলখানায় সাক্ষাৎকার গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সব তথ্য জানাতেন। কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে  আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সে নির্দেশ জানাতেন। কারাগারে বঙ্গবন্ধুর মনোবল দৃঢ় রাখতেন। আবার নানা সময় তি‌নি বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছেন, ছাড় না দিতে বলেছেন। ৭ মার্চের ভাষণ কিংবা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সবসময় বেগম মুজিব বলেছেন, দেশের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুকে বারবার বলেছেন, তুমি দেশের জন্য কাজ করো, আমাদের কথা ভেবো না। 

বেগম ফজিলাতুন্নেসার নির্লোভ জীবনটাও বলার মতো। ৩২ নম্বরের বা‌ড়ি ছেড়ে প্রধানমন্ত্রীর সরকা‌রি বাসভবন গণভবনেও যেতে রা‌জি হন‌নি। বঙ্গবন্ধুর জীবনটা শুধু গড়তে নয় আমরা যে বঙ্গবন্ধুর এটা আত্মজীবনী পেয়েছি সেই লেখার পেছনেও মূল প্রেরণা ও উৎসাহ ছিল বেগম ফজিলাতুন্নেছার। বঙ্গবন্ধু সেই অবদানের কথা স্মরণ করেছেন আত্মজীবনীর প্রথমেই।

কথাগুলো আজ লিখছি, কারণ আজ এই মহীয়সী নারীর জন্মদিন। আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনাকে জান্নাতবাসী করবেন। নির্লাভ, সৎ আর ত্যাগের যে জীবন আপনি দেখিয়েছেন সেই জীবন হোক সবার অনুপ্রেরণা। শুভ জন্ম‌দিন বেগম ফ‌জিলাতুন্নেসা মু‌জিব।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা