১৯ বছরের তরুণীর ফাঁদে পরলেন মধ্যবয়সী ধনী প্রবাসী। আপত্তিকর ছবি তুলে হুমকি-ধামকি, টাকা উদ্ধারের চেষ্টা। অতঃপর?

গত বুধবার মালয়েশিয়া থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলেন মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক। ধনাঢ্য এই ব্যক্তির নানাবিধ ব্যবসা রয়েছে মালয়েশিয়ায়। বাড়ি ঢাকার পাশের একটা বড় জেলায়। 

সামাজিক অবস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা এই প্রবাসীর নাম, পরিচয় গোপন রাখতে চাই। তবু গল্পের প্রয়োজনে একটা নাম দিলে মন্দ হয় না। আপনারাই বরং একটা নাম কল্পনা করে নিন। 

করোনাকালে বিদেশ থেকে ঢাকার এয়ারপোর্টে নেমে তল্পিতল্পা বেঁধে যাকে কোয়ারেন্টিনে থিতু হওয়ার কথা, তিনি সেটা না করে উল্টো কল করলেন তারই পূর্ব পরিচিত ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীকে। কথা বলার এক পর্যায়ে তরুণী তাকে বাসায় দাওয়াত করলেন। রাজি হলেন প্রবাসী। তরুণীর নিমন্ত্রণে হাস্যজ্বল প্রবাসী গাড়ি হাঁকালেন রাজধানীর পল্লবী থানার ১২ নম্বর ব্লকের দিকে।

কী ভাবছেন? রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন?

ফাঁকা রাস্তায় এয়ারপোর্ট থেকে মিরপুরের পল্লবী পৌঁছাতে বেশি দেরি হয়নি। বাসায় পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই চারদিক থেকে অতিথিকে ঘিরে ধরলেন কয়েকজন অপরিচিত লোক। এরা কারা? তাহলে কি প্রতারক চক্রের কবলে পড়লেন এই প্রবাসী ব্যবসায়ী?

তরুণীর সাঙ্গপাঙ্গরা প্রথম চোটেই ব্যবসায়ীকে আটক করে তার কাছে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এটিএম বুথ থেকে তুলে নিলেন আরো ৮০ হাজার টাকা। বিমানবন্দর থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে না গিয়ে পরিচিত নারীর বাসায় "দাওয়াত খেতে" যাওয়ার খেসারত হিসেবে প্রথম ধাপেই এক লক্ষ টাকা বেরিয়ে গেল তার পকেট থেকে।

এ পর্যন্ত হলেও কথা ছিল। কিন্তু লোকটার কপালে আরো খারাপ কিছু অপেক্ষা করছিলো, সেটা হয়তো তিনি নিজেও ভাবতে পারেন নি। 

টিনেজার তরুণী ও তার চারজন সাঙ্গপাঙ্গ মিলে জিম্মিকে চাপ দেওয়া শুরু করলেন। তাদের আরো ৫০ লক্ষ টাকা চাই। ফাঁদে পড়ে বোকা বনে যাওয়া এই ব্যবসায়ী তবু বেঁকে বসলেন। তিনি আর টাকা দিতে পারবেন না। 

কিন্তু যতই শক্তি থাকুক, ফাঁদে আটকে পড়া বাঘও শিকারীর কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে যায়। তমালিকার অতিথিরও একই অবস্থা হলো। 

এবার অতিথিকে পাশে রেখে বিভিন্ন কায়দায় ফটোসেশন করা হলো। ক্যামেরায় তার সাথে বন্দী হলেন তারই হোস্ট সেই লাস্যময়ী! বলা বাহুল্য ছবিগুলোর ভদ্র সমাজে প্রদর্শিত হওয়ার অযোগ্য ছিলো। শুধু তাই নয়, প্রবাসীকে বাধ্য করা হলো সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর করতে। তার মানে কি এই ব্যবসায়ীকে নতুন ফাঁদে আটকানো হলো?

এবার মুক্তি দেওয়া হলো জিম্মিকে। যাওয়ার আগে তাকে শাসিয়ে বলা হলো এই কাহিনী পুলিশকে বলে দিলে কঠোর পরিণতি বরন করতে হবে। ফাঁস করে দেওয়া হবে আপত্তিকর ছবি। 

পুলিশী জীবনের অভিজ্ঞতা বলছে সামাজিক অবস্থান ও পারিবারিক সম্মানের কথা চিন্তা করে এমন ১০ টি ক্ষেত্রের ৯ টিতেই ভিকটিম জিম্মিকারীদের কথামতো চুপচাপ থেকে নীরবে সর্বস্ব তুলে দেন প্রতারক চক্রের হাতে। এই নীরবতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে কয়েকজন ফালতু লোক দিনের পর দিন জিম্মিকে শোষণ করে যায় কিন্তু মালয়েশিয়ান এই প্রবাসী তাদের ব্যতিক্রম। তিনি ঠিকই পুরো ঘটনা বর্ণনা করে অভিযোগ করলেন ডিএমপির পল্লবী থানায়। মামলা রুজু হলো। 

পুলিশ তড়িৎ পদক্ষেপ নিলেন। থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ সজিব খান ও তাঁর টিমের সদস্যরা অভিযান করে আটক করলেন "দাওয়াত চক্রের" মূল হোতা রাশেদ (৩০), তরুণী হোস্টসহ ঘটনার সাথে জড়িত চারজনকে। 

পুলিশ রাশেদের কাছ থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোন, ১০০ টাকার দুইটি সাদা স্ট্যাম্প, নগদ পাঁচ হাজার টাকা, আসামির মোবাইল ফোনে তোলা আপত্তিকর ছবিসহ মোবাইল সেট উদ্ধার করেন। পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান পিপিএম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিষয়টি স্বীকার করেছে। তিনি জানান, এই প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অনেক মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। তাদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।

এই ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন "দাওয়াত চক্রের" হাতে পড়ে সর্বস্ব হারানোর ঝুঁকিতে না পড়েন। 

প্রায়ই শোনা যায় ধনী এই ব্যবসায়ীর মতো অনেকেই জিম্মিকারীদের হাতে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসে গেছেন। এসব ক্ষেত্রে ভিকটিমের উচিৎ হুমকি ধামকিতে ভয় না পেয়ে দ্রুত পুলিশকে জানানো। আপনার ন্যায় বিচার নিশ্চিতে পুলিশ সদা তৎপর।

তথ্যসূত্র: ডিএমপি নিউজ 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা