অবশ্যই মা হওয়া আমার সবচেয়ে বড় অহংকার, আমার মেয়ের জন্য আমি পৃথিবী উল্টিয়ে ফেলতে পারবো। কিন্তু মাতৃত্ব আমার পুরো পরিচয় না, আমার পরিচয়ের বড় একটা অংশ।

ফারহানা মুনা:

মানুষদের একটা খুব ন্যাচারাল টেন্ডেন্সি আছে- অন্য মানুষকে ছকে বাঁধা। সারফেস লেভেলের কয়েকটা জিনিস অবজার্ভ করে আমরা ধুপধাপ কনক্লুশনে পৌঁছাতে ভালোবাসি। পৌঁছানোর পরে যদি নতুন কোনো তথ্য বেরিয়ে আসে, যেটা আমাদের কনক্লুশন ভুল প্রমাণ করে, তখন ইগো ডেটে বসে।

যেমন, মেয়েদের ব্যাপারটা দেখি। মেয়ে সাজুগুজু করলে, ফ্যাশনেবল কাপড়-চোপড় পরলে- 'ফাস্ট' টাইপ, এইসব মেয়েদের দিয়ে সংসার করা যায় না। মুখ গোমড়া থাকলে- অহংকারী, মুডি। বেশি হাসলে- এই বেশরম মেয়ে এত 'ফ্রি' কেন? ক্যারেক্টার লুজ নাকি?

মেয়েদের আইডেন্টিটিও কিন্তু এমন ছকে বাঁধা। জীবনের এক একটা স্টেজে আমি শুধুমাত্র একটা ছকেই বাঁধা থাকবো, এর বেশিও না, কমও না। বাবার ঘরে যখন ছিলাম, তখন ওনার মেয়ে। পড়াশোনা, সমাজ মেনে চলা, বাধ্য কন্যা হয়ে থাকা- আমাকে ওই ছকেই থাকতে হবে।

বিয়ের পর আমার ক্যাটাগরি শিফট হলো একজনের স্ত্রী হিসেবে। রান্না-বান্না, স্বামীর সেবা-যত্ন, ঘর সংসার, বাজার-ঘাট তখন হলো আমার নতুন ছক।

তারপর হলাম মা। মা হওয়ার পর যেন আমার অস্তিত্বের বাকি সব লেয়ার মুছে গেলো। মাতৃত্বের বাইরে আমার যে কোনো চাওয়া পাওয়া, ভালো লাগা থাকতে পারে, সেটাই অসম্ভব ব্যাপার। এখন মা হয়ে গেছি, ফ্যাশন করব কেন? পোজ মেরে ছবি তুলব কেন? ক্যারিয়ারে এত সাফল্য চাইব কেন? বেশি টাকা কামাই করতে চাইব কেন? আগের শখগুলো নিয়ে এতো হা-হুতাশ করব কেন?

লেখিকা ও তাঁর মেয়ে

যেন মা হয়ে যাওয়ার পর আমি আর একজন মানুষ নই, মেশিন একটা। অবশ্যই মা হওয়া আমার সবচেয়ে বড় অহংকার, আমার মেয়ের জন্য আমি পৃথিবী উল্টিয়ে ফেলতে পারবো। কিন্তু মাতৃত্ব আমার পুরো পরিচয় না, আমার পরিচয়ের বড় একটা অংশ।

একজন মা হওয়ার সাথে সাথে আমি আমার নিজের মানুষও। আমার এখনও লিখতে ভালো লাগে, একা বই পড়তে ভালো লাগে, কফি শপে বসে মানুষ দেখতে ভালো লাগে, সাজুগুজু করে বান্ধবীর সাথে বের হতে ভালো লাগে, ক্যারিয়ারে এগোতে ভালো লাগে, এখনো ঘোরার অনেক নেশা। এইসব ভালো লাগাগুলো ত্যাগ না করার কারণে আমার মেয়ের বেড়ে ওঠার কোনো কমতি নেই, উল্টো লাভ বেশি।

হ্যাপি মাদার= হ্যাপি চাইল্ড। আমি যেমন আমার বাবুর খেয়াল রাখি, যেমন তার খাওয়া-দাওয়া, স্বাস্থ্য আর মেন্টাল হেলথ আমি যত্নে রাখি, ঠিক সেভাবে আমি নিজেরটাও রাখি। আমি নিজেই নিজের দায়িত্ব না নিলে, কে নেবে? আমরা সবার এত দেখাশোনা করি, আমাদের দেখার কয়জন আছে?

আমার অস্তিত্ব আমার, সমাজের খেলার জন্য কোনো পিংপং বল না।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা