রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছিলেন জার্নি। রেসলিং এর উপস্থাপক, ক্যাসিনো ব্যবসা, টিভি শো এর উপস্থাপনা থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আসার যে গল্প, সে গল্প অনেকের কাছেই অজানা!

গত মেয়াদে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আসা 'ডোনাল্ড ট্রাম্প'কে নিয়ে যে পরিমাণ কথাবার্তা হয়েছে, সেরকম হয়নি আর কোনো প্রেসিডেন্ট কে নিয়েই। এরকম বর্ণময় চরিত্রও আর আসেনি কখনো হোয়াইট হাউজে। আমরা হয়তো তাকে নিয়ে জেনেছি তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে। কিন্তু  জন্মের পর থেকেই এই মানুষটি ছিলেন আগাগোড়া এক বৈচিত্র্যময় চরিত্র!

ব্যবসাক্ষেত্র থেকে রাজনীতির মাঠ, যাত্রাটা কী সহজ ছিলো মোটেও! 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাবা ফ্রেড ট্রাম্প ছিলেন বিশাল বিত্তশালী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। এদিকে মা মেরি ম্যাকলয়েড ছিলেন স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা। মেরি ম্যাকলয়েড একসময়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়। দেখা হয় ফ্রেডের সাথে। প্রেমের সম্পর্কে একসময়ে বিয়ে হয় ফ্রেড ও মেরির। তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থজন হলেন আমাদের  সবার পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্পের বাবা সবসময় চাইতেন, তার সন্তানেরা সবাই তার কোম্পানিতেই কাজ করুক। কায়ক্লেশে পরিশ্রম করে তারা কাজ করা শিখুক। পাঁচ সন্তানকে তিনি সেভাবেই বড় করছিলেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ছোটবেলা থেকেই বেশ দুষ্টু ছিলেন। ঘরের মানুষজন ডোনাল্ডের দুষ্টুমিতে যখন চূড়ান্ত ত্যক্তবিরক্ত, তখন তাকে ধরেবেঁধে পাঠিয়ে দেয়া হয় সামরিক একাডেমিতে। সেখানেই সামরিক শাসনে দিনযাপন করছিলেন ট্রাম্প!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ভাইয়ের ইচ্ছে ছিলো, তিনি পাইলট হবেন। তাই তিনি বাবার ব্যবসার হাল আর ধরলেন না। চলে গেলেন পাইলট হওয়ার জন্যে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন চলে এলেন সামরিক একাডেমি থেকে, শক্ত করে ধরলেন ব্যবসার হাল। এরমধ্যেই মারা গেলেন  বড় ভাই। বাবার ব্যবসার সাথে তিনি যুক্ত হলেন আরো দৃঢ়ভাবে। বাবার কোম্পানির নাম পাল্টে করলেন- ট্রাম্প অর্গানাইজেশন। বাবাকে অনুপ্রেরণা মেনে রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে তিনি নিয়ে গেলেন অন্যরকম এক উচ্চতায়। আগে তাদের রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ছিলো ছোট ছোট জায়গায়। সেখান থেকে তারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বাড়ি বানাতে লাগলেন। টক অব দ্য টাউন হয়ে গেলো 'ট্রাম্প অর্গানাইজেশন'।

গ্রান্ড হায়াত হোটেল, ট্রাম্প টাওয়ার, ট্রাম্প প্যালেস, ট্রাম্প ওয়ার্ল্ড টাওয়ার, ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলসহ আরো অজস্র ভবন নির্মান হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই যে তাদের রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ছিলো তা না। ইস্তাম্বুল, ফিলিপিনের মত জায়গাতেও নির্মিত হয় ট্রাম্প টাওয়ার। নির্মিত হয় মুম্বাইতেও। এখানেই শেষ নয় মোটেও। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে যুক্ত আরো প্রতিষ্ঠানও। ট্রাম্প মর্টগেজ, ট্রাম্প শাটল, অনলাইন ট্রাভেল ওয়েবসাইট- গো ট্রাম্প, ট্রাম্প রেস্তোরা, ডোনাল্ড ট্রাম্প ডলস... এগুলোও সবই তার কীর্তি!

ব্যবসায়ী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু এক্সপেরিমেন্টাল কাজও ছিলো। ক্যাসিনোর ব্যবসা, হোটেল ব্যবসাও করেছিলেন কিছু। রেসলিং ম্যাচের উপস্থাপকও ছিলেন। মিস ইউনিভার্স, মিস ইউ এস এ এবং মিস টিন ইউ এস এ সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকও ছিলেন তিনি, অনেক বছর ধরে। টিভি রিয়েলিটি শো'তেও ছিলেন তিনি। এনবিসি টেলিভিশনে 'দ্য অ্যাপ্রেনটিস' নামের এক রিয়েলিটি শো'র স্পন্সর তিনি ছিলেন। এবং উপস্থাপনাও করেছেন এই রিয়েলিটি শো'র দুই একটি পর্বের।

হুট করেই তার খেয়াল চাপে, তাকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে হবে। যদিও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তার মোটেও শক্তপোক্ত না। সারাজীবন তো ব্যবসাই করে গিয়েছেন। খেয়ালী মানুষ। হুট করেই ভাবলেন, রাজনীতিতে এলে কেমন হয়! এর আগে একবারই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে লড়াই করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ২০০০ সালে রিফর্ম পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে অংশও নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে বারাক ওবামার জন্ম আমেরিকায় কি না, এই আন্দোলনেরও বেশ সক্রিয় কর্মীও ছিলেন তিনি।

গত নির্বাচনের সময় এসে তার মনে হয়, এই দেশের একজন দক্ষ নেতা প্রয়োজন। তিনি নিজেকে ভাবলেন সেই দক্ষ নেতা। নেমে পড়লেন প্রচারণায়। যদিও সেই প্রচারণা ছিলো নানারকম বিতর্কে ভরা। কখনো প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটনকে আক্রমণ করেছেন, কখনো তার অডিও টেপ ফাঁস হয়েছে, কখনো বিস্ফোরক সব মন্তব্য করে ব্যাকফুটে গিয়েছেন... তবুও থামেন নি। 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' শিরোনামকে আঁকড়ে ধরে তিনি শেষপর্যন্ত জয়ীও হয়েছেন। যদিও এই জয় অনেকের চোখেই এসেছে বিস্ময় হয়ে।  অনেকেই বলেছে, আমেরিকার পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন এই জয়। তবে যেটাই হোক না কেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন সেটিই বড় কথা। যে মিশনে তিনি নেমেছিলেন, সেটিতে যে তিনি সফল, সেটাই বুঝতে পেরেছে গোটা বিশ্ব।

যৌবনে ডোনাল্ড ট্রাম্প! 

অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষজন মনে করেছিলেন, ক্ষমতায় হয়তো এসেছেন, কিন্তু এক বছরও টিকতে পারবেন না তিনি। কেউ কেউ তাকে ডেকেছে ভাঁড়। কেউ বলেছে, অপরিণত মস্তিষ্কের মানুষ। আমেরিকার ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসনের শঙ্কার মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাকে। কিন্তু সবকিছুকে থোড়াই কেয়ার করে ঠিকই চারটি বছর কাটিয়েছেন তিনি। এবং আগামী নির্বাচনেও তিনি রিপাবলিকানের মনোনীত প্রার্থী হিসেবেই মাঠে নামবেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনীতির মাঠে এক খেয়ালি বুড়ো। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন সব কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তা বলে তিনি চলে আসেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তিনি নেতা হিসেবে কতটা সফল বা দক্ষ, সে আলোচনা অবান্তর। সেটা সবাই জানেন। তবে ব্যবসায়ী থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়ার যে জার্নি... সে জার্নি মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়।

ট্রাম্পের ভক্তরা তাকে আদর করে ডাকে 'দ্য ট্রাম্প'। প্রশ্ন হচ্ছে, 'দ্য ট্রাম্প' এর মতন এরকম বৈচিত্র্যময় চরিত্র আর কখনো আসবে কী না হোয়াইট হাউজে, সেটি এক বড়সড় ভাবনার বিষয়। এই নির্বাচনে তিনি বাদ পড়ে গেলে নির্মল বিনোদনের এক উৎসকে নিশ্চিতভাবেই মিস করবে সারা বিশ্ব।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক এখানেই সফল!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা