সাইবার ক্রাইমের ভিক্টিম নারীরা এখন অনলাইনেই জানাতে পারবেন তাদের অভিযোগ। বাংলাদেশ পুলিশের নেয়া এই বিশেষ উদ্যোগের পুরো দায়িত্বে যারা থাকবেন, তারা সবাই-ই মহিলা। যে কারণে আশাবাদী হচ্ছি আমরা সবাই। 

প্রত্যেকটা ভালো জিনিসেরই কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এই যেমন সামাজিক মাধ্যমের কথাই ধরা যাক। কনসেপ্টটি এসেছিলো, আমাদের যোগাযোগকে দ্রুত করার জন্যে, সহজ করার জন্যে, সময় বাঁচানোর জন্যে। কিন্তু কী দেখছি? এই বস্তুটিই আমাদের সময় গিলে নিচ্ছে পুরোটা। দেশ ডিজিটাল হয়েছে। ভালো খবর। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চলে এসেছে সাইবার ক্রাইম, অনলাইন হ্যারাসমেন্ট, ফ্রড, ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে কমিউনাল ভায়োলেন্সের মতন ঘটনা। মাঝেমধ্যে তো এটাও মনে হয়, এই থ্রি-ফোর-ফাইভজি'র বদলে দেশ যদি সেই মান্ধাতার আমলে থাকতো, তাহলেই বেশ ভালো হতো৷ কিছু সহিংসতা তো কম হতো৷ বেঁচে যেতাম। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন, উদ্যোগ, সংস্কার আমাদের কতটুকু সুবিধে করেছে? কতটুকু মানুষ হয়েছি আমরা? 

দেশে সাইবার ক্রাইম বেড়েছে ক্যান্সারের চেয়েও দ্রুতগতিতে৷ এবং অবধারিতভাবেই সেখানে সিংহভাগ ভুক্তভোগী আমাদের মেয়েরা। বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, আইসিটি অ্যাক্ট, টেলি-কম্যুনিকেশন অ্যাক্ট পর্নোগ্রাফি কন্ট্রোল অ্যাক্ট... আইনগুলোর অধীনে এখন পর্যন্ত মোট সাত হাজারের কাছাকাছি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সে অভিযোগের বেশিরভাগই করেছেন নারীরা।

তবে সে সাথে এটাও ঠিক, ঠিকভাবে হিসেব করলে ও সবাই যদি অভিযোগ দায়ের করতেন, তাহলে এসব আইনের অধীনে মামলার সংখ্যা হতো বর্তমান সংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এদেশের নারীরা সর্বংসহা৷ এদের কাছে নিজের সম্মানের ভয় খুব প্রবল। এ ভয়ের কারণেই তারা সাইবার ক্রাইমের শিকার হওয়ার পরেও অধিকাংশ সময়ে চুপ করে ঘরের কোনে সেঁধিয়ে থাকেন। বের হন না। প্রকাশ করেন না সমস্যা। এতে করে মূলসমস্যা যেটা হয়, এই অপরাধী কীটপতঙ্গ'রা আস্কারা পায়। যথেচ্ছাচার করার সুযোগ পায়। তারা তো জানেই, কোনো অভিযোগ হবেনা, কোনো মামলা হবেনা, কোনো শাস্তি হবে না। তারা কেনই বা বন্ধনহীন-স্বাধীন-অপরাধী হবেনা? 

হয়রানির শিকার হলে যোগাযোগ করতে হবে এই নম্বরে

ঠিক এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আমরা বাংলাদেশ।পুলিশের কাছ থেকে দেখতে পাই এক অসাধারণ উদ্যোগ। বাংলাদেশ পুলিশ খুলেছে একটি পেইজ- পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ)। যেখানে যেকোনো নারী তাদের অনলাইন হ্যারাসমেন্টের ঘটনা জানাতে পারবেন পুলিশকে। হেল্পলাইন- ০১৩২০০০০৮৮৮ নাম্বারে ডায়াল করলেও পাওয়া যাবে সাহায্য।সে সাথে মেইল করাও যাবে এখানে- 

cybersupport.women@police.gov.bd

নিজের নাম, পরিচয় গোপন করেও চাইলে অভিযোগ দায়ের করা যাবে। এবং এই পেইজ, হটলাইন নাম্বার ও ইমেইলে যোগাযোগ করলে অভিযোগকারী নারী পাবেন আইনি সহায়তা, অভিযোগ দায়ের সংক্রান্ত তথ্য, সাইবার মিডিয়া বিষয়ক সচেতনতামূলক জ্ঞান। এবং এই পুরো বিষয়টি দেখবেন নারী পুলিশেরা। পুরো প্রসেসেই শুধুমাত্র নারীরাই যুক্ত থাকবেন। অভিযোগকারী নারী যাতে নিঃসঙ্কোচে কথা বলতে পারেন, সেজন্যেই এই ব্যবস্থা। 

বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা থাকবেন পুরো প্রক্রিয়ার তদারকিতে! 

সাধারণত সাইবার ক্রাইম বলতে আমরা যা বুঝি অর্থাৎ ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল, আপত্তিকর ছবি অনুমতি ছাড়াই অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া, মোবাইক নাম্বারে কল দিয়ে বিরক্ত করা, ইনবক্সে আপত্তিকর কথাবার্তা বলা... সবকিছুর প্রেক্ষিতেই আবেদন করা যাবে। এই উদ্যোগ অবশ্যই এদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন কিছু। যদি পুলিশের ঐকান্তিক আগ্রহ থাকে, যদি নারীরা ভরসা করে তাদের সমস্যা পুলিশ বাহিনীকে জানাতে পারেন, তাহলে আশা করা যায়, এই দুই শক্তির সম্মিলিত পথচলায় সমাজের বিষাক্ত ও নোংরা পরজীবীরা উৎপাটিত হবে সমূলে। এ বাংলাদেশ আবারো নারীদের বসবাসের উপযোগী হবে। 

সাধুবাদ জানাই এ উদ্যোগকে। প্রত্যাশা করি, এ উদ্যোগ সফল হবে শতভাগ৷

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা