এর আগে যখন প্রথম আলো বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছিল তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? কী ভূমিকা ছিলো তখন আপনাদের? কোনভাবে প্রথম আলোর বর্জনের পক্ষে থাকেননি তো?

আমি যে কোন গণমাধ্যম বর্জনের ডাক দেওয়ার বিপক্ষে। সে কারণেই ৭১ টিভি বর্জনের ডাক দেওয়াটা ভালো লাগেনি। এই বর্জনের বিরোধিতা করছি। ৭১ টিভির পক্ষে যারা সরব তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। তবে আমার একটা প্রশ্ন আছে। এর আগে যখন প্রথম আলো বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছিল তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? কী ভূমিকা ছিলো তখন আপনার? কোনভাবে প্রথম আলোর বর্জনের পক্ষে থাকেননি তো? 

কথাটা বলছি এই কারণে যে আজকে যারা ৭১ টিভির জন্য সরব তাদের অনেককে আমি তখন প্রথম আলো বর্জনের ডাক দিতে দেখেছি। সুযোগ পেলে তাদের প্রথম আলো সম্পাদককে গ্রেপ্তারের দাবিও করতে দেখেি। প্রথম আলোর সামনে গিয়ে ঘেরাও ও পোড়াতেও দেখেছি। 

আচ্ছা বলেন তো আপনারা যদি প্রথম আলোর মতো গণমাধ্যম বর্জনের ডাক দেয়াকে তখন অন্যায় মনে না করে থাকেন এখন হঠাৎ ৭১ টিভির বর্জনের ডাকে ক্ষিপ্ত কেন? নাকি ৭১ টিভি বর্জন করতে বলা খারাপ আর প্রথম আলো বর্জন করতে বলা ভালো? 

আপনাদের বলবো এই দ্বিচারিতা বন্ধ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও  সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল যে কোন গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে আমি। আমি চাই দেশের প্রতিটা গণমাধ্যম স্বাধীন ও সুন্দরভাবে চলবে। কারণ, বর্জন ও গ্রহণের জন্য তো পাঠক-দর্শক-শ্রোতা রয়েছেই। তারাই শেষ পর্যন্ত ঠিক করবে কোন গণমাধ্যম তারা বর্জন করবে, কোনটা না। সারা দুনিয়াতেই সেটা হচ্ছে। বাংলাদেশেও। কাজেই আলাদা করে কাউকে বর্জনের ডাক দেওয়ার দরকার নেই। 

প্রথম আলো বর্জনের ডাক দিয়ে পত্রিকাও পোড়ানো হয়েছে এক সময়

আসেন উদাহরণ দেই। এই যে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত দিনকাল পত্রিকাটা প্রতিদিন প্রকাশ হয়, বলন তো সেটা  প্রতিদিন কতো লোকে পড়ে? খুবই নগণ্য সংখ্যক। সারা দেশে যদি বিএনপির ভোটার যদি চার কোটিও ধরি তাতেও তো কোটি না হোক লাখ কপি চলার কথা দিনকালের। কিন্তু কেন চলে না? কারণ লোকে সেটা গ্রহণ করেনি। এমনকি বিএনপির নেতাকর্মীরাও না। 

একইভাবে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত পত্রিকাগুলোর তো এখন ১০-১৫ কোটি চলার কথা। কারণ পুরো দেশই তো এখন আওয়ামী লীগ। কাজেই নিদেনপক্ষে ১০-১৫ লাখ চলার কথা। কিন্তু কেন চলে না? কারণ তারাও এগুলো গ্রহণ করে না।  কী বুঝলেন তাহলে? 

একজন সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের কর্মী বা পাঠক বা দর্শক হিসেবে আমার সাফ কথা-কাউকে বর্জনের ডাক দেবেন না। কাউকে হয়রানি করবেন না। কোন সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের প্রতি ঘৃণা ছড়াবেন না। আপনি ডাকসু নেতা হোন বা রাষ্ট্রীয় নেতা- দয়া করে কাউকে বর্জনের ডাক দেবেন না।

আর প্রত্যেককে বলবো, দ্বিচারিতা ছাড়ুন। সাধারণ মানুষ সব দেখে। সব বোঝে। দিনশেষে কাকে গ্রহণ আর কাকে বর্জন করতে হবে সেটা তারা সবসময় জানে। আবার আজ যাকে ভালোবেসে তারা গ্রহণ করছে কাল তাকে ছুঁড়ে ফেলতে এতোটুকুও সময় লাগবে না তাদের। কাজেই চলুন আমরা সৎ থাকি। বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধ থাকি। দায়বদ্ধ থাকি দেশের কাছে। মানুষের কাছে। ভালো থাকুন সবাই। জয় বাংলা।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা