
কথিত আছে, মিশরের রাণী ক্লিওপেট্রা তার স্নানের জলে সুগন্ধি ছড়াতে জাফরান ব্যবহার করতেন! আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট পান করতেন জাফরান মেশানো চা! সেই জাফরান সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা?
বিশ্বের সবচেয়ে দামী মসলা জাফরান। ব্লাড প্রেশার কমাতে, স্কীন ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে, খাবারে সোনালী হলুদ রং আর সুগন্ধি ছড়াতে, এমনকি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতেও এর জুড়ি নেই! শুধু অতিরিক্ত দামই নয়, জাফরানের এসকল গুণের কারণেও মসলাটি সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
কী কী কাজে জাফরান ব্যবহৃত হয়?
-
মিশরের রাণী ক্লিওপেট্রা তার স্নানের জলে সুগন্ধি ছড়াতে জাফরান ব্যবহার করত।
-
আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট যুদ্ধক্ষেত্রে তার শরীরের ক্ষত পরীষ্কার করতে জাফরানে মেশানো জল ব্যবহার করত। পান করত জাফরান মেশানো চা।
-
ত্রয়োদশ শতকে প্লেগ রোগ থেকে মুক্তি পেতে জাফরান ব্যবহৃত হতো।
-
স্প্যানিশ, ইরানি ও ভারতীয়রা তাদের খাবারে সুগন্ধি ছড়াতে জাফরান মসলা হিসেবে ব্যবহার করে।
-
উৎপাদনশিল্পে কফি,লবণ থেকে শুরু করে ত্বক ফর্সাকারী ক্রীম, শাম্পু প্রভৃতিতে জাফরান ব্যবহার করা হয়।
-
ঐতিহ্যগতভাবেই, মেয়েদের ঋতুস্রাবের সমস্যা, হাঁপানি, বিষণ্নতা এবং বিভিন্ন ধরণের যৌন রোগের চিকিৎসায় জাফরান ব্যবহার করা হয়।
-
স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এবং ক্যান্সারের চিকিৎসায়ও জাফরানের ভূমিকা থাকতে পারে বলে অনেক গবেষকরা মনে করেন। কিন্তু এটি এখনও নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়নি।

কী কারণে এত দাম জাফরানের?
লাল রংয়ের মসলা জাফরানকে বলা হয় “লাল সোনা”। সোনার চেয়েও দামি বলেই এই নাম। মাত্র এক গ্রাম ভালোমানের জাফরান বিক্রি হয় কমপক্ষে ১৮ ডলারে! শুধু কি এর সুগন্ধ আর গুণাগুণই এই উচ্চমূল্যের জন্য দায়ী? না, জাফরানের এই উচ্চমূল্যের পেছনে রয়েছে এর উৎপাদন প্রণালী আর দুষ্প্রাপ্যতা।
জাফরান চাষে প্রচুর জমি আর শ্রম দরকার হয়। তাই, এর উৎপাদন খরচ খুব বেশি। জাফরানের ছোট ছোট গাছের বেগুনি ফুলে থাকে উজ্জ্বল লাল রঙের গর্ভমুণ্ড। সুগন্ধি পাপড়ি ছিঁড়ে সেই লাল গর্ভমুণ্ড বের করে আনতে হয়। পরে সেগুলো শুকিয়ে উৎপাদিত হয় ব্যবহার উপযোগী সুগন্ধি জাফরান।
জাফরান চাষ, জমি থেকে সংগ্রহ, বাছাই ও বাজারজাতকরণের পুরো পদ্ধতিটাই সম্পূর্ণ শ্রমনির্ভর। তাই প্রচুর শ্রম আর সময় ব্যয় হয় জাফরান উৎপাদনে। মজার বিষয় হলো, ১ লাখ ৭০ হাজার ফুলের ওজন মাত্র ১০০ কেজির মতো। আর এ থেকে মাত্র এক কেজি শুকনো জাফরান উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব কারণেই জাফরান পৃথিবীর সবচেয়ে দামী মসলা।
যে সকল দেশে উৎপাদিত হয় জাফরান
সারা বিশ্বে সরবরাহকৃত জাফরানের ৯০ ভাগই আসে ইরান থেকে। ইরান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, গ্রিস, স্পেন, আফগানিস্তান, ভারত প্রভৃতি দেশের অনেক অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে জাফরান।

খাঁটি জাফরান চিনবেন কী করে?
উদ্বেগের ব্যাপার হলো অতিরিক্ত দামের কারণেই কিনা জাফরানের বাজারেও প্রবেশ করেছে ভেজাল। ভেজালের ভীড় আসল জাফরান চিনতে পারাটাই এখন মুশকিল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশে জাফরান বিভিন্ন মানে ভাগ হয়ে বিভিন্ন নামে বিক্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে থেকে আসল জাফরান চিনে কিনতে পারাটাও এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেভাবে চিনবেন উন্নতমানের জাফরান-
- গাঢ় লাল রঙের জাফরান পানিতে ডুবালে কমলা-হলুদাভ রং ধারণ করবে।
- নাকে ধরে গন্ধ নিলে বা জিহবাতে স্পর্শ করলে বোঝা যাবে কোনটি আসল আর কোনটি ভেজাল জাফরান। ভেজাল জাফরানের সুবাস খুব কম হবে।
- ভাল মানের জাফরানে ফল ও ফুলের মিশ্র একটি সুবাস থাকবে।
- একইসঙ্গে মিষ্টি এবং তিতা দু ধরণের স্বাদই থাকবে জাফরানে।
- জাফরান ফুলের পরাগদন্ড বলে এর একপ্রান্ত দেখলে বোঝা যায় এটি ফুল থেকে ছেঁড়া হয়েছে।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন