ডাক্তার আবু তাহের: সত্য কথা বলে শাস্তি পেতে যাওয়া এক করোনা যোদ্ধা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এই মানুষগুলো তো দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মোকাবেলা করছে। তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সামগ্রী তো দেয়াই হচ্ছে না। উল্টো ন্যায্য দাবীতে পাঠানো হচ্ছে কারণ দর্শানোর নোটিশ!
দেশে এখন চলছে করোনা যুদ্ধ, আর ঢাল তলোয়ারবিহীন যোদ্ধারাই হচ্ছেন আমাদের শেষ ভরসা। চিকিৎসকদের জন্য যে সুবিধা বরাদ্ধ থাকার কথা বলা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেটা তারা বুঝে পাচ্ছেন না, এর প্রতিবাদ করলেও কপালে জুটছে কারণ দর্শানোর নোটিশ। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর (পিপিই) স্বল্পতা নিয়ে স্বাস্থ্যসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে নোয়াখালী ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আবু তাহেরকে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল দেওয়া ফেসবুক পোস্টটিতে তিনি বলেন, “রোগীর সবচেয়ে কাছ থেকে আমি চিকিৎসা দেই। গত একমাসে প্রতিদিন হাসপাতালে গিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমিসহ আমার ডিপার্টমেন্ট এর কেউ একটিও এন৯৫, কেএন৯৫, এফএফপি২ মাস্ক পাইনি। তাহলে স্বাস্হ্যসচিব মিথ্যাচার কেন করলেন উনি এন৯৫ ইকোয়িভেলেন্ট (সমমানের) মাস্ক দিচ্ছেন? তাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কে মিথ্যা বলছে? এই মিথ্যাচারের শাস্তি কি হবে?”
স্ট্যাটাসটি দেয়ার পরেই ফেসবুকে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়, পুরো ব্যাপারটিই খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। আর এতেই ডা. আবু তাহেরকে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় তাতে বলা হয়েছে, ‘পিপিইসহ যাবতীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশনা এবং হাসপাতাল স্টোরে উল্লেখিত সামগ্রী মজুত বিষয়ে সুষ্পষ্ট ধারনা না থাকা সত্ত্বেও আপনি এ বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন যা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বা কোন শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি, ভুল বোঝাবুঝি বা বিদ্বেষের সৃষ্টি করতে বা সৃষ্টির জন্য অন্যকে প্ররোচিত করতে পারে যা সরকারি কর্মচারীর আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ এর পরিপন্থী এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (খ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ হিসাবে গণ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
এই নোটিশটি পাবার পর ডা. আবু তাহের আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, “সত্য কথা বলার শাস্তি, একটাও মিথ্যা বলেছি প্রমাণ করতে পারলে শাস্তি মেনে নিব।” সাথে তিনি তার আগের স্ট্যাটাসটিও জুড়ে দেন। শুধু ডাক্তার তাহের একা নন। পিপিই স্বল্পতার ঘটনাগুলো নিয়মিত উঠে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোষ্টে। অভিযোগ করছেন পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট থেকে বঞ্চিত চিকিৎসকেরা। অথচ সে আকুতি পৌঁছাচ্ছে না নীতিনির্ধারক মহলে। উল্টো তারা দাবি করছেন পর্যাপ্ত পরিমাণ পিপিই আছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পিপিই প্রয়োজন নেই। ইতিমধ্যেই কয়েক লাখ পিপিই মজুদ থাকার কথাও জানিয়েছিলেন। এমন সময়ে তিনি এ মন্তব্যটি করেন যখন, চিকিৎসকরা পিপিইর জন্য তাদের চাহিদার কথা জানিয়ে আসছিলেন। এই যখন অবস্থা, তখন একজন চিকিৎসককে তার ন্যায্য পিপিই চাওয়ার দাবীতে কারণ দর্শাতে হবে। হিরক রাজার দেশে সত্য বলা যাবে না। বাস্তবতা তুলে ধরা যাবে না। শুধু তালে তাল মিলিয়ে বলতে হবে, জ্বি হুজুর!
এই মানুষগুলো তো দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মোকাবেলা করছে। যারা এই ক্রাইসিসে ফ্রন্টলাইনের জরুরী কাজগুলো করছে, যারা রোগীদের সেবা দিচ্ছে, যারা করানোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সেই মানুষগুলোকে কী প্রতিদান দিচ্ছি আমরা? ন্যায্য দাবীতে কারণ দর্শানোর নোটিশ?
শুধু ডাক্তার নয়, নার্স, মেডিকেল স্টাফ প্রত্যেকে এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সব দেশে করোনা মোকাবেলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেডিকেল টিমেরা। আর সেই যোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা কবজ তো সরবরাহ করা হচ্ছেই না ঠিকমত, উল্টো ধমকি ধামকি দিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। আজ এই মানুষগুলো হেরে গেলে, হেরে যাবে গোটা দেশ। তখন আমরা এই মহামারি লইয়া কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো?
আরও পড়ুন-