ডার্কসাইড হ্যাকার্স: হ্যাকিং করে লুট করা টাকা দান করে দেয় যারা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
তাদের ডাকা হচ্ছে 'একালের রবিনহুড' নামে। বড় বড় কোম্পানি থেকে হ্যাকিং এর মাধ্যমে আদায়কৃত টাকা তারা দান করে দিচ্ছে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায়। কিন্তু কেন? কী উদ্দেশ্য তাদের?
ছোটবেলায় রবিনহুডের গল্প তো নিশ্চয়ই পড়েছেন? বড়লোকের টাকা লুট করে গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেয় যে রবিনহুড, তার গল্পকে ভিত্তি করে সিনেমাও হয়েছে অগুনতি। সম্প্রতি সেই রবিনহুডেরই ডিজিটাল সংস্করণ পাওয়া গেলো যেন। একটা হ্যাকিং গোষ্ঠী হ্যাকিং এর মাধ্যমে পাওয়া টাকাপয়সাকে আবার দান করে দিয়েছে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার মধ্যে। এভাবেই আলোচনার শিরোনামে উঠে এসেছে তারা।
'ডার্কসাইড হ্যাকার্স' নামটি এরইমধ্যে হয়তো জেনে গিয়েছেন নেটিজেনরা। এই 'ডার্কসাইড হ্যাকার্স'রা সম্প্রতি করেছে এক অদ্ভুত কাণ্ড। হ্যাকিং এর মাধ্যমে নামীদামী কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে তারা হাতিয়ে নিয়েছে বেশ ভালো অঙ্কের টাকা। হ্যাকাররা টাকাপয়সা-নথিপত্র হ্যাক করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেটা অস্বাভাবিক, তা হলো- হ্যাক করার পরে হ্যাকাররা সেই টাকা নিজেদের কাছে রাখেন নি, দান করে দিয়েছেন দুটি দাতব্য সংস্থাকে। দশ হাজার ডলার বিটকয়েনের এই দানের রসিদও তারা ছবি তুলে দিয়েছেন ডার্ক ওয়েবের এক পোস্টে। এই ঘটনাই জাগিয়েছে চমক। সবাই অবাক হচ্ছে, এ কেমন হ্যাকার? টাকা নিয়েও নিজেদের কাছে রাখছে না, বরং বিলিয়ে দিচ্ছে?
যে দুটি দাতব্য সংস্থাকে তারা অর্থ দান করেছেন, তাদের নাম- 'দ্য ওয়াটার প্রজেক্ট' এবং 'চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল।' দ্য ওয়াটার প্রজেক্ট' সাব-সাহারান আফ্রিকায় সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করে। অন্যদিকে 'চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল' শিশুদের নিয়ে কাজ করে। ভারত, ফিলিপাইন, কলম্বিয়া, জাম্বিয়া সহ বেশ অনেক জায়গাতেই তাদের প্রজেক্ট আছে। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই দাতব্য সংস্থায় টাকা দেয়ার পর হ্যাকাররা বেশ আলোচনায় এলেও 'চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল' এর কর্তাব্যক্তিরা স্রেফ জানিয়ে দিয়েছেন, হ্যাকারদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই তাদের। তবে 'দ্য ওয়াটার প্রজেক্ট' এ বিষয়ে কী মনোভাব পোষণ করে, সেটি জানা সম্ভব হয়নি।
ডার্কসাইড হ্যাকাররা যে প্রক্রিয়ায় কোনো কোম্পানি থেকে টাকা অর্থাৎ বিটকয়েন আদায় করে, সে প্রক্রিয়ার নাম- র্যানসমওয়্যার। র্যানসমওয়্যার সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন না। এটা একটা ভাইরাস সিস্টেম। এই ভাইরাস কোনো একটা কোম্পানির আইটি সিস্টেমকে ততক্ষণ পর্যন্ত অচল করে দিতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত না মুক্তিপনের টাকা দেয়া হচ্ছে। ডার্কসাইড হ্যাকাররা এভাবেই বহু সংস্থা থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
হ্যাকিং করে প্রাপ্ত টাকা হ্যাকাররা দুই দাতব্য সংস্থাকে দান করেছে 'দ্য গিভিং ব্লক' কোম্পানির মাধ্যমে। গিভিং ব্লক কোম্পানি দাবি করে, তারাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যাদের মাধ্যমে ক্রিপটো-কারেন্সি দিয়ে অর্থ দান করা যায়। এবং তারা প্রেরকের ব্যাপারে খুব বেশি খোঁজখবর না নেয়ায়, খুব সহজেই হ্যাকাররা আড়ালে থেকে টাকা দান করতে পেরেছেন।
এই যে টাকা নেয়া ও সেগুলো দাতব্য সংস্থাগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া, এটা করে ডার্কসাইড হ্যাকাররা কী প্রমাণ করতে চাইছে, সেটি কারো কাছেই পরিষ্কার না। তবে হ্যাকারদের দাবী, তারা এই দানের মাধ্যমে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে চান। মানুষের উপকার করতে চান। তবে এভাবে একদলের ক্ষতি করে আরেক দলের উপকার করে তারা ভারসাম্য কীভাবে আনবেন, সে প্রশ্ন রয়েই যায়। তাছাড়া এই দানধ্যান তাদের লাইমলাইটে আসার স্টানবাজি কী না, সে সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
তবে এটাও ঠিক, এই ডার্কসাইড হ্যাকাররাই ইতিহাসের প্রথম হ্যাকার, যারা টাকা নিয়ে আবার সেই টাকা মানুষের মধ্যে বিলিয়েও দিয়েছে। এই দিক বিবেচনায় তারা সত্যিই স্বকীয়। তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী, এখন দেখার বিষয় এটিই।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন