এই ঘটনার পর অনেককিছুই আর আগের মতো থাকবে না...
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
'গ্রুপস্টাডিতে মাইয়া মানুষ গেছে কেন?' 'পোলামাইয়া একসাথে গেলে এমনই হয়!' কিংবা 'মাইয়াটা টাইট কোন কাপড় পরছিল মনে হয়'- বলা মানুষগুলো কবে থামবে, সেটা আমার জানা নেই। জানা হবেও না সম্ভবত...
একজন শিক্ষক হিসেবে যখন দেখতে পাই গ্রুপ স্টাডির কথা বলে নিজের ছাত্রের বয়সী এক ছেলে ধর্ষণ করে কাছাকাছি বয়সের এক ছাত্রীকে মেরে ফেলছে, তখন আমার খুবই অসহায় লাগে। এই ঘটনার আফটার ইফেক্ট যে কী পরিমাণ ভয়াবহ হবে, সেটা আমি সহজেই অনুমান করতে পারি।
ওভার প্রোটেক্টিভ যেসব বাবা মায়ের সাথে আমার বেশিরভাগ সময় কথোপকথন হয়, যাদেরকে আমি কিছুটা নমনীয় হতে বলি নিজের বাচ্চাদের প্রতি- তারা এবার আমার দিকে চোখ কটমট করে তাকাবেন। এই ঘটনার পর তারা ওভার টু দি পাওয়ার ১০০ টাইমস প্রোটেক্টিভ হবেন। যে মেয়েটা হয়ত মাসে একবার ফ্রেন্ডের বাসায় যেত, এবার ৬ মাসেও তাকে একবার যেতে দেবে কিনা সন্দেহ।
শুধু মেয়ে না, ছেলেদের বেলাতেও হবে বা হচ্ছে। অলরেডি কয়েকজন ছাত্র বলেছে- স্যার, আব্বু বলসে বিকালে ধানমন্ডি লেকে যাওয়াও বন্ধ এখন থেকে। ছাদে যাইতে বলসে। সেখানে না গেলে বলসে ঘরে বসে পাবজি খেলতে।
এসব কি সমাধান? না। তাহলে সমাধান আসলে কী? আমিও সম্ভবত জানিনা। তবে কেন যেন মনে হয় দিনশেষে দায়টা অভিভাবকদের ঘাড়েই বর্তায়। বাচ্চাদের হাতে ভাল গল্পের বই দেই না আমরা, তাদেরকে শিল্পকলায় নাটক দেখাতে নিয়ে যাই না, গেলেও এক ছাতার নিচে দেড়শ ছবি তুলে সেখান থেকে বেছে সবচেয়ে ভালো ছবিটা ফেসবুকে আপ দিয়ে ক্যাপশন দেই "ক্যান্ডিড", ভাল একটা সিনেমা নিয়ে তাদের সাথে আলাপ নাই, ভাল একটা বই নিয়ে আলাপ নাই, প্রোপার সেক্স এডুকেশন নিয়া আলাপ নাই। মূল্যবোধ তৈরি করার দায় মোবাইলের উপরে অর্পণ করে আমরা আনন্দে আছি।
কেউ সারাক্ষণ শার্লক হোমসের মত পেছনে লেগে আছি, আবার কেউ একেবারেই খোঁজ রাখছি না। টার্মিনেটর টু দেখার বয়সে বাচ্চারা গেম অফ থ্রন্স দেখছে তাও কিছু "বিশেষ" দৃশ্য দেখার জন্য, সিরিজের মূল ব্যাপারটা ধরার জন্য না- সেদিকে গার্ডিয়ানের ভ্রূক্ষেপ নেই। "আমার সন্তান ইংরেজি সিরিজ দেখে স্পিকিং আর লিসনিং শিখতেসে"- এই ভেবে আপ্লুত হতে দেখেছি বহু গার্ডিয়ানকে। অথচ তারা যে বোকার স্বর্গে বাস করছেন, সেটা যখন বুঝতে পারেন ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
উল্টোটাও দেখেছি। বাবা-মা খুবই ফ্রেন্ডলি, আবার শাসনের সময় শাসনও করছেন- এরকম গার্ডিয়ানের ছেলেমেয়েকেও নষ্ট হতে দেখছি চোখের সামনে। চেষ্টা করেছিলাম বোঝানোর, শিক্ষক হিসেবে। কিন্তু যে বয়সে টিচারের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারতাম না, সে বয়সের ছেলেমেয়েকে যখন বলতে শুনি- স্যার, আপনি আমার পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করবেন না- তখন চেনা পৃথিবীকে খুবই অচেনা লাগে আমার। মনে মনে আক্ষেপের সাথে বলি- দিস ইজ নট "ফেয়ার"।
যে গ্রুপ স্টাডিতে আসলেই পড়াশোনা হত, একে অপরকে সাহায্য করা হত- সেটা হয়ত এখন আর হবে না। ধানমণ্ডি লেকের সামনে হাতে হাত রেখে কম বয়সের যেসব প্রেমিক-প্রেমিকা সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা করত, প্রেম শব্দটা থেকেই হয়ত তাদের বিশ্বাস চলে যাবে। নিজের বিশ্বস্ত সন্তানকে বিশ্বাস করা অভিভাবকদের বিশ্বাসের সাম্রাজ্য যেন ধ্বংস না হয়, সেক্ষেত্রে নিজেদের চোখজোড়াকে হয়ত তারা সিসিটিভি ক্যামেরা বানিয়ে ফেলবেন। এতে হয়ত অনেক পজিটিভ ফলাফল হবে ভেবে দিনশেষে অনেকেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন। আমার জানা আছে এগুলো।
তবে দিনশেষে- গ্রুপস্টাডিতে মাইয়া মানুষ গেসে কেন? পোলামাইয়া একসাথে গেলে এমনই হয়! মাইয়াটা টাইট কোন কাপড় পরসিল মনে হয়- বলা মানুষগুলো কবে থামবে, সেটা আমার জানা নাই। জানা হবেও না সম্ভবত।