ডাক্তাররা নিজে করোনায় আক্রান্ত, তবু ফিরতে চান সেবায়
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সংকটাপন্ন অবস্থাতেও একজন 'ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়র'কে একটা আধুনিক অ্যাম্বুলেন্সের যোগান দিতে পারিনি আমরা। করোনার বিরুদ্ধে অসম লড়াইটাতে হেরে তিনি আজ পাড়ি জমিয়েছেন অন্য ভূবনে। তবু আমাদের ডাক্তাররা হাল ছাড়ছেন না।
রোগীদের টানা সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মাসুদ উস সামাদ। করোনা সন্দেহে তিনিসহ মোট ৪১ জনের নমুনা পাঠানো হয় ঢাকায়। শুধুমাত্র তারই করোনা পজিটিভ আসে। আক্রান্ত হওয়া নিয়ে তার বিন্দুমাত্র ভয় নেই। বরং তার মন খারাপ এজন্য যে তিনি রোগীর সেবা করতে পারছেন না। সুস্থ হয়ে আবারও ফিরতে চান রোগীর সেবায়। একাত্তর টিভিকে ফোনে বলছিলেন ডা. মাসুদ, ‘আমার সুস্থ হতে কয়েকটা দিন সময় লাগবে। আমাকে কয় টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে নাকি কী দেওয়া হবে, সেটা নিয়ে আমার হেডেক নেই। আমি যেদিন সুস্থ হব, সেদিন থেকেই আবার আগের মতো ডিউটি কন্টিনিউ করা শুরু করব।’
সরকারের স্বাস্থ্য বাতায়নে টেলিফোনে রোগীদের সেবা দিতেন ডা. রেনেসাঁ। তিনি কী করে করোনায় আক্রান্ত হলেন, বুঝতে পারছেন না। নিজের জন্য এতটুকু ভয় নেই তার, উদ্বেগ আত্মীয়স্বজনদের জন্য। বরং কবে ফিরবেন রোগীদের চিকিৎসায়, সেটিই মুখ্য তার কাছে।
গড়পড়তা এটাই বাংলাদেশের ডাক্তারদের মানসিকতা। শিক্ষাজীবনে একজন ডাক্তার হিপোক্রেটিক ওথ নেয় মানুষ সেবার। একজন সৈনিক যখন প্রশিক্ষিত হয়, তখন সে তড়পায় গুলি ছোড়ার জন্য। তেমনি একজন নতুন ডাক্তারও তড়পায় রোগীর চিকিৎসার জন্য। করোনার এই দুঃসময়ে জাতিকে ঠিকভাবে সেবা দেওয়ার জন্য তারা তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো চেয়েছে শুধু। আর এতেই আমরা বলছি, বাংলাদেশের ডাক্তাররা নাকি করোনার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে!
ডাক্তারদের সংগঠন বিডিএফ বলছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মাঝে বেশ কয়েকজনেরই বয়সজনিত জটিলতা আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহিপরিচালক বলেছেন, আক্রান্ত ডাক্তারদের জন্য রয়েছে কোটি কোটি টাকার প্রণোদনা আর বীমার ব্যবস্থা। সঙ্গে এও বলেছেন, আক্রান্তদের জন্য সর্বোচ্চটাই করবেন তারা। যদিও ইতিমধ্যেই আমরা দেখেছি স্বয়ং রাষ্ট্র কী আচরণ করেছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিনের সাথে।
সংকটাপন্ন অবস্থাতেও একজন 'ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়র'কে একটা আধুনিক অ্যাম্বুলেন্সের যোগান দিতে পারিনি আমরা। মানুষটা আকুতি জানিয়েছিলেন তাকে একটা আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স যোগাড় করে দিতে। না, আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স জোটেনি তার কপালে, তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনার কথাও কেউ ভাবেনি। ডা. মঈন ঢাকায় এসেছেন সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে করে, ভর্তি করা হয়েছিল কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। করোনার বিরুদ্ধে অসম লড়াইটাতে হেরে তিনি আজ পাড়ি জমিয়েছেন অন্য ভূবনে, যাওয়ার আগে দেখে গেছেন, সূর্যসন্তানদের প্রতি রাষ্ট্রের অসীম অবহেলার উৎকট এক নিদর্শন।
তবুও আমাদের ডাক্তাররা লড়ে যেতে চাচ্ছেন। আক্রান্তরা কর্মক্ষেত্রে ফিরতে চাচ্ছেন, রোগীদের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে চাচ্ছেন। পর্যাপ্ত পিপিই নেই, মাস্ক ধুয়ে ধুয়ে শুকিয়ে পড়তে হচ্ছে ডাক্তারদের। তবু ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়ররা হাল ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে নন। কারণ রোগীদের পাশে দাঁড়ানোটাই যে তাদের জীবনের ব্রত।
উন্নত দেশগুলোতে হেলথ ওয়ার্কারদের জন্য জনগণ নিজের ঘরের ব্যালকনিতে বা দরজার সামনে দূরত্ব বজায় রেখে হাত তালি দিচ্ছে একটা নির্দিষ্ট সময়ে, সকল মিডিয়া তা কভারেজ করছে। এই এপ্রিশিয়েশনটাও এক ধরণের সাপোর্ট, হ্যাঁ মেন্টালি সাপোর্ট। এই মহাবিপদের সময়ে ডাক্তার, নার্স কিংবা হাসপাতালের যেকোন কর্মীই সবচেয়ে কাছের মানুষ।
বরিস জনসন সুস্থ হবার পর তাকে সেবাদান কারী দু'জন নার্সের প্রশংসা করেছেন, একজন নিউজিল্যান্ডের জেনি আর আরেকজন পর্তুগালের লুইস। এই প্রশংসার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আর পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট ধন্যবাদ জানিয়েছেন, সাথে সাথে গর্ব করছেন নিজের দেশের নাগরিকদেরকে নিয়ে।
চলুন না, আমরা আমাদের ডাক্তারদের একটু অনুপ্রেরণা যোগাই!