যেই লোকটি করোনাকে থোড়াই কেয়ার করতেন প্রতিনিয়ত, তিনি নিজেই আক্রান্ত হলেন করোনায়। কিন্তু হলেন কীভাবে? আলোচনায় উঠে এসেছে হোয়াইট হাউজে আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানের কথা, যেখানে উপস্থিত বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক ছিল না, মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব...

ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'করোনা' হয়েছে, এ তথ্য আমাদের সবারই জানা৷ সত্যি কথা বলতে, মানুষজন খুব বেশি অখুশিও না বিষয়টিতে। 'করোনা' নিয়ে যেভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য তিনি করতেন, মাস্ক পরিহিত মানুষজনদের যেভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করতেন, সেটা ভালো লাগেনি কারো। সামাজিক নিরাপত্তার ধার না ধারা মানুষটির শরীরে রোগের সংক্রমণ আসা কে তাই অনেকেই ধরছেন 'উচিত শিক্ষা' হিসেবে।

অবশ্য, ট্রাম্পের করোনা-প্রাপ্তির পর বিস্তর গবেষণাও শুরু হয়েছে; ঠিক কোনখান থেকে ট্রাম্প আর কোভিড-১৯ মেলবন্ধনে এসেছেন তা নিয়ে। জল্পনাকল্পনা, গুজব, আলোচনা... সবই চলছে। তবে সবচেয়ে জোর গুজব চলছে যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে, তা হলো, গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নমিনির নাম প্রকাশ করার জন্যে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এ অনুষ্ঠানের পরপরেই প্রেসিডেন্টের করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়। তাই এ অনুষ্ঠানের দিকেই সন্দেহের আঙুল অনেকের।

২৬শে সেপ্টেম্বর আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকেই সম্ভবত আক্রান্ত হয়েছেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসে হয় এই অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে যারা এসেছিলেন হোয়াইট হাউজে, তাদেরকে প্রথমে বেসমেন্টের একটি ছোট্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হয় অতিথিদের সেখানে। এরপর আরেকটি ছোট জায়গায় যান তারা। সেখানে মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট একজনের কাছে 'সোয়াব' (করোনা পরীক্ষার জন্যে সংগ্রহকৃত নমুনা) জমা দিয়ে মূল অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন তারা।

এবং অভ্যাগতরা সেই অনুষ্ঠানে প্রবেশ করার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে কুশল বিনিময় করেন। জানা যায়, সামাজিক দূরত্বের ধার ধারেন নি কেউই। ঢিলেঢালা আলাপচারিতায় মগ্ন ছিলেন প্রায় সবাই। এই অনুষ্ঠান শেষের পরেই জানা যায়, ট্রাম্পসহ এই অনুষ্ঠানের অন্তত সাতজনের শরীরে ঢুকেছে করোনাভাইরাস।

ট্রাম্প ছাড়াও আরো যারা আক্রান্ত হলেন, তাদের মধ্যে আছেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, প্রেসিডেন্টের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হোপ হিকস,  দুই রিপাবলিকান সদস্য মাইক লি ও থম টিলিস, প্রেসিডেন্টের সাবেক উপদেষ্টা কেলিয়ান কনওয়ে। সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের নমিনি অ্যামি কনি ব্যারেট যেখানে পড়ান, সেই নটরডেমের প্রেসিডেন্টও করোনাভাইরাসে হয়েছেন আক্রান্ত।

মাস্কে বরাবরই তীব্র আপত্তি ট্রাম্পের! 

এ তো গেলো অনুষ্ঠানে আগতদের করোনা-প্রাপ্তির খবর। অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকের মধ্যেই আস্তে আস্তে দানা বেঁধেছে এই অসুখ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবচেয়ে কাছাকাছি থেকে কাজ করা  নিকোলাস লুনারের করোনা শনাক্ত হয়েছে সম্প্রতি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও করোনা'তে আক্রান্ত হয়েছেন সস্ত্রীক। হোয়াইট হাউজ প্রেস কর্পসের বেশ কয়েকজন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। হোয়াইট হাউসে বিতর্ক প্রস্তুতিমূলক সেশনগুলোর ক্যাম্পেইন ম্যানেজার বিল স্টেপিয়েনও আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়।

তবে এই ঘটনাটি অবশ্যই ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্যে এক শিক্ষা। 'করোনা'র তীব্র প্রকোপে আমেরিকার এমনিতেই বেহাল দশা। তারপরেও এই মহামারীকে অবজ্ঞা করার যে উন্মাসিক আচরণ, তা কমেনি লোকটির। অন্তত নিজেরও হয়েছে রোগটি, এই কারণেও যদি তার এই ছটফটানি কমে, তাও অনেক। সে সাথে এটাও শঙ্কার, করোনার ধাক্কা সামলে সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি আবার আগের সেই তোয়াক্কা না করার মানসিকতাতেই ফিরে যেতে পারেন। ভাবতে পারেন, আমাকে তো এ রোগ কাবু করতে পারলো না, আমার কীসের ভয়!

এই লোক কে নিয়ে বিপদ সবদিকেই! 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা