বিচারকের অন্যরকম রায়: কারাদণ্ডের আসামিকে লাগাতে হবে গাছ, পড়তে হবে বই!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

আদালতের রায়ে সম্প্রতি চমক দেখালো কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার এক আদালত। প্রতারণার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর কারাদণ্ড স্থগিত করা হলো, পড়তে বলা হলো বই। কেন?
বাংলাদেশের বিচারকেরা যখন কোনো একটি মামলায় রায় দেন, তখন আমরা ধরেই নিই- হয় কারাদণ্ড দেয়া হবে। নাহয় জরিমানা করা হবে।অপরাধ গুরুতর হলে কখনো কখনো ধরে নিই, ফাঁসিও দেয়া হতে পারে। বিচারকদের রায় নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনার গণ্ডি এতটুকুর মধ্যেই ঘুরপাক খায়। আবার বিচারকেরাও অধিকাংশ সময়েই গনিতের নির্দিষ্ট সূত্রের মতন করে এই তিনপ্রকার শাস্তির বাইরে কখনোই কেন যেন যান না। মাঝেমধ্যে হয়তো মধ্যস্ততার চেষ্টা করা হয়। তবে তাও নেহায়েত পাকেচক্রে।
তবে এটাও ঠিক, বিচারালয়ে মাঝেমধ্যে যে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত যে আসে না, সেটা বললেও ভুল হবে। এই বছরের জানুয়ারিতে যেমন এক বিচারক এক আসামীকে শাস্তি দিলেন কারাদণ্ডের। কিন্তু আসামীকে জেলে যেতে হবে না। ঘরে থেকেই দণ্ড ভোগ করতে হবে তাকে। সম্প্রতি ব্যতিক্রমী রায়ের ক্ষেত্রে ঘটেছে আরেকটি অন্যরকম নজির। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার একটি আদালতে সম্প্রতি ভিন্নধর্মী এক রায় দেয় আদালত। বিদেশ পাঠানোর নামে টাকা গ্রহণ করে প্রতারণা করার অভিযোগে ষাটোর্ধ্ব এক আসামীর ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেয় কোর্ট। কিন্তু এ রায়কে স্থগিত করে অভিনব এক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেব। আসামীকে শোধরানোর জন্যে বারোটি শর্ত দিয়ে তিনি ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ স্থগিত করেন। আইনের পরিভাষায় এটাকে বলে স্থগিত সাজা। বলা হয়েছে, এই শর্তগুলো যদি আসামী পূরণ করতে না পারেন তাহলে তাকে কারাদণ্ড দেয়া হবে।
শর্তগুলোর মধ্যেও রয়েছে চমক। ঘরের আশেপাশে চল্লিশটি গাছ লাগাতে হবে তাকে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কমপক্ষে দুটি বই পড়তে হবে, স্কুলের শিক্ষার্থীদের খাতা, জ্যামিতিবক্স, স্কুলব্যাগ, ভ্রমণ বিষয়ক বই কিনে দিতে হবে। এতিমখানায় খাবার ও লুঙ্গি-গেঞ্জি দিতে হবে। এছাড়াও রয়েছে আরো কিছু সমাজকল্যাণমূলক কাজকর্ম, যেগুলো নিয়মিত করতে হবে।

বিচারকের এই রায়টি আমাদের একটু চমকই দেয়। সে সাথে আশাবাদীও করে। রায় মানেই শুধু গৎবাঁধা রায় দেয়া আসলেই কোনো কাজের কথা না। তাছাড়া প্রত্যেক জেলেই এখন ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কয়েদী রয়েছে। সেদিক থেকে কারাদণ্ডের বিকল্প শাস্তি দেয়া আসলেই অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। তাছাড়াও বাধ্যতামূলক মুক্তিযুদ্ধের বই পড়তে বলা সহ বাকি কাজ যেগুলো সরাসরি মানুষের কল্যানের সাথে যুক্ত, এরকম কাজের দায়িত্ব দিলে সেটি সমাজের জন্যেই ভালো হবে এক প্রকারে।
কোনো অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্য এটা নয়, তাকে ভয় দেখানো ও নির্যাতন করা। শাস্তির উদ্দেশ্য, অপরাধীর মধ্যে অপরাধের জন্যে অপরাধবোধ জাগ্রত করা। অপরাধীর আত্ম-উন্নয়ন করা। মানবিকতা জাগিয়ে তোলা। আমাদের উল্লেখিত অপরাধীর ক্ষেত্রে কারাদণ্ড দিলে তার কতটুকু আত্ম-উন্নয়ন হতো, সেটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এই বারোটি শর্ত পূরণ করলে তার মানসিকতার যে পুরোপুরি পরিবর্তন হবে, তা আমরা হলফ করে বলতে পারি।
স্রোতের বিপরীতে গিয়ে রায় আরো আসুক এ দেশে। এরকম রায়ে অপরাধীর অনুশোচনাবোধের সুযোগ বেশি থাকবে এবং মানুষের কল্যানের জন্যেও কিছু কাজ করতে সরাসরি তারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
এভাবেই সমাজ ও অপরাধী... দুইপক্ষেরই মঙ্গল হবে। সমাজে সাম্যাবস্থা তৈরী হবে।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন