তার জন্মদিনের দিনে খুব বেশি আফসোসের কথা বলতে ইচ্ছে করে না, এরপরেও আফসোস চাপিয়ে রাখতে পারি না। কবে আমরা গুণী মানুষদের আর তাদের কাজের মূল্য দিব? তাদের কাজগুলো ঠিকভাবে সংরক্ষণ করব?

"আমি যখন ছোট ছিলাম,  তখন একজন কৌতুক অভিনেতা ছিলেন- খান জয়নুল। ছবি দেখার আগে দেখতাম উনি অভিনয় করেছেন কি না! হুমায়ুন ফরিদীও সেভাবে দর্শক টানতে পেরেছিলেন। শুধু তাঁকে দেখার জন্যই দর্শকরা হলে যেত। আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি যারা ফরিদী মারা যাওয়ার পর আর হলমুখী হননি।

একা একা যখন সময় কাটাই, প্রায়ই ফরিদীর কথা মনে করে হাসি। এত ভালো কৌতুক বলতো, সব সময়ই মাতিয়ে রাখত। আমি সব সময় ভাবতাম একটা মানুষের এত কৌতুক মনে থাকে কীভাবে! একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, তখন ফরিদীর উত্তর ছিল, আরে জীবনটাই তো একটা কৌতুক। আমরা সবাই চলে যাব, এই কৌতুকগুলোই থাকবে।"

কথাগুলো বলেছিলেন পরিচালক কাজী হায়াত। আইএমডিবিতে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক অভিনেতা অভিনেত্রীর একটি প্রোফাইল থাকে, যেখানে তার সম্পর্কে তথ্য লেখা থাকে। আমাদের হুমায়ুন ফরিদীরও আছে। তবে অতি দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, এই প্রোফাইলে তার একটা সিঙ্গেল ছবি নাই। শুধু তার কিছু সিনেমার পোস্টার আছে। কিন্তু তাকে ঠিকমতো চেনার জন্য একটা ভাল কোয়ালিটির ছবি নাই।

মিঃ হাইজিন: জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি

দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৯ বছর চলে। ফরীদির প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা দহন রিলিজ হয়েছে ৩৫ বছর চলে। ফরীদি চলে গেছেন ৮ বছর চলে। এতদিনেও আমরা হুমায়ুন ফরীদির একটা ছবি আইএমডিবিতে দিতে পারলাম না। গুণী মানুষকে ন্যূনতম সম্মান না দেয়ার পরেও আমরা আবার আমাদের সিনেমার রাতারাতি পরিবর্তনের আশা করি। আমরা আশা করি পুরো বিশ্ব আমাদের সিনেমার দেখবে, হুমায়ুন ফরীদিকে চিনবে। আহা, মামাবাড়ির আবদার যেন! 

ইউটিউবে সম্ভবত ফরীদির মাত্র দুটো সিনেমা ইংরেজি সাবটাইটেলে পাওয়া যায়। একাত্তরের যীশু একটা, আরেকটা হচ্ছে জয়যাত্রা। এখন আমার আমেরিকাতে হলিউড সিনেমা দেখা কোনো বন্ধু যদি ফরীদির সিনেমা দেখতে চায় ইংরেজি সাবসহ আর আইএমডিবিতে তার প্রোফাইল ঘাঁটতে যায়, তখন আমি বা আমরা যে লজ্জার মুখে পড়ব, সেই দায়টা কার?

নাসিরুদ্দিন শাহ, নানা পাটেকর, পরেশ রাওাল বা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি সিনেমা দেখা আমার কোনো ভারতের ফ্রেন্ড যদি আমার কাছে হুমায়ুন ফরীদির সিনেমা ইংরেজি সাবসহ ব্লুরে প্রিন্টে দেখতে চায়, তখন আমি কই যাব? অথচ উল্টোটা আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে কিন্তু ঠিকই আমাকে তার দেশের সেরা অভিনেতাদের ইংরেজিসাবসহ সিনেমা, তাদের শখানেক ইন্টার্ভিউ- সব দেখাতে পারবে।

জন্মদিনের দিনে খুব বেশি আফসোসের কথা বলতে ইচ্ছে করে না, এরপরেও আফসোস চাপিয়ে রাখতে পারি না, চলে আসে সেটা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো! কবে আমরা গুণী মানুষদের আর তাদের কাজের মূল্য দিব? তাদের কাজগুলো ঠিকভাবে সংরক্ষণ করব?

জন্মদিনের শুভেচ্ছা প্রিয় হুমায়ুন ফরীদি। এ পৃথিবী একবার পায় যারে, পায় নাকো আর...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা