যে কারাগারে গাদাগাদি করে অন্তর্বাস পরে থাকতে হয় বন্দীদের!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

এল সালভাদরের দুটি কারাগারে সম্প্রতি অনুসন্ধান চালানোর সুযোগ পেয়েছিলো সাংবাদিকেরা। দেখা গেলো, সে দুই কারাগারে অন্তর্বাস পড়িয়ে, গায়ে গায়ে ঠেসাঠেসি করিয়ে রাখা হয়েছে কয়েদীদের৷ প্রশ্ন উঠলো, এটা কি শাস্তির পদ্ধতি? নাকি, সাংবাদিকদের চোখে ধূলো দেয়ার জন্যে সাজানো হয়েছে এ নাটক?
যদি বলি, আজকে এমন একটা জেলের কথা বলবো, যেখানে সবাই গাদাগাদি করে থাকে, এই তথ্য তেমনভাবে কারো কৌতূহল উদ্রেক করবেনা। আমাদের দেশের জেলখানাগুলোই তো ধারণক্ষমতার তিনগুণ অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিয়ে দিব্যি ঠেসেঠুসে বহাল তবিয়তে আছে। কোনো সমস্যা ছাড়াই। শীতে জমাট নারকেল তেলের মতন একসাথে লেপ্টে আছেন কয়েদীরা। এ তথ্য তাই আমাদের কাছে নতুন কিছু না। কিন্তু এখন যদি দ্বিতীয় তথ্য দেই, তাহলে একটু ধন্দে পড়ে যাবেন যে কেউ। দ্বিতীয় তথ্যটি হচ্ছে, যে কারাগারের কথা বলছি, সেখানে সবাই গাদাগাদি করে থাকার পাশাপাশি অন্তর্বাস পড়ে থাকে। এবার একটু চমকে গেলেন তাই না? বলবো এরকমই এক জেলের কথা, যে জেলে গাদাগাদি করে আর অন্তর্বাস পড়ে থাকাই কয়েদীদের নিয়তি।
সম্প্রতি এল সালভাদরের দুটি জেলখানা পরিদর্শনের সুযোগ পেয়েছিলেন গণমাধ্যমগুলো৷ এই দুই জেলখানাতে আছে দেশটির গ্যাংভিত্তিক অপরাধীদের একটা বড় অংশ। এবং এই দুই কারাগারেই কয়েদীদের রাখা হয় এভাবে গাদাগাদি করে আর অন্তর্বাস পড়িয়ে। আচ্ছা, তা না হয় বোঝা গেলো। কিন্তু এবার একটা প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে। হুট করে কেন জেলখানাতে ঢুকে সাংবাদিকতা করার সুযোগ পেলেন সাংবাদিকেরা? কী এমন ঘটলো? জানাচ্ছি সেটাও। সাংবাদিকদের কারাগারে ঢুকে সংবাদ সংগ্রহের পেছনেও একটা ঘটনা আছে।
এল সালভাদরে অপরাধের মাত্রা এমনিতেই বেশি। এটা সবাই-ই জানেন। মধ্য আমেরিকার ক্ষুদ্র আয়তনের এই দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৬৫ লাখ হলেও জনসংখ্যার বেশির ভাগই দরিদ্র। ১৯৯২ সালে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর থেকে দেশটিতে দারিদ্র্য ও অপরাধ চলছে হাত ধরাধরি করে। আস্তে আস্তে দেশটিতে অপরাধের মাত্রা হুহু করে বাড়ছিলো। চিন্তার ভাঁজ সবার কপালেই। এরকম অবস্থায় দেশটির প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে গতবছরে প্রধান দুই অপরাধী দলের সদস্যদের বন্দি করে অপরাধ কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, হত্যার ঘটনা প্রায় ৫২ ভাগ কমেছে এ বছরে এসে৷ প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপ এবং সেই পদক্ষেপের ফলে অপরাধ কমে যাওয়াতে সবাই প্রেসিডেন্টের বেশ প্রশংসাও করছিলেন।

কিন্তু এ বছরের মাঝামাঝি এসেই রটনা রটে, সরকার গোপনে গোপনে জেলের কয়েদীদের সাথে আলোচনা করে ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছেন। শুধু রটনাই না, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশ করে স্থানীয় গণমাধ্যম এল ফারো৷ নির্বাচনে জেতার জন্যে সরকার যে সন্ত্রাসীদের সাথে হাত মেলাচ্ছে, সেটা প্রমাণের জন্যে বিভিন্ন নথি, জেলের গোপন কাগজপত্রও প্রকাশ করে তারা। প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলের এতদিনের সম্মান যেন হুট করেই ধূলিস্যাৎ হবার উপক্রম হয় এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। তখন আর কোনো উপায় না পেয়ে, দিশেহারা হয়ে, নিজের ইমেজটা ঠিক করার জন্যে তড়িঘড়ি করে তিনি সাংবাদিকদের দুটি জেলে প্রবেশ করার ব্যবস্থা করে দেন। যাতে করে সাংবাদিকেরা জেলে ঢুকে ভেতরের প্রকৃত অবস্থা দেখতে পারে।
তারই ফলশ্রুতিতে কেসালটেপেক ও ইসালকো জেলখানায় যান সাংবাদিকেরা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েদীরা একত্রে গাদাগাদি করে থাকছে রুমগুলোতে। এবং তাদের শরীরে অন্তর্বাস ছাড়া নেই আর কোনো পোশাক। মুখে মাস্ক আর এভাবেই অন্তবার্স পড়ে গাদাগাদি করে বসবাস করছে তারা৷ এসব কয়েদিদের অনেকেই সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ জানায়, তাদের খাবারদাবার ঠিকঠাক দেয়া হয় না। ন্যূনতম চাহিদাগুলো পূরণ করা হয় না। কারো সাথে দেখা করতেও দেয়া হয়না তাদের। তাদের উপর নানা অত্যাচার-অবিচারের কথাও জানিয়েছে তারা।
প্রেসিডেন্ট, গনমাধ্যমের চাপে পড়ে তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার জন্যে সাংবাদিকদের জন্যে দুটি জেলখানা খুলে দিয়ে তাদের অনুসন্ধানের সুযোগ করে দিয়েছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কঠোরভাবে যে রাখা হচ্ছে অপরাধীদের, এটা কতটুকু সত্যি আর কতটুকু নাটক, সেটা অবশ্যই বিবেচনার বিষয়। সরকার গনমাধ্যমের সামনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাদের কঠোরতা বোঝাতে এরকম 'ক্যামোফ্লেজ' নিয়েছেন কী না, এ প্রশ্নও অনেকের। তবে কারণ যেটাই হোক, এই পলিটিক্যাল স্টান্টবাজি বেশ কাজে দিয়েছে। অপরাধীদের এমনভাবে নির্যাতনের মধ্যে রাখা হয়েছে জেনে দেশের জনগনও বেশ খুশি। সরকারের উপর আস্তে আস্তে তাদের সন্তুষ্টিও বাড়ছে।
এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকলের প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল দুর্নীতি প্রতিরোধ করা। সেটা তিনি বেশ ভালোভাবেই সামলেছেন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ আসার পরেও বেশ চমৎকার এক চালই চেলেছেন তিনি। জনসমর্থন আবার আদায় করে নিচ্ছেন। এভাবেই তো রাজনীতি করতে হয়। সেটিই যেন দেখাচ্ছেন তিনি।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন