আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ব্যানার লাগিয়েছে রমনায়, সেই ব্যানারে শোভা পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি!
একুশে ফেব্রুয়ারী বা ছাব্বিশে মার্চ এলে আগে আশেপাশে ক্যামেরার চোখ আর মাইকের বুম চোখে পড়তো বেশি। লোকজনকে ধরে ধরে জিজ্ঞেস করা হতো আজ কোন দিবস, সাত বীরশ্রেষ্ঠের নাম কি- মোটামুটি বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি টাইপের একটা ব্যাপার। সেসব প্রশ্নের জবাব যারা দিলে পারতো না তাদের ভিডিওগুলোই বেছে বেছে প্রচার করা হতো, ফেসবুকে নানা রঙের ক্যাপশন সহ ভাইরাল হতো সেগুলো।
বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে যে ছেলেটা ঘুরতে বেরিয়েছে, কিংবা পার্কে যে ভদ্রমহিলাটি বৈকালিক ভ্রমণে এসেছেন, ক্যামেরা ভীতির কারণে তারা সাত বীরশ্রেষ্ঠের নাম মনে না রাখতেই পারেন, ছাব্বিশে মার্চ স্বাধীনতা দিবস না বিজয় দিবস এই প্রশ্নের উত্তরটাও গুলিয়ে ফেলতে পারেন- মেনে নেয়া গেল। কিন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতো বড়সড় একটা সরকারী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি দিয়ে ব্যানার বানিয়ে সেটা ঢাকা শহরে টানিয়ে দিয়েছে- এতটা তো মেনে নেয়ার মতো নয়!
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর একটি ব্যানার লাগানো হয়েছিল রমনায়। সেই ব্যানারে ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের পরিবর্তে মহান একাত্তরের শহীদ সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যানারের ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় সমালোচনা, তড়িঘড়ি করে পরে সেই ব্যানার সরিয়ে নেয়া হয়েছে, কিন্ত ছবি তো আর সরিয়ে নেয়া যাবে না।
ব্যানারটির ওপরে লেখা ছিল- ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২০’, তার নিচে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর ছবি। আর তাদের ছবির নিচে লেখা- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। তার নিচে মোটা হরফে লেখা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ব্যানারের ওপরের ডান কোণে মুজিববর্ষের লোগো এবং বাম পাশে ওপরে ও নিচে ডিএমপির দুটি লোগো ছিল। ডিএমপির তরফ থেকে স্বীকার করা হয়েছে যে, এগুলো লাগানো হয়েছিল, তবে পরে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই ভুল কীভাবে হলো সেটাও নাকি তারা খতিয়ে দেখছেন।
কিন্ত এগুলো তো কোন ছোটখাটো ভুল নয়। হুট করে জিজ্ঞেস করলে হয়তো ছাব্বিশে মার্চ বিজয় দিবস উত্তর দিতে পারে কেউ, কিন্ত ডিএমপির মতো একটা প্রতিষ্ঠান কীভাবে এমন শিশুতোষ ভুল করে? ক্লাস ওয়ান-টুয়ের একটা বাচ্চাও তো এখন সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি দেখলে চিনতে পারে, অথচ ডিএমপির কেউ এত বড় ভুলটা নোটিশ করলেন না?
ধরা যাক ব্যানার ছাপানোয় ডিএমপির হাত ছিল না, প্রেস ভুল করেছে। কিন্ত সেগুলো বিভিন্ন পয়েন্টে লাগানোর আগেও কি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কেউ তদারকি করতে এলেন না? কোন ভুলচুক হচ্ছে কীনা- সেটা জানার জন্যে তাহলে ফেসবুকে সমালোচনা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাটাই তাদের নীতি? ডিএমপির এই ভুল কি ভাষার জন্যে প্রাণ দেয়া শহীদদের জন্যে অপমানসূচক নয়?
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এদেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিষ্ঠান। দেশের ইতিহাস আর গৌরবোজ্জ্বল অতীত নিয়ে তারাই যদি এমন উদাসীনতার পরিচয় দেয়, বাদবাকীরা কী করবে আর?