বিদ্যুৎ বিলের নামে সবগুলো কোম্পানি যে অনিয়মটা করলো, এই সাহস তারা কোথায় পায়? আচ্ছা করোনা তো সারা পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে, পৃথিবীর কোন দেশে কি বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এই ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটেছে?

রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার কোন বিচার হয় না এদেশে। এই যে, এই বছরের জানুয়ারিতে আমার বিদ্যুৎ বিল এসেছিল ১৫০৯ টাকা। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ৫১৫ টাকা, মার্চে ৬৮৭ টাকা ও এপ্রিলে ৮৭৮ টাকা বিল আসে। মে মাসে তাহলে কী করে এর তিনগুন বেশি বিল ২৩৯৪ টাকা এলো? মে মাসে যদি বেশি খরচ করে থাকি তাহলে তো জুনেও তাই আসার কথা। জুনে তাহলে ১৭২৪ টাকা এলো কেন? 

ডেসকোর ওয়েবসাইট থেকে আমার গত এক বছরের বিল দিলাম। যে কেউ দেখলেই বুঝবে মে মাসে যেটা হয়েছে সেটা ডাকাতি। আমি তো বলবো গরমের মধ্যে মার্চে যদি আমার ৬৮৭ টাকা বিল আসে অন্য সময়ও কেন এর কাছাকাছি হবে না? আমি তো এখন সব মাসের বিল নিয়েই প্রশ্ন তুলতে পারি। অথচ এই বিল আসার পর আমরা হিসেব করছি, কোন রূমের ফ্যানটা বেশি চললো? কোথাও সুইচ চালু রেখেছি কী না। আর এখন দেখছি ডাকাতি। 

শুধু তো আমার একার নয়, লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে এই অনিয়মের ঘটনা হয়েছে। সারা বছরে যখন ইচ্ছে দাম বাড়াবেন। যতোবার ইচ্ছে বাড়াবেন। সবই আমরা মেনে নিতে বাধ্য হই। কিন্তু তাই বলে এইরকম ডাকাতিও? আমার তো তাও অল্পের উপর দিয়ে গেছে। অনেকের শুনলাম প্রতি মাসে যেখানে পাঁচ হাজার আসে মে মাসে এসেছে ১৮ হাজার। যার আসে অন্য সময় আটশ টাকা, মে মাসে নাকি এসেছে আট হাজার টাকা? এগুলো কী ডাকাতি নয়? কিন্তু বিচার করবে কে? 

খবরে দেখলাম, আগামী ৭ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিভাগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। এজন্য নাকি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাসি পেল। এই দেশে এই অপরাধের বিচার হবে? বড় কর্তাদের অনুমতি ছাড়া সবগুলো কোম্পানি এইভাবে ভূতুড়ে বিল বানানোর সাহস করেছে কী?

হয়রানির শিকার গ্রাহকের গত এক বছরের বিদ্যুৎ বিলের খতিয়ান

দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। নাগরিক হিসেবে যখন যা বিল আসে সেটা আমি দেই। রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করে তবে কী আমরা প্রতারিত হচ্ছি। আসলে এই দেশে চুরি করা অপরাধ, কিন্তু রাষ্ট্রীয় চুরি অপরাধ না। অপরাধ নয় রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুট করা। আচ্ছা বেসিক ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে দেশের ক্ষতি হয় নাকি কারও ফেসবুক স্ট্যটাসে? আচ্ছা হাজার কোটি টাকা যারা লুট করে স্বাস্থ্যখাত ধ্বংস করে তারা বেশি অপরাধী নাকি একজন কার্টুনিষ্ট। 

এই যে বিদ্যুৎ বিলের নামে সবগুলো কোম্পানি অনিয়ম করলো এই সাহস তারা কোথায় পায়? সম্মিলিত সিদ্ধান্ত না নিলে সারাদেশে সবাই কী করে একই দুর্ভোগের শিকার হয়? আচ্ছা করোনা তো সারা পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে পৃথিবীর কোন দেশে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এই ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটেছে? পৃথিবীর কোন দেশে বাসভাড়া বেড়েছে? 

জানি রাষ্ট্রীয় এসব অনাচারের বিচার হবে না কিন্তু নবম শ্রেণীর কোন ছাত্র কি লিখলো কিংবা কোন সাংবাদিক-কার্টুনিষ্ট কী মতামত প্রকাশ করলে সে কারণে জেলে যেতে হবে। বড় আজব দেশ। বড় আজব। এখানে মূল অপরাধী যারা, যারা ঘুষ খায়, লুট করে, বিদেশে টাকা পাচার করে তারা সবাই বহাল তবিয়তে। আর সব কষ্ট শুধু জনতার। বড় আজব দেশ। বড় আজব।

আমি ঠিক করেছি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করবো। আপনাদের প্রত্যেককেও একই অনুরোধ করছি। mpemr.gov.bd এই ওয়েবসাইটের কমপ্লেইন সেকশনে গিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। কিংবা Ministry of Power, Energy & Mineral Resources, Bangladesh ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। আসুন আমরা সবাই অভিযোগ করে বিতরণ কোম্পানিগুলোর অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। পাশাপাশি যারা নীতি নির্ধারক আপনাদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ, দেশে সুশাসন তৈরি করুন। আমরা যে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও থাকার চিন্তা করি না।

সংযুক্তি: ফেসবুকে বিদ্যুতের বাড়তি বিল নিয়ে এই স্ট্যাটাসটা দেয়ার পর এক ছোট ভাইয়ের পরামর্শে অনলাইনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিয়েছি। আধঘন্টার মধ্যে ফোন পেলাম ডেসকো থেকে। তারা শনিবার লোক পাঠাবে। অভিযোগ যাচাই করবে। ভালো লাগছে। 

আপনাকেও বলছি বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগ থাকলে আনুষ্ঠানিকভাবে করুন। এই ধরনের অনাচার বন্ধ করতে আমাদের প্রত্যেকের প্রতিবাদ করা উচিত। বিদ্যুৎ বিল যারা বাড়তি পেয়েছেন প্রত্যেককে বলবো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এই mpemr.gov.bd ওয়েবসাইটের কমপ্লেইন সেকশনে গিয়ে অভিযোগ করুন। www.facebook.com/MPEMR ফেসবুক পেজেও অভিযোগ করতে পারেন। 

আসুন আমরা সবাই অভিযোগ করে বিতরণ কোম্পানিগুলোর অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি যাতে এমন অনিময় বন্ধ হয়। পাশাপাশি এই অনিয়ম তৈরির সঙ্গে জড়িতদের খুূঁজে বের করে শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে বলবো, সবাই তো অভিযোগ করতে পারবে না। কাজেই যারা অভিযোগ করবে শুধু তাদের নয় প্রত্যেকের বিল সমন্বয় করুন। এরপর ক্ষমা চান। 

চলুন আমরা প্রত্যেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা