নেটফ্লিক্সের পেইজে গালি দেয়ার আগে একবার আয়নায় তাকান!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
হলিউডিরা ঢাকায় এসে ঢাকার মান রক্ষা করতে পারেনি বলে আমরা আজকে যুদ্ধ শুরু করেছি। এরকম নিম্নমানের একটা সিনেমা নিয়ে আমরা তোলপাড় করছি। অথচ একবার ভাবুন তো নিজেদের মান রক্ষার্থে আমরা কী করেছি?
নজরুল সৈয়দ: ১. ২০০৯ সালে সারাবিশ্বে মুক্তি পায় হলিউডের চলচ্চিত্র ‘ক্রসিং ওভার’। হ্যারিসন ফোর্ড, অ্যাশলে জুড, র্য লিওটা প্রমুখ তারকা অভিনেতারা ছিলেন সে সিনেমায়। পরিচালক ওয়াইন ক্র্যামার। অবৈধ অভিবাসন নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছিল এক বাংলাদেশী পরিবারকে। গোটা দশেক বাংলা সংলাপও ছিলো ছবিটায়। পরিচালক বা চিত্রনাট্যকার চাইলেই এড়িয়ে যেতে পারতেন বাংলা সংলাপগুলো। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একটি বাঙালি পরিবার ঘরোয়া পরিবেশেও ইংরেজিতেই কথা বলছে দেখালে খুব ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না কিছু। খোদ ঢাকা শহরেই অনেক পরিবার আছে, যেখানে বাংলা ভাষায় কথা বলা রীতিমতো অন্যায়। কিন্তু তবু পরিচালক ‘ক্রসিং ওভার’ চলচ্চিত্রে গোটা দশেক বাংলা সংলাপ রাখেন। পরিবারের মায়ের কণ্ঠে যত্ন করে তুলে দেন বাংলা সংলাপগুলো।
১১ বছর আগে যখন সিনেমাটা দেখেছিলাম, মুগ্ধ হয়েছিলাম এই আন্তরিকতাটুকুতে। ৫ সদস্যের পরিবারের বাকি আর কাউকেই বাংলায় সংলাপ বলতে হয়নি, কারণ সেগুলো বেশিরভাগই বলতে হয়েছিলো মার্কিন সহঅভিনেতাদের সঙ্গে। সে চরিত্রগুলোতে অভিনয়ও করেছিলেন অন্যান্য দেশের অভিনেতারা। শুধু মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নেওয়া হয়েছিলো একেবারে খাঁটি বাংলাদেশী একজন অভিনেতাকে। তিনি নায়লা আজাদ নূপুর। এখনকার দর্শকের কাছে নায়লা আজাদ নূপুর নামটি হয়তো তেমন পরিচিত না, কিন্তু আশি নব্বই দশকে বাংলাদেশের মঞ্চ এবং টেলিভিশনে নায়লা আজাদ নূপুর ছিলেন হৃদকম্প জাগানিয়া অভিনেত্রী।
তখনই নূপুর আপার সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম সিনেমাটা নিয়ে। জিজ্ঞেস করেছিলাম এই চলচ্চিত্রে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা। বিস্তারিত বলার প্রয়োজন নেই, শুধু বলি... আইএমডিবি চেক করুন, দেখবেন দুনিয়ার তাবৎ বড় বড় তারকা অভিনেতারই এজেন্ট আছে, যোগাযোগের লাইনঘাট আছে। বাংলাদেশের অনেক ভালো এবং বিখ্যাত অভিনেতা আছেন, কিন্তু কজনের এজেন্ট আছে? আন্তর্জাতিক একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কার সঙ্গে যোগাযোগ করবে? বা কার মাধ্যমে যোগাযোগ করবে? কীভাবে করবে?
২. গত শতাব্দীর একেবারে শেষদিকের ঘটনা, সম্ভবত ১৯৯৯ সাল। বাংলাদেশ এবং ভারতে তখন এমটিভির তুমুল রমরমা। আমরা ‘ক্যাসেট’ ছেড়ে ‘অ্যালবাম’, ‘উপস্থাপক’ ছেড়ে ‘ভিজে’, ‘ডিজে’ ইত্যাদি শব্দ শিখছি। সাইরাস, মালাইকা, শেহনাজ, অমৃতা, কিম, নাফিসা, গৌরভ, নিখিলদের ‘ফ্যান’ হচ্ছি। এদিকে বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতেরও তখন দারুণ সমৃদ্ধির কাল। জেমস ক্রমশ গুরু হয়ে উঠছেন, এলআরবিকে নিয়ে আইয়ুব বাচ্চু কিছুদিন আগেই মাতিয়ে এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মাইলস তো বাংলাদেশে যতটা, ভারতে তারচেয়ে কোনো অংশেই কম জনপ্রিয় নয়। আর্কও তখন দুর্দান্ত দাপটে, মাকসুদ ভাই শুরু করছেন নতুন অধ্যায়...
সব মিলিয়ে এক দারুণ সময়। কিন্তু আপাদমস্তক মিউজিক চ্যানেল হওয়ার পরেও এবং বাংলাদেশে কোটি কোটি দর্শক থাকার পরেও এমটিভিতে তখন বাংলাদেশের গান প্রচার হতো না। উদ্যমী তরুণ রাবেথ খান অনেক জোগারযন্ত্র করে এমটিভি-ইন্ডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সে সময়। সপ্তাহে একদিন আধাঘন্টার একটা চাঙ্কও বরাদ্দ হয়েছিলো এমটিভিতে। প্রথম সপ্তাহে ৪টা গানও প্রচার হলো। ইস্টার্ন প্লাজায় অফিস নেওয়া হলো। মোটামুটি সবকিছুই চূড়ান্ত হবার পালা। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র তৈরি করতে এমটিভি-ইন্ডিয়ার কয়েকজন কর্তাব্যাক্তি এলেন ঢাকায়। ‘কাদের সঙ্গে মিটিং হবে?’ ‘বাংলাদেশে মিউজিক কোম্পানি কারা আছেন?’ কেউ নেই!
কিছুদিন আগেই ওয়াহিদ ইবনে রেজা প্রথম আলোতে লিখেছেন এক্সট্রাকশন সিনেমায় কেন বাংলা গান ব্যাবহার করা যায়নি, যার একটা অন্যতম কারণ ‘বাংলা গানের কোনো আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড বা অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাঁরা খুঁজে পাননি, যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গানের স্বত্ব নেওয়া যায়। তাই তাঁরা ভারতের টি-সিরিজের সঙ্গে যোগাযোগ করে গান নেন।’
২১ বছর আগেও ব্যাপারটা ঠিক এমনটিই হয়েছিল। এমটিভি ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ পর্যন্ত এসেছিল। শেষ পর্যন্ত অনেক কসরত করে তাঁদেরকে সাউন্ডটেক, সঙ্গীতা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসানোও হয়েছিল। কিন্তু ক্যাসেট ব্যবসায়ী আর অডিও প্রযোজনা সংস্থার পার্থক্য বুঝতে এমটিভিওয়ালাদের বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। এমটিভি আর বাংলাদেশের গান প্রচার করেনি। চাট্টিবাট্টি গোল।
আমাদের দেশে অনেক ভালো শিল্পী আছেন, কিন্তু সেই শিল্পীদের প্রমোট করার জন্য কোনো এজেন্সি নেই, কোনো অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নেই। আমরা খুব বেশি বাংলাদেশকেন্দ্রীক। আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য আমরা নিজেদের প্রস্তুত করি না।
ব্যাপারটা শুধু চলচ্চিত্র আর সঙ্গীতে না, প্রায় সব ক্ষেত্রেই। আমরা সাহিত্য করি শুধুই একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে। আমাদের কোনো পাবলিশার নেই যে আমাদের সাহিত্যকে তুলে ধরবে বিশ্বের দরবারে। কলকাতার অমিতাভ ঘোষরা যেখানে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিশ্বদখলের!
আমাদের সবচেয়ে গর্বের যে মুক্তিযুদ্ধ, তা নিয়ে বাংলা ভাষায় হাজার হাজার বই লেখা হয়েছে। প্রচুর ‘হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা’ হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে তুলে ধরার মতো একটা ঠিকঠাক বই কি আমরা আজ পর্যন্ত লিখতে পেরেছি? যাতে মুক্তিযুদ্ধের ডকুমেন্টেশন আছে? যা নিয়ে আমরা অক্সফোর্ড হার্ভার্ডে সেমিনার করে চিৎকার করে বলতে পারি ‘এই দেখেন আমাদের পূর্বপুরুষদের উপর কী ভয়ঙ্কর জেনোসাইড চালানো হয়েছে, আমরা এর বিচার চাই’। পারবো? পারবো না। যে কারণে আমাদের ত্রিশ লক্ষ স্বজনের মৃত্যুর পরও, জাতিগতভাবে শোষিত হবার পরও আমাদের ভাগ্যে জেনোসাইডের স্বীকৃতিই জোটে না, বিচার তো দূরের কথা।
এভাবেই প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই পিছিয়ে থাকি। আর যখনই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ‘বাংলা’ বা ‘বাংলাদেশ’ সংক্রান্ত কিছু করতে চায়, প্রথমেই আমরা গর্বে বগল বাজাই, তারপর ‘এইটা এমন হলো কেন, ঐটা ওমন হলো কেন’ ইত্যাদি নিয়ে গালির তুবড়ি ছোটাই। আর সঙ্গে যোগ করে নেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। আমরা ধরেই নেই সারাবিশ্ব বসেই রয়েছে শুধু বাংলাদেশকে ছোট করতে, বাংলাদেশকে অপমান করতে, বাংলা সংষ্কৃতি ধ্বংস করতে আর বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত করতে। কিন্তু আমরা নিজেরা কিচ্ছুটি করতে রাজী না।
৩. ‘থর’ তারকা ক্রিস হেমসওয়র্থ এর একটি ফেসবুক পোস্টের সূত্রে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোয় তোলপার শুরু হলো। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার’ এর পরিচালক রুশো ভাইদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এজিবিও এবং নেটফ্লিক্সের যৌথ প্রযোজনায় ‘ঢাকা’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। ছবিটি পরিচালনা করছেন স্যাম হারগ্রেইভ। ক্রিসের পোস্ট থেকেই এই সিনেমার কিছু স্থিরচিত্রও পাওয়া গেলো। কিন্তু নাম ‘ঢাকা’ হলেও ঢাকায় এর কোনো শুটিং হচ্ছে না, শুটিং হচ্ছে আহমেদাবাদে। তখন আবার প্রশ্ন উঠলো এই ঢাকা কোন ঢাকা? জানা গেলো ভারতের বিহারেও ঢাকা নামে একটা জায়গা আছে। আমরা ভীষণ উৎসাহ আবেগ ইত্যাদি নিয়ে অপেক্ষায় থাকি সিনেমাটি দেখার।
অবশেষে ‘এক্সট্রাকশন’ নাম নিয়ে ছবিটি নেটফ্লিক্সে দর্শকের জন্য উন্মুক্ত হয় ২০২০ সালের ২৪ এপ্রিল তারিখে। বাংলাদেশের দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়েন ঢাকার প্রেক্ষাপটে তৈরি সিনেমাটি দেখতে। এবং তারপর যথারীতি শুরু হয় গালিগালাজ।
• বাংলা ভাষাকে বিকৃত করা হয়েছে। ভারতীয় অভিনেতারা ঠিকমতো বাংলা বলতে পারেনি, তাদের উচিত ছিলো আরো বেশি বাংলা চর্চা করার।
• ঢাকার চিত্রায়ণ ভালো হয়নি। এ কোন ঢাকা? ঢাকার পাশে ঐ বনভূমি কোত্থেকে এলো? তেজগাঁও, পুরান ঢাকা, গুলশান, বনানী বিতর্ক...
• বাংলাদেশের পুলিশ, এলিট ফোর্স, সেনাবাহিনীর ইমেজ ধ্বংস করে দিয়েছে। একজন মাত্র ব্যক্তি পুরো বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিলো? ফাজলামি নাকি? তাছাড়া ঐ যে কর্নেলকে দেখানো হলো ড্রাগলর্ডের কথায় উঠতে বসতে, এরকমও হয় নাকি?
• বাংলাদেশের লোকে হিন্দি গান শোনে, এটা অস্বীকার করা না গেলেও ২০২০ সালে এসে আঁখিয়োসে গোলি মারে টাইপের নব্বই দশকীয় হিন্দি গান শোনে? আমাদেরকে ‘এতোটা’ ক্ষ্যাত ভেবেছে?
• এছাড়া বাজে চিত্রনাট্য, বাজে পরিচালনা, বাজে কাস্টিং, বাজে সেট, বাজে কস্টিউম ইত্যাদির সমালোচনা তো ছিলোই।
• নেটফ্লিক্স আসলে এই সিনেমা বানিয়েছে বাংলাদেশের কোটি দর্শক টানতে, আবার আমাদের দেশকে অপমানও করেছে।
‘বাংলাদেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে’, ‘বাঙালিকে চূড়ান্ত অপমান করা হয়েছে’, ‘ঢাকার অপমানজনক পিকচারাইজেশন হয়েছে’ ইত্যাদি অভিযোগে আমরা ঐ রাত থেকেই বিপ্লব সংগঠনে নেমে গেলাম। ফেসবুকের সিনেগ্রুপগুলোতে প্রচার চালিয়ে এক্সট্রাকশনের আইএমডিবি আর রটেন টমাটোর রেটিংয়ে ধ্বস নামালাম।
কিন্তু আমরা আসলে কী আশা করেছিলাম? এই সিনেমা হবে ‘অপরূপ ঢাকা’র ডকুমেন্টরি? নেটফ্লিক্স কোটি কোটি টাকা খরচ করে ক্রিস হেমসওয়র্থকে এনে বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংস্কৃতির নাচগান তুলে ধরবে?
৪. সত্যি বলতে এ ধরনের অ্যাকশন মুভি আমার সাধারণত দেখা হয় না। অন্য কোনো কারণ নেই, আমার আসলে অতোটা মারামারি কাটাকাটি দেখতে ভালো লাগে না। ভালো লাগে না অতো ঝা চকচকে মুভি দেখতে। তাই এতো যে বিখ্যাত, পৃথিবীর নারীকুলের ক্র্যাশ ক্রিস হেমসওয়র্থ, তার কোনো সিনেমাই আমি আগে দেখিনি, অ্যাভেঞ্জার্সও না। অথচ কী আশ্চর্য, অনেক কম বিখ্যাত ইরানী অভিনেত্রী গোলসিফতেহ ফারহানির ‘দ্য প্যাশেন্স স্টোন’ দেখেছি সেই কবেই!
এমনকি নেটফ্লিক্সেরও আমি নিয়মিত দর্শক না। তবু ২৪ তারিখেই আমি দেখে ফেলি ‘এক্সট্রাকশন’। যেহেতু এ ধরনের সিনেমা আমার ঠিক পছন্দের না, তাই কোনোরকম প্রত্যাশা ছাড়াই দেখেছি। এ ধরনের সিনেমাগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভবত একটি সেট ফর্ম্যাট থাকে। এক্সট্রাকশনও সেই ফর্ম্যাটেই বানানো। তাই অসঙ্গতিগুলোও খুব অবাক করেনি।
চিত্রনাট্য ছিল নিম্নমানের চেয়েও খারাপ। কাহিনী যেখানে দুই শহরের দুই ড্রাগলর্ডকে নিয়ে, সেখানে দুজনেরই পর্দায় ফার্স্ট এন্ট্রি খুবই দুর্বল! কোনো চরিত্র এবং ঘটনাই বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারেনি দর্শকের কাছে। পরিচালক যে আগে কোনোদিন সিনেমা পরিচালনা করেননি, তা সিনেমাটা দেখলেই বোঝা যায়, গবেষনার দরকার হয় না। কাস্টিং মোটামুটি। টাইলর র্যাক চরিত্রে ক্রিস হেমসওয়র্থ, নিক খানের চরিত্রে গলসিফতেহ ফারহানি, অভি মহাজন (জুনিয়র) চরিত্রে রুদ্রাক্ষ জয়সল, সাজু চরিত্রে রণদীপ হুদা, অভি মহাজন (সিনিয়র) চরিত্রে পঙ্কজ ত্রিপাঠির কাস্টিং ভালো হলেও মূল ভিলেন আমির আসিফ চরিত্রে প্রিয়াংশু পাইনুলি একাই গোটা সিনেমাকে একেবারে লেপ্টে দিয়েছেন।
আহমেদাবাদের একটা জায়গাকে ঢাকা বানাতে আর্ট ডিরেক্টরদের চেষ্টা প্রশংসনীয় ছিল। হয়তো পুরোপুরি হয়নি, কিন্তু একেবারে মন্দ লাগেনি। কস্টিউমও মন্দ হয়নি। ক্যামেরার কিছু কাজ বেশ ভালো লেগেছে। ভিজ্যুয়াল এবং স্পেশাল ইফেক্টস অনেক ক্ষেত্রেই খুব দুর্বল। এডিটিং, মিউজিক, মেকআপ ইত্যাদি ভালো ছিলো। যদিও অতি পুরাতন তিনটি হিন্দি গান ব্যাবহার নিয়ে প্রচুর কথা উঠেছে। ইস্যুটা সম্ভবত সেই কপিরাইটেই। হাল আমলের জনপ্রিয় হিন্দি গান কিনতে অর্থ ব্যয় হতো বেশি।
ঢাকার ভুল চিত্রায়ন নিয়েও আসলে খুব বেশি অভিযোগ করার কিছু নেই। এটা কোনো ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র না। ‘যে কোনো একটা শহর’ মাত্র। ঢাকা নামে ব্যবহৃত হলেও পরিচালকের এটুকু স্বাধীনতা থাকা উচিত মনে করি। আর হুবহু কপি পেস্ট করার মধ্যে কোনো আর্ট নাই আসলে।
এই যে একটা দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ড্রাগ লর্ডের ক্রীড়নক বানিয়ে ফেলা হলো, এটা কি ঠিক হলো আসলে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা রিস্কি। শুধু বলে যাই, নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের মামলা গত পরশু সপ্তম বছরে পড়লো, এখনো বিচার হয়নি। আর কিছু না বলি।
৫. এক্সট্রাকশন চলচ্চিত্রের কাহিনী নেওয়া হয়েছে রুশো ভাইদের কমিক বই ‘সিউদাদ’ থেকে। মূল বইয়ে ইভা রোচ নামের এক বালিকা অপহরণের গল্প আছে। এক ড্রাগ লর্ডের কন্যাকে অপহরণ করে আরেক শহরের ড্রাগ লর্ড। তবে মূল বইয়ের গল্পটা ছিলো দক্ষিণ আমেরিকার, ব্রাজিলের। চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় তাহলে ঢাকা হয়ে গেলো কেন? ব্রাজিল ইতালি এসব দেশকে ড্রাগ, সন্ত্রাস ইত্যাদির সিনেমায় এতো বেশি দেখানো হয়েছে যে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চাইছিলো নতুন কোনো শহর দেখাতে। একই সঙ্গে নেটফ্লিক্সের যেহেতু ভারত এবং বাংলাদেশের শতকোটি দর্শকের ব্যাপারে আগ্রহ আছে, তাই এক্সট্রাকশনের গল্প চলে এলো ঢাকায়। সম্ভবত চিরদ্বান্দ্বিক ভারত-পাকিস্তান চক্র থেকেও তারা বের হতে চেয়েছিলো। তাই ভারত-বাংলাদেশ, তথা মুম্বাই-ঢাকা। ব্যাপারটা অযৌক্তিক বা অবাস্তব না মোটেই। এর পেছনে আজাইরা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খোঁজাটা কষ্টকর।
অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দর্শক আকৃষ্ট করার জন্য নেটফ্লিক্স এই ছবি বানিয়েছে ঢাকার পটভূমিতে। এটা একটু হাস্যকর। ঢাকার উপর সিনেমা না বানিয়েও যে ঢাকায় নেটফ্লিক্সের দর্শকের অভাব নেই তা তারা সম্ভবত জানে। আর অ্যাভেঞ্জার্সের টিকিট কেনার জন্য যে সারারাত লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে ঢাকার লোকজন, তাও তাদের অজানা থাকার কথা না। ঢাকার দর্শক টানার জন্য যে এতো কষ্ট করতে হয় না, সেটা তারা সম্ভবত ভালো করেই জানে। অন্তত ইন্ডিয়ানরা তো ‘হাড়ে হাড়ে’ জানে!
এই যে ব্রাজিল ইতালির পটভূমিতে এরকম চলচ্চিত্র হরহামেশা হচ্ছে, তারা কি সেজন্য বিপ্লব করে? হলিউড আর নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে? আমার জানা নেই, তবে সম্ভবত করে না। তারা সিনেমাকে সিনেমা হিসেবেই দেখে সম্ভবত। মুম্বাই নিয়েই তো একের পর এক এরকম সিনেমা আর সিরিয়াল হচ্ছে! স্লামডগ মিলেনিয়াম বা লায়নে যে ভারত দেখানো হয়েছে, আর সালমান খানের সিনেমায় যে ভারত দেখানো হয়... কোনটা আসলে ভারত?
ক্রিস হেমসওয়র্থ একাই বাংলাদেশের পুরো প্রতিরক্ষা বুহ্য ভেঙ্গে দিয়েছেন দেখে অনেকেই গোস্বা হয়েছেন। তাঁরা কি আমার চেয়েও কম অ্যাকশন মুভি দেখেন কি না জানি না। আমার তো ধারণা ছিলো এরকম সিনেমায় কাহিনীর প্রয়োজনে এরকমই ঘটানো হয়। যেহেতু আমার এধরণের সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা কম এবং এক্সট্রাকশনের বিপরীতে দাঁড় করানোর মতো বাংলা সিনেমার সন্ধান আমার জানা নাই, তাই বরঞ্চ একটা উপন্যাসের কথা বলি। এই সিনেমা দেখতে বসেই অনেক অনেক বছর আগে পড়া মাসুদ রানার ‘অগ্নিপুরুষ’ এর কথা মনে পরে গিয়েছিলো।
পৃথিবী বিখ্যাত উপন্যাস ‘ম্যান ইন ফায়ার’ অবলম্বনে মাসুদ রানার একটি কাহিনী লেখার জন্য সম্ভবত প্রথম দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো হুমায়ুন আহমেদকে। তখনো হুমায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের পীর হয়ে ওঠেন নাই, এটা আশির দশকের কথা। হুমায়ুন আহমেদ বইটা লিখেওছিলেন, কিন্তু তা সম্ভবত কাজীদার মনপুত হয়নি। ফলে শেখ আবদুল হাকিমকে দিয়ে আবার লেখানো হয়, আর মাসুদ রানা হিসেবে প্রকাশ করা হয় ‘অগ্নিপুরুষ’ নামে। প্রায় একই কাহিনীর (যেহেতু একই বইয়ের ভাবানুবাদ) হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসটি ‘অমানুষ’ নামে ছাপানো হয় রহস্য পত্রিকায়। পরে বই আকারেও প্রকাশিত হয়।
যাহোক, মাসুদ রানা সিরিজের অন্যতম সেরা বই ধরা হয় ‘অগ্নিপুরুষ’কে। এক্সট্রাকশনের মতো সেটাও ড্রাগ লর্ডের কাহিনী, সেখানেও আছে সন্তান অপহরণের গল্প। ইতালির রোম শহরের ভিটো-লরা আভান্তি দম্পতির সন্তান লুবনা আভান্তির বডিগার্ড হিসেবে নিয়োগ পায় সিআইয়ের ডরে ইমরুল হাসান ছদ্মবেশে পালিয়ে থাকা মাসুদ রানা। যে মাসুদ রানা কয়দিন আগে খোদ রাশিয়া থেকে মিগ ৩১ এয়ারকিং চুরি করে সিআইএকে টেক্কা দিয়ে সব দেশের রাডার ফাঁকি দিয়ে ঢাকায় উড়িয়ে নিয়ে আসতে পেরেছে, সেই মাসুদ রানাকে প্রায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে সামান্য তিনজন দুষ্কৃতকারী অপহরণ করে নিয়ে যায় লুবনা আভান্তিকে। তারপর সেই ১৩ বছর বয়সী বাচ্চা মেয়েটাকে ধর্ষন করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরে মাসুদ রানা এরপর নামে প্রতিশোধের খেলায়। চোখের পলকে জোগার করে ফেলে ‘বিনো গারবাল্ডি’ নামক ফরাসী ব্যাক্তি হিসেবে ছদ্মবেশের যাবতীয় কাগজপত্র, পাসপোর্ট, লাইসেন্স ইত্যাদি। যে পরিমাণ অস্ত্র জোগার করে তার লিস্ট দেখলে যে কোনো সেনাবাহিনীই ভিড়মি খাবে।
সেই বিপুল পরিমান অস্ত্র নিয়ে ইতালির আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে একাই হত্যা করতে থাকে একের পর এক মাফিয়া সর্দারকে। ইতালির রাস্তায় কাঁধে রকেট লঞ্চার নিয়ে হাঁটে, একের পর এক খুন করে, কিন্তু কেউ তাকে ধরতে পারে না। যে ইতালিয়ান মাফিয়াদেরকে একটা দেশের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী মনে করা হয়, সেই মাফিয়ারা একলা একজন মাসুদ রানাকে কোনোভাবেই কব্জা করতে পারে না।
মাফিয়াবধের কৃতিত্বে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাসুদ রানার নামে লাখ লাখ ডলার চাঁদা ওঠে, গীর্জায় গীর্জায় স্পেশাল প্রার্থণার আয়োজন করা হয়। ইতালির রাস্তার মোড়ে মোড়ে ‘বাঙালি বীর, লহ সালাম!’ লেখা তোরণ নির্মিত হয়। ইতালির মহল্লায় মহল্লায় গড়ে ওঠে ‘মাসুদ রানা ফ্যানস ক্লাব’। সেই ফ্যানস ক্লাবগুলো চাঁদা তুলে ইতালির সবগুলা জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতার উপরের অর্ধেক কিনে রাখে দিনের পর দিন, সেখানে কোনো লেখা ছাপতে দেয় না। সেই ফাঁকা স্পেসে লেখা ছাপা হয় ‘এই ফাঁকা জায়গা শুধু মাসুদ রানা ব্যবহার করতে পারবেন। তাঁর কিছু বলার থাকলে সংবাদপত্র অফিসে লিখে পাঠালে বা ফোন করলেই হবে।’
গুজব ছড়ায় মাসুদ রানা আহত হয়েছে, শুনে ইতালির জনগন সবগুলা হাসপাতালে ভীড় জমায় রক্ত দিতে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে, কাঁদানো গ্যাস ছুঁড়েও সামলাতে পারে না। তরুণ তরুণীরা রাস্তায় নামে ‘এগিয়ে যাও রানা’ লেখা টিশার্ট পরে, একই বক্তব্যের স্টিকার সব গাড়িতে!
ওদিকে রানা মিসাইল ব্যাবহার করে মাফিয়া মারছে, রকেট লঞ্চার দিয়ে মাফিয়া মারছে। পুরো মাফিয়া সেটআপ গুড়িয়ে দিয়ে অবশেষে রানা হাজির হয় মাফিয়া লর্ড ডন বাকালার দুর্গের চেয়েও শক্তিশালী বাগানবাড়িতে। মাসুদ রানার ডরে ইতোমধ্যে যেখানে মোতায়েন করা হয়েছে আমেরিকা থেকে হায়ার করে আনা স্পেশাল কমান্ডো ফোর্স, সঙ্গে মাফিয়া সর্দারের নিজস্ব বাহিনী তো আছেই। এক্সট্রাকশনে টাইলরের সহযোগিতায় অন্তত ঢাকার বাইরে হলেও নিক খানের নেতৃত্বে একটা বড় শক্তিশালী টিম ছিলো। যারা শেষ দৃশ্যে রকেট লঞ্চার, হেলিকপ্টার ইত্যাদি নিয়ে ছুটে আসে। কিন্তু রানার সঙ্গে কেউ নাই। সম্পূর্ণ একা সে যুদ্ধ করতে থাকে ইতালির আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং ভয়ঙ্কর শক্তিশালী মাফিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে।
রানা একে একে সব্বাইকে খতম করে ডন বাকালাকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়। অবশ্য রানাও আহত হয়। এবং সে চিকিৎসা ইতালিয়ান চিকিৎসক দিয়ে হচ্ছিলো না, রাহাত খান বাংলাদেশ থেকে তিনজন চিকিৎসক নিয়ে ইতালি হাজির হন! যদিও শেষ রক্ষা হয় না, মৃত্যু হয় মাসুদ রানার।
রানার কবর দেওয়া হয় লুবনা আভান্তির কবরের পাশে। সেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় হাজির ছিলো কে কে জানেন? ইতালি তো ইতালি, ফ্রান্স সেনাবাহিনীর জেনারেলও ইউনিফর্ম পরে হাজির হয়ে সামরিক স্যালুট দিয়েছিলো!
অবাক লাগছে? হাসি পাচ্ছে? ইতালিয়ান, মার্কিন আর ফ্রান্সের জনগন এই বই পড়লে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে না? যেভাবে আমরা এক্সট্রাকশন দেখে হেসেছি? আমরা যখন ‘অগ্নিপুরুষ’ পড়েছি তখন আমাদের কিন্তু হাসি পায়নি। উল্টো মাসুদ রানার ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের স্বীকৃতি দিয়েছি। কারন এইটা বাংলাদেশের পটভূমিতে না। বাংলাদেশের সংস্কৃতি, আইন শৃঙ্খলা ব্যাবস্থা ইত্যাদি কিছুই এখানে আহত হয় নাই। আহত হয়েছে রাশিয়া, আমেরিকা, ইতালি আর ফ্রান্সের... তাতে আমাদের কী আসে যায়? আমাদের তো গর্বই তাই না? অগ্নিপুরুষে রানা যা ‘খেইল’ দেখিয়েছে, ক্রিস হেমসওয়র্থ তার ধারেকাছেও যেতে পারে নাই। যদি ঐ ট্রিটমেন্ট ঢাকা শহরে খাটাতো, তাহলে সম্ভবত আমরা একটা বিশ্বযুদ্ধই বাঁধিয়ে দিতাম।
৬. হলিউডিরা ঢাকায় এসে ঢাকার মান রক্ষা করতে পারেনি বলে আমরা আজকে যুদ্ধ শুরু করেছি। এরকম নিম্নমানের একটা সিনেমা নিয়ে আমরা তোলপাড় করছি। অথচ একবার ভাবুন তো আমাদের এই ছোট্ট দেশটার বিভিন্ন অঞ্চলকে আমরা খোদ ঢাকায় বসে বছরের পর বছর কী পরিমান অসম্মান করেছি এবং করছি? আমাদের মিডিয়ায় ‘নোয়াখাইল্যা’রা আজীবন অসম্মানিত হয়েছেন, উত্তর বঙ্গের আঞ্চলিক ভাষাকে আমরা নিম্নস্তরের কমেডি বানিয়ে ফেলেছি, পুরান ঢাকার কালচারের নামে যা নাটকে দেখাই তা দেখলে মীর জুমলা কামান দাগবে। আর আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে যে কী ভয়ঙ্কর বিকৃতভাবে উপস্থাপন করি... সেকথা বলতেও অরুচি হয়। এই যে এখন রমজান মাস চলছে, কয়েক বছর আগেই তো কোটি টাকায় বানানো এক ফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপনে পাহাড়ে আজান শুনিয়ে ইফতার পার্টিও করে ফেলেছিলাম। মনে আছে? শুধু আঞ্চলিকতা আর জাত না, আমরা মানুষের মাঝেও যেভাবে শ্রেণী বৈষম্য আমাদের নাটক সিনেমায় দেখাই... না বলাই ভালো। থাক।
আর ভাষা? বাংলা ভাষা? হাহ্... আমরা আমাদের নাটক, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র এমনকি জীবনে বাংলা ভাষার বারোটা বাজিয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত এবং ইচ্ছেমতো। আমাদের অভিনেতা অভিনেত্রীরা কতজন শুদ্ধ ভাষায়, শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে পারেন? এফ এম রেডিওতে আরজেরা? ইউটিউবে যে এখন লক্ষ লক্ষ ভিডিও কনটেন্ট আমরা বানাচ্ছি সেগুলোয় বাংলা ভাষার কী যাচ্ছেতাই অবস্থা দেখেছেন? জানেন?
এই যে আড়াই হাজার শব্দের একটা লেখা লিখেছি, তার মধ্যে অসংখ্য বানান ভুল রয়ে গেছে, জানি। শুদ্ধ বাংলায়, শুদ্ধ বানানে ১০টা বাক্য আমরা লিখতে পারি না, বলতেও পারি না। আমরা নিজেরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে যেভাবে দিনের পর দিন অসম্মান, অবহেলা, অবজ্ঞা আর বিকৃত করে যাচ্ছি... এবং সামান্যতম চেষ্টাও করছি না ঠিক করার... এই মুখে আসলে হলিউডিদের বাংলা ভাষা নিয়ে কথা বলারই আস্পর্ধা থাকা উচিত না আমাদের।
’কিছু একটার প্রতিবাদ করলেই তা করে দেখাতে হবে?’ থিউরি কিন্তু এখানে খাটবে না। আপনাকে হেমসওয়র্থ-এর মতো তারকা হয়ে প্রমাণ দিতে বলা হচ্ছে না... বলা হচ্ছে নিজের মাতৃভাষা, নিজের জাতি, নিজের মানুষকে সম্মান করতে।
ভাই, নেটফ্লিক্সের পেইজে ‘tor mayara cude’ লেখার আগে একবার আয়নায় তাকান।
৭. ড্রাগলর্ড আর সন্ত্রাস দেখাতে দেখাতে ইতালিকে যে পরিমান পচানো হয়েছে তাতে সারাবিশ্বের মানুষের মনে হতেই পারে ইতালিতে বুঝি শুধু এইসবই হয়। আমাদের মানসম্মান নিয়ে আমরা যে পরিমান হাপিত্যেশ শুরু করেছি, ইতালিয়ানদের উচিত ছিলো হলিউডে পারমানবিক বোমা হামলা করা। জবাব কিন্তু তারা ঠিকই দিয়েছে, দিচ্ছে, দিবেও... তারা বানিয়েছে ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’, ‘সিনেমা পারাদিসো’, ‘বাইসাইকেল থিবস’, ‘লা দলচে ভিতা’, ‘এইট এন্ড হাফ’, ‘মালেনা’র মতো চলচ্চিত্র... সাহিত্য, শিল্পকলার কথা তো বাদই দিলাম। তারা ‘tor mayara cude’ লিখে প্রতিবাদ করে না, পাল্টা জবাব দেয় চলচ্চিত্রের ভাষাতেই..
যে বাজেটে এক্সট্রাকশন তৈরি হয়েছে, তারচেয়ে বেশি বাজেটে সিনেমা বানানোর ক্ষমতা বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানেরই আছে। স্যাম হারগ্রেইভের চেয়ে মেধাবী নির্মাতাও আছে এদেশে। এক্সট্রাকশনের চেয়ে ভালো চিত্রনাট্য লেখার লোকও বাংলাদেশে আছে... তবু আমরা এরকম একটা সিনেমা বানাতে পারি না। আমরা শুধু অপেক্ষায় থাকি বিদেশ থেকে সাদা চামড়ারা এসে আমাদের ঢাকা শহর আর বাংলাদেশকে নিয়ে ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি’ নামের সিনেমা বানাবে। আর আমরা নিজেরা উঠতে বসতে সারাক্ষণ এই দেশ, এই দেশের মানুষ, বাঙালি জাতিকে গালি দিয়ে যাবো!