আপনি যুক্তি দিতে পারেন- যে ছেলেটা বিজ্ঞানে পড়েছে, তাকে বিজ্ঞানের পরীক্ষা দিয়েই তার মেধা প্রমাণ করতে হবে। তাহলে বলেন তো, বিসিএসে কেন সব সাধারণ বিষয় রাখে। কেন রসায়নে পড়া ছেলেটাও অ্যাডমিন ক্যাডার হতে চায়?

আমি বলবো খুবই ভুল সিদ্ধান্ত এবং এখনই এটি বাতিল করা উচিত। আগামী ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ঘ এবং চারুকলা অনুষদের চ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর বদলে কেবলমাত্র ক, খ ও গ ইউনিটে (বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসা) স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলবো, দ্রুত এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন।

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় জানি আমাদের দেশের বহু ছেলেমেয়ে বিজ্ঞান, কলা কিংবা ব্যবসা শাখা নেয় বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষকদের কারণে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে অনেকেই এখান থেকে বেরিয়ে আসার স্বাধীনতা পায়।

আমার নিজের জীবনেও তাই ঘটেছে। ক্লাস ফাইভে ও এইটে বৃত্তি পেলাম। স্কুলের সব শিক্ষকদের কথা বিজ্ঞান পড়তে হবে। এসএসসিতে কয়েক নম্বরের জন্য চট্টগ্রাম বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে আমি স্ট্যান্ড করিনি। তখনো আমার বিজ্ঞান পড়তে ভালো লাগতো না।

উচ্চমাধ্যমিকেও বিজ্ঞানে পড়তে হলো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে আমার মনে হলো আমি আর বিজ্ঞান পড়বো না। আমি কোথাও বিজ্ঞানের কোন পরীক্ষা দেইনি। বিবিএ, আইন, ঘ ইউনিট যেখানেই আমি পরীক্ষা দিয়েছি, সেরা দশের মধ্যে ছিলাম কিংবা শুরুর দিকে। আমি জানি আমার মতই এই দেশের বহু ছেলেমেয়েকে ডি ইউনিটে সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে। এখন যিনি আর বিজ্ঞান পড়তে চান না, তাকে যদি ক ইউনিটের বিজ্ঞান বিভাগ দিয়েই ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়, সেটা খুবই বাজে সিদ্ধান্ত।

কেউ কেউ বলছেন, ঘ ইউনিট বাতিল হলেও ক ইউনিট দিয়ে কেউ বিভাগ পরিবর্তন করতে পারবে। অসম্ভব। হাস্যকর সিদ্ধান্ত। বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা নিয়ে ছেলেটা সাংবাদিকতা কিংবা দর্শনে ভালো হবে কী না সেটা যাচাই করা যাবে না। যার যে বিষয়ে আগ্রহ সেটি বা কাছাকাছি কোন বিষয়ে পরীক্ষা নিতে হবে।

আপনি যুক্তি দিতে পারেন, যে ছেলেটা বিজ্ঞানে পড়েছে তাকে বিজ্ঞানের পরীক্ষা দিয়েই তার মেধা প্রমাণ করতে হবে। তাহলে বলেন তো বিসিএসে কেন সব সাধারণ বিষয় রাখে। কেন রসায়নে পড়া ছেলেটাও অ্যাডমিন ক্যাডার হতে চায়? তখন তাকে ঠেকাবেন কী করে? আসলে যার যেখানে পড়তে ভালো লাগে, সেখানেই যাওয়া উচিত।

যার যেখানে পড়তে ভালো লাগে, সেখানেই যাওয়া উচিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ বছরের ইতিহাস দেখুন। সেখানেও যার যে বিভাগে পড়ার ইচ্ছে তিনি সেখানে গিয়েছেন। এরপর যখন হাজার হাজার ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দিতে এলো তখন ইউনিট সিস্টেম এলো। তবে গত দুই যুগ ধরেই কিন্তু বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগও রাখা হয়েছিল।

একইভাবে চারুকলার জন্য পরীক্ষা রাখতেই হবে। কারণ চারুকলায় আগ্রহ না থাকলে কিংবা বেসিক না জানলে চারুকলায় ভর্তি হয়ে কী হবে? এখন যদি চারুকলার জন্য আলাদা পরীক্ষা না হয়, খ ইউনিট থেকেই যদি চারুকলা দেয়া হয়, সেটা কিন্তু চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ধ্বংস করে দেবে।

আমি জানি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কারা এই দুই ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলের বুদ্ধি দিয়েছে। এটা যদি হয় ডি ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে হয়েছে, তাহলে বলবো যে কোন ইউনিটেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। এর সাথে ইউনিটের কোন সম্পর্ক নেই। আর মাথাব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলা যায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি বলে তারা অতিরিক্ত পরীক্ষা নিতে চায় না, তাদের বলবো একটাই পরীক্ষা নিক। ক, খ, গ, ঘ সব ইউনিট একইদিনে। যার যেটা ইচ্ছে সেটা দেবে। আরও একটা কাজ করতে পারবেন। ক ইউনিটের পরীক্ষার দিনেই অপশন রাখুন বিভাগ পরিবর্তন। যার ইচ্ছে তিনি সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি এসব বিষয়ে পরিবর্তন করে বিভাগ পরিবর্তন করবে।

শুনলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরীক্ষার সংখ্যা এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ভীষন হাসি পেল। তাহলে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেন। আরও পরিস্কার করে যদি বলি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা যদি একদিনে হতে পারে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাও একদিনে হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে যার যে বিভাগে পড়ার ইচ্ছে, তিনি সেভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর দেবেন।

আরেকটা বিষয় কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে শিক্ষাবিদদের মতামত নিয়ে, ভবিষ্যত ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর শুধু এক বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিলে হবে না; সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একই রকম সিদ্ধান্ত হতে হবে। আর নিজের রাগ-অনুরাগ চরিতার্থ করার জন্য দয়া করে সিদ্ধান্ত নেবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনকে বলবো, শতবর্ষে এসে দয়া করে এই বিশ্ববিদ্যালয়টাকে ধ্বংস করবেন না। বরং যার যা পড়তে ভালো লাগে, যা করতে ইচ্ছে করে সেটা করতে দিন।সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা