সাইবার বুলিং যখন তারকাদের আত্মহননের কারণ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ইচ্ছে হলেই যাকে তাকে গালি দিয়ে বসছেন ফেসবুকে, অন্যপ্রান্তের মানুষটা যদি তারকা হন, তাহলে তো গলার সুর আরও এক কাঠি চড়ে যায়! কিন্ত ওই মানুষটা এই নোংরা ব্যক্তি আক্রমণকে কীভাবে নিচ্ছেন, সেটা ভেবেছেন কখনও? সবার মানসিক শক্তি তো একরকম নয়...
সাইবার বুলিং এর মতন এমন বালাই ভার্চুয়াল দুনিয়াতে আর আছে কী না, সে বিতর্কের বিষয়। এই সাইবার বুলিং এ কত প্রাণ যে অকালেই ঝরে গিয়েছে, সে খবর কেউ রাখেনি। রাখেও না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নানারকম চেষ্টা চালিয়ে, কঠোর আইন করে এই অমানবিক বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করারও চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তবুও এ উৎকট ব্যাধি সারছে না। কোনো উদ্যোগেই খুব একটা আশাপ্রদ ফলাফল দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশ যেমন অনলাইনে পেইজও খুলেছে, নারীদের সাইবার বুলিং এর হাত থেকে বাঁচাতে। কিন্তু এরকম উদ্যোগ যতই বাড়ছে, ততই যেন চওড়া হচ্ছে দুষ্কৃতিকারীদের সাহস।
সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি সেলিব্রেটিরাও নিস্তার পাচ্ছেন না এই নাগপাশ থেকে। বেশি না, দেশের যেকোনো তারকার ফেসবুক পোস্টের কমেন্টবক্স ফলো করুন। এই কথার সাপেক্ষে প্রমাণ পেয়ে যাবেন। এবং এসব সাইবার বুলিং সময়ে সময়ে এতটাই মারাত্মক হচ্ছে, অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। 'The Shawshank Redemption' সিনেমার একটি লাইন আমার খুব প্রিয়- Everyone has a breaking point.এই মারাত্মক সংবেদনশীল সীমাটি কখন আসে কেউ জানে না। কিন্তু যখন আসে, এই সীমার টাল সামলোনো তখন হয়ে যায় খুবই অসম্ভব এক কাজ। মানুষের মাত্রাহীন, বিবেকহীন স্বেচ্ছাচারিতায় 'ব্রেকিং পয়েন্ট' এর সীমালঙ্ঘন করে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে এমন কিছু মানুষের গল্প জানাবো আজ, যারা একদিন ছিলেন এই চ্যাপ্টা গোলক পৃথিবীর অংশ। অথচ কিবোর্ড হাতে বিষাক্ত জানোয়ারদের বর্বর আক্রমণে তারাই ক্রমশ বেছে নিয়েছেন মৃত্যুর পথ।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার মেসা শহরে বাস করতো দশ বছরের ফুটফুটে এক মেয়ে, নাম-মারিয়ান হার্নান্দেজ রোখাস। অনলাইনে তাকে নানা বিষয়ে ক্রমশই উত্যক্ত করা হতো। তারই জের ধরে সম্প্রতি আত্মহত্যা করে সে। যে ঘটনা ভার্চুয়াল জগতে বেশ আলোচন তুলেছে সম্প্রতি।
হানা কিমুরাকে অনেকেই চেনেন। নেটফ্লিক্সের তুমুল জনপ্রিয় রিয়েলিটি টিভি শো 'টেরাস হাউজ' এ ছিলেন তিনি। তাছাড়া কিমুরা পেশাদার কুস্তিগিরও। এ বছরের মাঝামাঝি তিনি আত্মহত্যা করেন। 'টেরাস হাউজ' টিভি সিরিজ নিয়ে দর্শকদের কুৎসিত সব সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেন।
দক্ষিন কোরিয়ার অভিনেত্রী, গায়িকা ও মডেল সল্লিরও গল্পটি একইরকম। তিনি ছিলেন একজন সোশ্যাল এক্টিভিস্টও। মেয়েদের 'নো ব্রা মুভমেন্ট' এরও অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন যিনি। যে মুভমেন্টের কারণেই তাকে হতে হয় চরম অপমানের ও সাইবার বুলিং এর স্বীকার। শেষপর্যন্ত তিনি বেছে নেন মৃত্যুরই পথ। এ বছরের অক্টোবরেই মারা যান তিনি। এর এক মাস পরেই সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে মারা যান কোরিয়ার আরেক শিল্পী খু হারা। যিনি নিজে ছিলেন সল্লির খুব কাছের বন্ধু।
কানাডার পনেরো বছরের অ্যামান্ডা টড, পিরোজপুরের ষোলো বছরের রূপা, অস্ট্রেলিয়ার পনেরো বছরের অ্যামি 'ডলি' এভারেস্ট এরা প্রত্যেকেই আত্মহত্যা করেন, সাইবার বুলিং এর জের ধরে। এ সংখ্যা গুনতে গেলে শেষ হবে না। গুনতে গুনতে কুলও পাওয়া যাবে না। এবং যে সংখ্যাটি ক্রমশই বাড়ছে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা ক্যান্সারের সেলের মতন।
খেয়াল করলে দেখা যাবে, তুচ্ছ তুচ্ছ কারনগুলোতে ভর করে ঘটছে তীব্র সব সাইবার বুলিং এর ঘটনা। যে ঘটনার চূড়ান্ত রূপান্তর হচ্ছে নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু। তবু আমাদের বোধোদয় হচ্ছে না৷ আমরা হিংস্র জানোয়ারের মত সুযোগ পেলেই নগ্ন আক্রমণ করছি যাকে পাচ্ছি, তাকেই। ধারালো কিবোর্ড নিয়ে করছি নোংরামোর চূড়ান্ত। এভাবেই চলছে সব। প্রযুক্তি, উন্নতির বিশ্বে এসে নিয়মিতই ধরাকে সরাজ্ঞানে করছি। অথচ আমাদের ভেতরটা ক্রমশ হয়ে যাচ্ছে পচাগলা লাশের এক নর্দমা।
এভাবেই যাচ্ছে। এভাবেই যাবে সামনেও হয়তো। কি করলে সব ঠিক হবে, কীভাবে সারবে সব, জানা নেই কারো। উদ্দেশ্যহীন মিছিলে পথভ্রষ্ট হয়ে এগোচ্ছি সবাই। হয়তো এটাই আমাদের চূড়ান্ত নিয়তি।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন