“আগার ফেরদৌস বে-রোহী যামীন আস্ত্। হামীন আস্ত্, হামীন আস্ত্, হামীন আস্ত্।” মোঘল বাদশা জাহাঙ্গীর কাশ্মীরের সৌন্দর্যে এতোটাই বিমোহিত ছিলেন যে, কাশ্মীরকে পৃথিবীর স্বর্গ বলে স্তুতি করেছেন এই উক্তিটির মাধ্যমে! যার মানে হচ্ছে, পৃথিবীতে যদি স্বর্গ থেকে থাকে তবে তা এখানে, এখানে, এখানে।
এই ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে তা-ই ভ্রমণপিপাসুরা যেতে উদগ্রীব থাকবেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কী-ই-বা আছে! আমাদের দেশ থেকেও আজকাল অনেকেই কাশ্মীরে যাচ্ছেন, স্ববান্ধব, পরিবার পরিজন নিয়ে। সেসব ছবিতে লাইক, রিয়েক্ট দিতে দিতে আমরাও কেউ কেউ মনে মনে ভাবি, সুযোগ হলে একবার আমরাও.....
কাশ্মীরে বাংলাদেশী মানুষের যাওয়া খুব আচানক কোনো ঘটনা না। কিন্তু, আমি অবাক হয়েছি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দৃশ্য দেখে। ঢাকা মেট্রো ল ১৮-০২৪১ নাম্বারপ্লেট লাগানো একটি বাইকের ছবি দেখে। লাল রঙ এর পালসার বাইক, কাশ্মীরে যার নাম্বার ঢাকার! কীভাবে সম্ভব? বাইক নিয়ে কেউ কাশ্মীর গিয়েছে এটিই সত্যিই একটি ভিন্নধর্মী ঘটনা, হরহামেশাই তো আর এ ধরণের ঘটনা চোখে পড়ে না, পড়বে না।
আমার ভিতরে তৃষ্ণা জেগে উঠলো। বাইক নিয়ে কী করে ভারতে গিয়েছেন মানুষটা জানতেই তার সাথে কথা বলা! মানুষটার নাম মোঃ সাজেদুর রহমান। সরকারি একটি চাকুরি করেন। সুদর্শন এই মানুষটি নিজেকে একজন রাইডার বলতে ভালবাসেন, যার প্রিয় শখ ট্রাভেলিং! কীভাবে ভ্রমণপিপাসায় কাতর হয়েছিলেন তিনি?
“ছোট বেলা থেকেই আমি ভ্রমণপিপাসু। প্রত্যেক সপ্তাহে আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে হবেই। এটাই ছিল বাবা মার কাছে আমার একমাত্র আবদার। তারপর নবম শ্রেণীতে উঠে পরলাম Jules verne’s এর “Around the world in eighty days”। বইটি পড়ে খুবই ভালো লাগে, মনে হচ্ছিলো এখনই ঘর থেকে বের হয়ে যাই। ২০০৮ থেকে ঘুরাঘুরি শুরু হয় বন্ধুদের সাথে, ২০০৯ এ কেওক্রাডং ঘুরে এসে ঘুরার প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশটা যে এত সুন্দর আগে জানতামই না। তারপর ২০১৩ সালে শন পেন ও বেন স্টিলার অভিনীত “The Secret Life of Walter Mitty” মুভিটি দেখার পর ঘুরার স্বপ্নটা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। মুভিটার একটা জিনিস খুবই তাড়িত করে, যে কিনা কোন দিন ঘরের(দেশের) বাইরেই যায়নি সে-ই হঠাৎ করে একদিন বেড়িয়ে পড়ছে অজানার উদ্দেশ্য।”
তার কথা শুনে ভালো লাগলো। ভ্রমণ পছন্দ করে এমন যেকোনো মানুষকেই আমার আসলে ভালো লাগে। কারণ, তাদের কাছে অনেক অনেক গল্প। গল্পের নেশা মানুষের আদিম নেশার একটি! যাই হোক, মুভিটির একটি উক্তি আমারও ব্যক্তিগতভাবে খুবই পছন্দ। “To see the world, things dangerous to come to, to see behind walls, draw closer, to find each other, and to feel. That is the purpose of life.”
কিন্তু, সিনেমার নায়করা যেভাবে ডিরেক্টরের ইশারায় দেশ থেকে বিদেশ চলে যান, প্রডিউসারের টাকায় ঘুরেন দিনের পর দিন,বাস্তব কী আর তেমন! বাস্তবে, ভিসা অফিসে গিয়ে ভিসা অফিসারের সামনে খুব বিনীত হয়ে বুঝাতে হয়, তোমার দেশে গিয়ে আমি আস্তানা গেঁড়ে ফেলবো না, ঘুরা শেষ হলে আবার সুবোধ বালকের মতো দেশে ফিরে আসবো। তারপরও, ভিসা অফিসারদের বিশ্বাস করানো যায় না। তারা সবসময় সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে, উন্নয়নশীল দেশের লোকদের। সাজেদুর রহমানেরও তেমন একটা অভিজ্ঞতা আছে।
এই সেই মোটরসাইকেল
২০১৪ সালের শেষ দিকে একবার তিনি ঠিক করেন আমেরিকায় যাবেন ঘুরতে। বন্ধু-বান্ধবদের কাছে। কিন্তু ভিসা অফিসার বিশ্বাস করলেন না। যুবক ছেলে, অ্যামেরিকায় যাবে ঘুরতে, এও সম্ভব! তিনি সাজেদুর রহমানের সাদামাটা পাসপোর্ট হাতড়ে মাতড়ে দেখতে থাকলেন। তার উপর সাজেদুর রহমান অবিবাহিত। ভিসাটা আর দিল না।
কিন্তু তা-ই বলে ভ্রমণ তো আর বন্ধ দেয়া যাবে না। তিনি নিত্যনতুন প্ল্যান নিয়ে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকলেন। সবসময় ভিসা প্রধান বাধা না। যেমন একবার তো থাইল্যান্ড আর মালয়েশিয়ার ভিসা পেয়েও পরে আর যাননি। ২০১৬ সালের মার্চের দিকে দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো সলো ট্রাভেল করেন।
কাশ্মীরে যান সে মাসে প্রথমবারের মতো। সলো ট্রাভেলের ভিন্ন একটা স্বাদ আছে। ওইবছরই জুলাইতে আবারও বেরিয়ে পড়েন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও চীনের উদ্দেশ্য। সেবারের ভ্রমণটা ছিলো এক্সপেরিমেন্টাল। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, কীভাবে সবচেয়ে কম খরচে দেশের বাহিরে ঘুরা যায়! ৮ দিনে ৪ দেশ মিলিয়ে ঘুরতে তার খরচ হয়েছিলো মাত্র ৬৫৮ মার্কিন ডলার। যার মধ্যে ৪০০ ডলারই অবশ্য প্লেনের টিকিট ভাড়া। বাকি ২৫৮ ডলারে থাকা খাওয়া সব কিছু কাবার!
খরচ বাঁচাতে থাকতেন হোস্টেলে, কোনো কোনো রাতে তার রাত্রি যাপন হতো এয়ারপোর্টে। টম হ্যাংকসের “টার্মিনাল” মুভি দেখে এয়ারপোর্টে থাকার ব্যাপারটা মাথায় আসে তার। এতো কিছুর মধ্যে একটা ব্যাপার তার মাথায় ঘুরছিলো! অফিস থেকে এসে প্রায়ই তিনি বসে বসে ইউটিউব দেখতেন। ইউটিউবে দেখতেন ইউরোপ, অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সহ আরও অন্যান্য দেশের মানুষ গাড়ি, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল নিয়ে কী সুন্দর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
তিনি চিন্তা করলেন, বাইক নিয়ে তিনিও যাবেন দেশের বাইরে ঘুরতে, কাশ্মীরে। বাইক নিয়েও তার একটা গল্প আছে। কিছু টাকা ধার দেনা করে ২০১৫ সালে ১২হাজার কিলোমিটার চলা সেকেন্ডহ্যান্ড বাইকটা কিনেছিলেন! যদিও বাইকটি দেখে ভীষণ খুশিই হয়েছিলেন। দেখতে একদম চকচকে নতুনের মতোই ছিলো! দিনে দিনে এই বাইকটা তার খুব প্রিয় হয়ে যায়। সাজেদুর রহমান কি তখন জানতেন, এই বাইকটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় একটি ইভেন্টের সাথে জড়িয়ে যাবে!
বাইকে করেই তিনি আর তার বউ পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন! পালিয়ে বিয়ে করলে যা হয়, পালিয়ে বেড়াতে হয়। এখানে সেখানে থাকতে হয়। বাইক থাকাতে সুবিধাই হয়েছিলো তখন! বাইক কিনার পর প্রথম হাইওয়েতে উঠেছিলেন বউকে নিয়েই, মৌলভীবাজারে ঘুরতে যাওয়ার সময়! যিনি বাইকে করে পালিয়ে বিয়েই করে ফেলেছেন, তার কাছে হাইওয়ে তেমন কী আর ভয়ের! সাহস করে নেমে পড়লেন রাস্তায়।
কাশ্মীরেও এই যুগলকে দেখা যাবে বাইকে করে ঘুরে বেড়াতে। বাইকের নাম্বার ঢাকা মেট্রো ল... কিন্তু, কাশ্মীরে যাওয়া কি এতোই সহজ? তাও আবার বাইক নিয়ে? দিনের পর দিন সময় নিয়ে তিনি পরিকল্পনা করতে থাকলেন।
“দেশের বাইরে যাবো বাইকে, কিন্তু কোথায় যাব তা জানতাম না। আব্দুল মোমেন রোহিত ভাই ও আবু সাইদ ভাইয়ের “খারদুংলা পাস” জয়ের অভিযান দেখে খুবই অনুপ্রাণিত হই। তারপর থেকেই যখনই রোহিত ভাই ও সাইদ ভাইয়ের সাথে দেখা হত, তাদের মুখ থেকে গল্প শুনতাম। আর ২০১৬ সালে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং চীনের সলো ট্রাভেলিং এর অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাবো চিন্তা করেছি। অফিস থেকে ফিরেই ইউটিউব আর গুগল ম্যাপ নিয়ে বসে থাকতাম। প্ল্যানিং করা হয় কোথায় কোথায় যাব, প্ল্যান ছিল নেপাল,ভারত, ও ভূটান যাওয়ার তো সেই অনুযায়ী সব কিছুর খবর আগে থেকেই নিতে থাকি।”
খবর অনেক নিয়েছেন। কিন্তু, বাইক নিয়ে যাওয়ার আগে যে অনেক ফর্মালিটিজ পালন করতে হয়। কত জায়গায় দৌড়াদৌড়ি, অনেক অনুমতি নেয়ার ব্যাপার স্যাপার। জিজ্ঞেস করলাম, দেশের বাইরে বাইক নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা কী আসলে? তিনি জানান-
“নিজস্ব বাইক অথবা গাড়ি নিয়ে যেতে হলে কারনেট হলেই চলে। Carnet de Passages en Douane (CPD) হচ্ছে কাস্টমস ডকুমেন্ট যা গাড়ি, মোটরসাইকেল, দামি কোন বস্তুর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমদানি রপ্তানী ও পুনঃ আমদানির জন্য গ্যারান্টি হিসেবে কাস্টমসে কাজ করে।
তৈরী দরকারী সব কাগজপত্র, পাসপোর্ট
এক কথায় বলা যেতে পারে এটি আপনার ভ্যাহিক্যাল অর ভ্যালুএবল গুডস এর জন্য একটি পাসপোর্ট। কিন্তু ২০১৪-২০১৫ সালে বাংলাদেশে এই কারনেট সুবিধায় অনেক প্রভাবশালী বিত্তবান, সরকারের অনেক ক্ষমতাবান নেতা ও তাদের সুযোগ্য সন্তানের আবদারে অনেক দামি দামি বিএমডব্লিউ, মারসিডিজ বেঞ্জ, রেঞ্জ রোভার, পোর্শ, জাগুয়ার সহ আরো অনেক গাড়ি এই সুবিধাটি ব্যবহার করে শুল্কমুক্ত করে এনে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাকি দেয়। তারপর থেকেই এখন কারনেট সুবিধা বাংলাদেশ সরকারের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মানতে চায় না।
যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি নীতি ২০১৫-২০১৮ এর ২.৬.৪ এর ধারাতে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে “কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অথবা অন্য কোন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত Carnet De Passage অথবা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিলকৃত উপযুক্ত ইনডেমনিটি বন্ডের বিপরীতে পুনঃ আমদানীর শর্তে কোন ব্যক্তি বিদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্য যানবাহন সঙ্গে নিতে পারবেন”।
তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি অনাপত্তি পত্র অথবা অনুমতি প্রয়োজন। তারপর তাদের অনুমতি হলেই কারনেট করতে পারবেন। আর কারনেট করতে সাধারনত ফি লাগে ১২০০০ টাকা আর আপনার গাড়ি অথবা বাইকের জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি লাগবে। সেই পরিমাণটা আপনার গাড়ি অথবা বাইকের দামের উপর নির্ভর করবে। তারপরও অটোমোবাইল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সেটা নির্ধারন করতে পারবেন। ব্যস এই ব্যাপারগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর বর্ডারে আপনাকে একটি ৩০০ টাকার ইনডেমনিটি বন্ড দিয়ে তারপর যাওয়া লাগবে। ভারতীয় কাস্টমসে শুধু মাত্র আপনার কারনেটটি দেখতে চাইবে।“
এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে তাকে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে। তবে অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য এসব কষ্ট স্বীকার করা জায়েজ আছে। তিনি ধৈর্য্য নিয়ে এই পুরো প্রক্রিয়ার সব কয়টা কাজ সম্পন্ন করেছেন। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সাড়ে ১১টার দিকে ভারতের মাটিতে যখন মোঃ সাজেদুর রহমানের মোটরসাইকেল তথা ঢাকা মেট্রো-ল এর চাকার ছাপ পড়লো, তিনি সাথে সাথেই জানতে পারলেন সেই বর্ডার (বুড়িমারি) দিয়ে শুধু বাংলাদেশ থেকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যাতায়াত করে! শুনে নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য ভিআইপি ভিআইপি লাগছিলো তার। তিনি বললেন,
“যখন আমি এবং আমার মোটরসাইকেলটি বাংলাদেশের বর্ডার ক্রস করে ভারতের মাটিতে তখনই আমি অনুভব করি যে আমার এই বারের ট্যুর সার্থক হয়ে গেছে। ওইসময়টার অনুভুতি আসলে বলে বুঝানো যাবে না যে কী রকম একটা আনন্দ মনের মধ্য কাজ করে!”
ট্যুরের স্মৃতি এখনো টাটকা তার মস্তিষ্কে। এই স্মৃতিগুলো হয়ত লাইফটাইম এক্সপিরিয়েন্স হয়েই থাকবে তার! এখনো মনে পড়ে, শিমলাতে প্রচন্ড ঠান্ডার দিনের কথা। সেই সাথে রিনিঝিনি বৃষ্টি ঝড়ছে অবিরাম। কোথাও দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে গেছে মেঘের নিচে। মেঘগুলি গাঁ ঘেষে চলে যাচ্ছিলো! সে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা।
জাম্মুতে গিয়ে টের পেলেন অন্য আবহাওয়া। দিনের বেলা গরম থাকলেও রাতের বেলা কিছুটা ঠান্ডা। ওয়েদারের আমূল পরিবর্তন হচ্ছে হুট হাঁট। জাম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ের চেনানি থেকে একটা টানেল আছে প্রায় ৯ কিলোমিটার লম্বা সোজা একটা টানেল। টানেলটি ক্রস করার সময় শরীর যা ঠান্ডায় শিউরে উঠেছিলো! এতো ঠান্ডাও হয়! আর বানিহাল এর জহার টানেলটি ক্রসের পর তো ঠান্ডার চৌদ্দ গোষ্টিকে দেখে ফেলেছেন তিনি! একবারে চলে আসে। এইসব আবহাওয়ায় বাইক চালিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তার আজীবন মনে থাকবে।
কাশ্মিরের পথে সস্ত্রীক সাজেদুর রহমান
বাইক নিয়ে হুটহাঁট ঘুরতে চলে যাওয়া আজকালকার ট্রেন্ড। এবছর বিভিন্ন কোম্পানি বাইকের দাম অনেক কমিয়েছে। তাই তরুণদের অনেকেই বাইকের প্রতি ঝুঁকছে। সাজেদুর রহমান বললেন,
“বাইক রাইডিং এর মাধ্যমে একজন রাইডার যেভাবে প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করতে পারে যেভাবে বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে মিশে যেতে পারে তা সত্যি অসাধারণ!
কিন্তু একজন ট্রাভেলার হিসেবে বাইক রাইডের সময় অনেক কিছুই মাথায় রাখতে হয়। এই যেমন ধরুন- আবহওয়া, ঐ স্থানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, দৈনন্দিন জীবন ধারনের খরচ কেমন, সহজ রুট প্ল্যান, আর দেশের বাহিরে হলে তখন বিপদে পরলে বা পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে পরবর্তী করনীয় কী কী, নিজের দেশের এম্বাসী/হাইকমিশন এর সাথে কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে- এই সবই মাথায় রাখতে হবে। আর সাথে যদি আপনার যানবাহন মানে মোটরবাইক অথবা গাড়ি থাকে তাহলে আপনার কিছু পার্টস ক্যারি করা অত্যাবশ্যকীয়। টায়ার পাংচার কীট, এক্সট্রা প্লাগ, ক্লাচ কেবল ও এক্সেলেরেটর কেবল এই জিনিসগুলি সাথে রাখা খুবই দরকার এবং সেই সাথে নিজেরই কাজের দক্ষতা থাকা উচিৎ।
গল্প শেষ প্রায়। শুধু তার কাছে একটি স্মরণীয় মুহুর্তের কথা জানতে চাইলাম। তিনি গল্পটা বললেন। বাংলাদেশে যেমন মোড়ে মোড়ে পুলিশ বাইক থামিয়ে মামলা দিয়ে ছেঁড়ে দেয়, ভারতেও এমন আছে। সেরকম একটা ঘটনা বললেন সাজেদুর রহমান-
আমার বউকে রিসিভ করতে দিল্লী এয়ারপোর্ট গিয়েছিলাম। ফ্লাইটের ল্যান্ডিং ছিল রাত ১টায়। আমার সাথে হিমানশু তিওয়ারী ভাই ছিলেন। উনার বাইকে হেড লাইট ছাড়াও অতিরিক্ত ২জোড়া ফগ লাইট ছিল। আমারটায় ছিল এক জোড়া। এয়ারপোর্টের চেক পোষ্টে আমাদেরকে থামতে হয় পুলিশের ইশারায়।
ইন্সপেক্টর: আপ জানতে হ্যায় ইয়ে যো লাইট আপনে ইউজ কিয়া ইয়ে সিটি মে এলাউড নেহি। ফিরভি আপনে কিউ ইউজ কিয়া? (আপনি জানেন? এই অতিরিক্ত লাইটগুলি শহরের মধ্য ব্যবহার করার নিয়ম নেই, তারপরও আপনি কেন ব্যবহার করছেন?)
তিওয়ারী: জী আপনে বিলকুল সাহি বোলা। দারাসাল বাত ইয়ে হে কি হাম যাদাতার হাইওয়ে পেই রেহতা হু। (জ্বী আপনি একদম ঠিক বলছেন। কিন্তু আমি বেশিরভাগ সময় হাইওয়েতেই চলাচল করি) তারপর আমার দিকে ইশারা করলেন ইন্সপেক্টর। বললেন, “ইয়ে ভি হাইওয়ে পে হি র্যাহতা হ্যায় অর ইনকা ঘার বার কুচ হ্যায়? (উনিও কি হাইওয়েতেই থাকে নাকি উনার ঘরবাড়ি নাই?)
তিওয়ারী: নেহী, ইয়ে বান্দা বাংলাদেশ সে আয়া হ্যায়। আজ ইনকা বিবি আরাহি হ্যায়, ইসিলিয়ে হাম উনকো লেনে আয়া হু। ( না উনি বাংলাদেশ থাকেন, উনার স্ত্রী আজকের ফ্লাইটে আসছে তাই আমরা উনাকে রিসিভ করার জন্য এসেছি)।
ইন্সপেক্টর: আচ্ছা। আপকা নাম কেয়া হ্যায়? আমি: মোঃ রহমান (বলার সময় বিদেশে সবসময় ফার্ষ্ট আর লাষ্ট ন্যামটাই বলি।)
ইন্সপেক্টর: ঠিক হ্যায়, ওয়েলকাম টু দ্যা ইন্ডিয়া স্যার জি। ইন্সপেক্টর আমাকে ওয়েলকাম করে তিওয়ারীর দিকে দৃষ্টি ফেরালেন। তিনি তার কন্সটেবলকে বললেন উনাকে ছেড়ে দিন, উনিতো আমাদের অতিথি। তিওয়ারী সাহেব আপনি লাইসেন্স নিয়ে এদিকে আসুন। ছোট্ট করে একটা চালান নিয়ে যান। আমি হাসতে হাসতে শেষ। বেচারা...