সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে মানুষ মারা যাচ্ছে। এদিকে আপনারা বলছেন দেশের করোনা পরিস্থিতি নাকি বেশ ভালো। তাহলে বিদেশী দূতাবাসের লোকজন ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে কেন?

একটা ভিডিও দেখলাম সিলেটের। ফিনল্যান্ডের এক নাগরিক অসুস্থ হয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েছে। মানুষজন করোনা সন্দেহ কেউ তার কাছে যায়নি। পুলিশ আর হাসপাতালের লোক এসেও তাকে নিতে চায়নি। শেষমেশ অবশ্য তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে টেনে-হিঁচড়ে। হ্যাঁ, অনেকটা কুকুর- বেড়ালের মতো করে। এ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সময় অবশ্য ওই বিদেশি একবার পড়েও গিয়েছে! জানি না, তার ভাগ্যে কি ঘটেছে।

এদিকে প্রথম আলো পত্রিকায় পড়লাম কোন এক জেলায় এক লোক মারা গিয়েছে। সবার সন্দেহ করোনায় মারা গিয়েছেন তিনি। এরপর তাকে এলাকায় কবর পর্যন্ত দেয়া যায়নি। কবর দিতে গেলে ওই এলাকার আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি; দুই দলের নেতাই বাধা দিয়েছে! শেষমেশ তাকে কবর দেয়া হয়েছে দূরে এক সরকারি মাজারের পাশে! আওয়ামীলীগ আর বিএনপি'কে দেশের কোন ভালো কাজে এক হতে দেখিনি আজ অবদি! তবে একজন মানুষকে যাতে কবর দেয়া না যায়, এই জন্য তারা অবশ্য এক হতে পেরেছে। মন্দ কি!

এদিকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বানাতে বাধা দিয়েছে স্থানীয় মানুষজন! এই যখন অবস্থা, তখন আপনারা কি করে মনে করছেন- দেশে করোনা রোগী থাকলেও আপনি জানতে পারবেন? করোনা উপসর্গ দেখা দিলেও তো কেউ বলবে না। ঘরে বসে এমনি এমনি মারা যাবে; তাও কোথাও যাবে না। নইলে তো মৃত্যুর পর এই দেশে কবরের জায়গাও পাওয়া যাবে না! 

এই দিকে শুনতে পাচ্ছি দেশে নাকি গত দুই দিন ধরে কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। খুবই ভালো কথা। আরেক মন্ত্রীকে বলতে শুনলাম- দেশে করোনার অবস্থা খুবই ভালো। এই নিয়ে চিন্তার কিছু নেই! ওই দিকে শুনতে পাচ্ছি শেষমেশ ঢাকার তেজগাঁওতে করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটি তৈরি হচ্ছে! আজ আবার জানতে পারলাম বসুন্ধরা গ্রুপ ৫০০০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা হাসপাতাল তৈরি করতে যাচ্ছে।

কোন একটা পত্রিকায় আজ পড়লাম- বিদেশি দুতাবাসগুলোর মানুষজন নাকি ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে! কেন, তারা ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে কেন? বাংলাদেশের দুতাবাস তো ইতালি, স্পেনে আছে। সেখানে তো হাজারে হাজারে মানুষ মারা যাচ্ছে! বাংলাদেশের দূতাবাসের মানুষজন কি ওই দেশ গুলো ছেড়ে বাংলাদেশে চলে এসছে? তাহলে বিদেশি দূতাবাসের মানুষজন চলে যাচ্ছে কেন বাংলাদেশ ছেড়ে? আপনারা না বলছেন- দেশে করোনা রোগী নেই! করোনা পরিস্থিতি ভালো! অনেকে দেশের চাইতেও ভালো! 

তাহলে এই যে নানান জায়গায় হাসপাতাল বানাচ্ছেন; এই হাসপাতালগুলোতে আসলে কাদের ভর্তি করানো হবে? করোনা রোগী নাকি সর্দি-কাশির রোগী? এদিকে দেখতে পেলাম এক বিসিএস ক্যাডার, বাপের বয়সী দুই খেটে খাওয়া মানুষকে কানে ধরে উঠবস করাচ্ছে; মাস্ক না পড়ার জন্য! ওমা! আপনারা না প্রতিদিন এসে বলছেন- দেশে করোনা নেই। অনেক দেশের চাইতেও আমরা অনেক এগিয়ে!

তাহলে মাস্ক না পড়ার জন্য আপনাদেরই কর্তা-ব্যক্তি'রা আবার পেটাচ্ছে, কানে ধরে উঠবস করাচ্ছে! কেন? এখন আবার শুনতে পাচ্ছি- পুলিশ আর প্রশাসন ক্যাডারে কাজ করা লোকজন'দের নাকি মানবিক আচরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে! বাহ! কি চমৎকার কথা! আলাদা করে মানবিক আচরণ করার জন্য নির্দেশও দেয়া হয়!

এর মানে কি? অন্য সময় আপনারা অমানবিক থাকেন? এদিকে কোন এক জেলার পুলিশের ওসির রুমে কোন এক ব্যক্তি নাকি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে! এই খবর শুনে আমি গিনিজ না গিনেজ বুক ঘাটতে গিয়েছিলাম এই ভেবে- আবার বিশ্ব রেকর্ড হয়ে গেল কিনা! জগতের এতো জায়গা থাকতে, ওই লোক কোন দুঃখে বেঘোরে আত্মহত্যা করতে গেল ওসির রুমে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না!

এখন আবার শুনতে পাচ্ছি- ওই ওসির রুমে নাকি কোন ফ্যানই ছিল না! তাহলে ওই লোক কি করে ফ্যানের নিচে ঝুলে আত্মহত্যা করলো, সেটাই বুঝতে পারছি না! আচ্ছা- ওই লোকের আবার করোনা হয়নি তো? কে জানে, হতেও পারে! কোন পত্রিকায় যেন পড়লাম, বিদেশ থেকে ফেরা এক লোকের কাছে পুলিশের এক কর্তা ঘুষ চেয়েছেন এই বলে- এক লাখ টাকা দেন, নইলে করোনা রোগী সন্দেহে চালান করে দেব! যাক বাবা, এতো কিছু দেখে-শুনে আমরা সাধারণ জনগণ যে এখনও পুলিশের রুমে আত্মহত্যা করতে যায়নি, এইতো বেশ!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা