ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা বিতর্ক থেকে হালের বিজেপি বিতর্ক... ফেসবুক জন্ম দিচ্ছে একের পর এক বিতর্কের। এবার তাই সরব হচ্ছেন সেলিব্রেটিরা, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বন্ধ করতেও আহ্বান জানানো হচ্ছে ফেসবুককে!
টেক জায়ান্ট ফেসবুক শুরু থেকে এ পর্যন্ত নানারকম বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের বিতর্কগুলো যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে সবকিছুকেই। এটা ঠিক, ভদ্রলোকেরা এখন আর ফেসবুক খুব একটা ব্যবহার করেন না। পুরো মডেলটাই চলে যাচ্ছে কিছু নিম্নরুচির মানুষের দখলে। মিথ্যে কথা, ভুলভাল প্রচারণা, গুজব ছড়ানো ও গালিগালাজের এক মহামঞ্চ হয়ে উঠেছে এই সামাজিক মাধ্যম। তবু ফেসবুকের গুরুত্ব খুব একটা কমেনি মোটেও। সময় যত যাচ্ছে, তাদের গুরুত্বও বাড়ছে। কিন্তু সে সাথে পাল্লা দিয়ে ফেসবুকের কর্তাব্যক্তিদের কাজের মধ্যে আমরা খুব একটা দায়িত্ববোধ, স্বচ্ছতা দেখতে পাচ্ছি না এখনও।
কয়দিন পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচন সামনে রেখেও ফেসবুকে চলছে তীব্র মাত্রার মিথ্যা খবরের ছড়াছড়ি। যদিও ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ দাবী করছেন, তারা সজাগ আছেন, সতর্ক আছেন। কিন্তু তাদের সতর্কতার আশ্বাস আসলে কতটুকু ভরসা করার মতন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে তাদের কাজকর্ম যে বেশ সুবিধের না, সেটা অনেকেই জানেন।
ফেসবুক জানিয়েছিলো, যদি কেউ ফেসবুকে 'হেইট স্পীচ' ছড়ায়, তাহলে সেটা তারা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখবে, হয়তো এরকম ব্যবহারকারীদের ব্যানও করা হবে। অথচ ভারতের বিজেপি দলীয় অনেক নেতার সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া ঘৃণা-মন্তব্য নিয়ে ফেসবুকের হেলদোল দেখিনি আমরা। একাধিক বিজেপি নেতা উস্কানিমূলক মন্তব্য করলেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাঁদের অ্যাকাউন্ট ব্লক করেননি। করবেনও বা কেন? ২০১৯ সাল থেকে বিজেপিই ভারতের একমাত্র দল যারা ফেসবুক বিজ্ঞাপনে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ফেসবুক বিজ্ঞাপনে বিজেপি ব্যয় করেছে ৪.৬১ কোটি টাকা! এরকম শাঁসালো ডোনারদের দুয়েকটা ভুল যে ফেসবুক ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে, সে তো একরকম জানাই ছিলো।
তবে ফেসবুকের এরকম সুযোগসন্ধানী কাজকর্ম ভালো লাগেনি অনেকেরই। #StopHateforProfit আন্দোলন শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। যে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে কিম কার্দাশিয়ান ওয়েস্ট, লিওনার্ডো ডি ক্যাপ্রিও, জেনিফার লরেন্স, কেটি পেরি সহ অনেকেই। তাদের একটাই দাবী, সোশ্যাল মিডিয়া একটু নিরাপদ হোক, শান্তির হোক। টাকার বিনিময়ে ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ হোক। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করেওছিলেন, চব্বিশ ঘন্টার জন্যে।
যেহেতু সামনে আমেরিকার নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচুর মিথ্যে গুজব ছড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাই কোথাও একটু রাশ টানা খুব বেশি দরকার। এবং এই রাশ টানার ক্ষেত্রে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনায় ফেসবুকের ভূমিকাই প্রধান, কারণ ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এর মত বড় প্ল্যাটফর্মও ফেসবুকের অংশ। গত বছরই ফেসবুক তাদের বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেছিল প্রায় সাত হাজার কোটি ডলার! সবমিলিয়ে তাই দায়টা ফেসবুকেরই বেশি।
ফেসবুক যদিও দাবী করছে, জুন থেকেই তারা খুব কড়া মনিটরিং করছে সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে। কিন্তু তাদের কথা ও কাজের খুব একটা সামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে না। এ কারণেই বিক্ষুদ্ধ হয়েছেন সেলিব্রেটি সহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। আমেরিকার গত নির্বাচনের সময় গ্রাহকদের ব্যক্তিগত ডাটা তাদের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করে ফেসবুক যে বিতর্কের মুখে পড়েছিলো, সে বিতর্কের রেশ যে এখনো কাটেনি, তা বোঝাই যাচ্ছে।
ফেসবুকের সামনের সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার মহাগুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের সময়ে ফেসবুকের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব, অপপ্রচার ও মিথ্যাচারকেও। যেহেতু বড় মঞ্চ তারা, সেই মঞ্চের ক্লেদ অপসারণের দায়িত্বও তাদের। সেটা কতটুকু তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, সেটা সময়ের হাতেই ন্যস্ত। তবে ফেসবুক ব্যবহারকারী, সেলেব্রেটি সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষ যে এবার আদাজল খেয়ে নেমেছে, সচেতন হচ্ছেন, সেটাই স্বস্তির।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন