লকডাউন, ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে হত্যা ও একটি অশনি সংকেত
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ফেনীতে যে লোকটা ফেসবুকে লাইভে এসে বউকে খুন করছে, সেটা আমাদের জন্য একটা সতর্কবার্তা।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর যুক্তরাজ্যে গত ২৩ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত "পারিবারিক সহিংসতা"য় খুন হয়েছে ১৬ জন। কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউন হবার পর এসব খুনের ঘটনা ঘটেছে, যা সাধারণত প্রতি বছরে ঘটা এ ধরণের সহিংসতার ঘটনার প্রায় দ্বিগুণ। এসব খুন যে শুধু বর্তমান সঙ্গীরাই করেছে তা না, কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাক্তনের হাতেও খুন হয়েছে কেউ কেউ। আবার তিনটি কেইসে বাবার হাতে খুন হয়েছে সন্তান।
ফেনীতে যে লোকটা ফেসবুকে লাইভে এসে বউকে খুন করছে, সেটা আমাদের জন্য একটা সতর্কবার্তা। আমি বহুবার লিখেছি, লকডাউন ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত টেনশন, অস্থিরতা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বিরাট হুমকি ডেকে আনছে। একইসাথে এই ধরণের পরিস্থিতির সুযোগও নিচ্ছে বহু সাইকোপ্যাথ। নেবেও ভবিষ্যতে। আর এর সবচেয়ে বড় শিকার হবে নারী।
আমাদের দেশে মেয়েরা অত্যাচারী স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সাথে মানিয়ে গুছিয়ে থাকাটাকেই সঠিক মনে করে। এক্ষেত্রে তারা নানাভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে চলে, এটাও বাস্তবতা। কিন্তু চলমান লকডাউনে যখন অত্যাচারী সর্বক্ষণ ঘরে আছে, নির্যাতকের সাথেই তাদের পাশাপাশি কাটাতে হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা, একটানা, দিনের পর দিন, তখন এই ধরণের স্বামী বা শ্বশুরকূলের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করা কঠিনতর হয়ে উঠছে নির্যাতিত নারীর পক্ষে। খোঁজ নিন, দেখবেন, যে মেয়েটি স্বামীর হাতে প্রায়শই মার খায়, সে এখন প্রতিদিনই চড় থাপ্পড় লাথি খেয়ে এরপর ঘুমুতে যাচ্ছে। সে মেয়েটি বিবাহিত ধর্ষণের শিকার হতো প্রায় রাতে, এখন হয়তো তাকে আরো বহুবার ধর্ষিত হতে হচ্ছে স্বামীর দ্বারা। একইভাবে বহু শিশুও নানারকম যৌনবিকৃতির শিকার হচ্ছে ঘরের ভেতরে, আমি নিশ্চিত।
লকডাউনে আমরা নিজের জীবন নিয়ে ভাবছি, মৃত্যু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি। এরপর আমাদের ভাবনায় আসছে নিজের ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা। কী হবে সামনের দিনগুলোতে। কিন্তু পারিবারিক সহিংসতা, যৌন নির্যাতন, শিশু নিপীড়ন নিয়ে কোন চিন্তা এখনো আমাদের মাথায় খেলেনি। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এখনো আমরা উদাস। অথচ এটাকে এড়ালে সামনে আরো আরো বীভৎস ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হবে আশংকা করি।
তাই সতর্ক থাকুন। সাবধান থাকুন।
দিনের পর দিন অত্যাচারিত হলে মাথা পেতে নেবেন না। দ্রুত কাউকে অবহিত করুন। দরকারে পুলিশের কাছে যান। ৯৯৯ এ ফোন করুন। মানবাধিকার সংস্থাকে জানান। আপনার বাড়ির পাশে কোন প্রতিবেশিনী অথবা কোন আত্মীয়-বন্ধু-সহকর্মী নারীকে বা কোন শিশুকে নির্যাতিত হলে দেখলে বা শুনলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। কে কী ভাববে তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
লকডাউন মানসিক বিপর্যয় আনবে। পাশাপাশি এ পরিস্থিতি কোন কোন মানুষরূপী শয়তানের নোংরা কদর্য আত্মাটাকেও টেনে বের করে আনবে। তাই সাবধান। মাথায় রাখুন, মনে রাখুন এই বিষয়টিকে।