ফ্রান্স-জার্মানীর ডাক্তারদের প্রতিবাদ ও আমাদের রূঢ় বাস্তবতা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

পিপিই'র দাবীতে নগ্ন হয়ে ছবি পোস্ট করছেন জার্মানি ও ফ্রান্সের ডাক্তাররা! ভাবছি, এখন জার্মানী-ফ্রান্সের মতো বাংলাদেশের ডাক্তাররাও যদি ন্যাংটা হওয়া শুরু করেন, তবে কেমন হবে?
খবরটা বেশ ইন্টারেস্টিং। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সবচেয়ে সফল দেশগুলোর একটি হলো জার্মানি। জার্মানি করোনা জয় করতে না পারলেও করোনাকে জয়ী হতে দেয়নি এখন পর্যন্ত। কয়েকটা খবরে দেখেছিলাম- নিজেদের দেশ তো বটেই, পার্শ্ববর্তী কয়েকটা রাষ্ট্রকেও করোনা চিকিৎসা দিচ্ছিল এঞ্জেলা মার্কেলের দেশ। অথচ ভেতরে ভেতরে এই দেশের ডাক্তাররাই যে পিপিই ঠিকমতো পাচ্ছেন না, সেটা কে জানত? সিএনএন থেকে নিয়ে বিশ্বের অনেকগুলো প্রভাবশালী মিডিয়া নিশ্চিত করেছে ডাক্তারদের এই অভিনব প্রতিবাদের খবর।
"আমরা ভালনারেবল। যে সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে, সেটা যথেষ্ট নয়। পিপিই যদি ঠিকমতো না দেয়া যায়, কাপড় পরেই বা কী লাভ? এই নগ্নতা দিয়ে বোঝাচ্ছি পিপিই ছাড়া আমাদেরকে ঠিক কেমন দেখায়।"- এমন ক্ষোভ ছিল আন্দোলনে যাওয়া ডাক্তারদের একাংশের।
অবশ্য নগ্ন হবার বুদ্ধিটা প্রথম এসেছিল ফ্রেঞ্চ ডাক্তার এলেন কলম্বির। নিজের কর্মস্থলে নগ্ন হয়ে তার দেয়া ছবিটাই বারুদের কাজ করে। ফ্রান্সের ডেন্টিস্টরাও সাড়া দেন এই অভিনব আন্দোলনে। তারপর সীমান্ত পেরিয়ে এই ঝড় চলে যায় জার্মানীতে।
কয়েক মাস ধরেই নাকি ডাক্তারদের এই গ্রুপটি নিজেদের সুরক্ষা উপকরণ চেয়ে আসছিল সরকারের কাছে। সরকার খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। অবশেষে 'সামরিক' ও 'রাজনৈতিক' সরকারের কাছে আবেদন পৌঁছানোর শেষ উপায় হিসেবে কাপড় ছেড়েছেন এই ডাক্তাররা।
জার্মানি-ফ্রান্স ডাক্তারদের কতটা সুরক্ষা দিয়েছে জানি না, তবে বাংলাদেশের চেয়ে যে বেশি দিয়েছে সেটা বোঝার জন্য রকেট বিজ্ঞান পড়া লাগে না। হাতি শুয়ে পড়লেও কুকুরের চেয়ে উঁচু। এরা একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেলেও সিস্টেমের কারণে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় থাকবে।
আমাদের দেশে পিপিই হিসেবে শুরুতে জাংগিয়ার কাপড়, ত্যানার কাপড় বা হাসপাতালের বেড শিট কাটা কাপড়ের মাস্ক দেয়া হয়েছিল। অনেক জল ঘোলা করে যে এন-৯৫ মাস্ক আসল, পরে দেখা গেল এটাও নকল। আমাদের সুস্বাস্থ্য মন্ত্রীর গুণধর পুত্র নাকি এই নকলের নায়ক ছিলেন।
সুরক্ষা সামগ্রীর গুণগত মানের সমালোচনা করে শাস্তি পেয়েছেন তিনজন পরিচালক। মিটফোর্ড হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সবশেষে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে ওএসডি করা হয়েছে। পিপিই পাননি- এমন পোস্ট দেয়াতে শোকজ করা হয়েছে নোয়াখালীর এক ডাক্তারকে।
ভাবছি, এখন জার্মানী-ফ্রান্সের মতো বাংলাদেশের ডাক্তাররাও যদি ন্যাংটা হওয়া শুরু করেন, তবে কেমন হবে? কতটা শাস্তি দেয়া হবে তাদের? উন্নত বিশ্বের ডাক্তাররা হ্যান করেংগা, ত্যান করেংগা, পলিথিন গায়ে দিয়ে চিকিৎসা দেয়েংগা বলে ফেসবুক কাঁপানো সেলিব্রেটিরাই বা কী বলবেন?
কে কী বলবেন জানি না। তবে এমন সাহস কেউ দেখালে তাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে এতে সন্দেহ নাই। আমরা জাতিগতভাবে 'ন্যাংটা' ব্যাপারটা পছন্দ করি না। যদিও আমাদের সবই ন্যাংটা। দেহে-মনে-চরিত্রে-জাতিতে কোনো দিক থেকে আমাদের কোনো আব্রু নাই। তাতে কী? গোপনে বেশ্যার হাতের ভাত খেলে তো আর ধর্ম যায় না।
যাই হোক, জার্মানী-ফ্রান্সের ডাক্তারদের সুরক্ষা সামগ্রী দেয়ার জন্য সে দেশের সরকারের প্রতি আহবান জানাই। আর সেটা না পারলে কীভাবে এই নাঙ্গুদের দমন করা যায় সেই বুদ্ধি এই দেশ থেকে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
আরও পড়ুন-