এই ক্রসফায়ারকে সমর্থন দিলে আপনি নিজেকেও মেরে ফেলার এখতিয়ার দিয়ে দিলেন। অতঃপর, নিরাপরাধী আপনিও হয়ে উঠতে পারেন ভয়ংকর কোনো সন্ত্রাসী। মেনে নিতে পারবেন তো?

ধর্ষককে সরাসরি ‘ক্রসফায়ারে’ দিয়ে হত্যার দাবী জানিয়ে, গত ১৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের অনির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সরকারি ও বিরোধীদলীয় নেতারা।

প্রথমেই বলে নিচ্ছি, এটি কোনো অহেতুক সুশীলতা বা প্রগতিশীলতা দেখানোর জন্য লেখা নয়। ঠান্ডা মাথায় বোঝার চেষ্টা করুন, একটি অপরাধ দিয়ে আরেকটি অপরাধকে কখনোই বৈধ প্রমাণ করা যায় না। বিচার বহির্ভূত যেকোনো হত্যায় নিরাপরাধীদের নিরাপত্তা সংকিত হয়। এই ক্রসফায়ারকে সমর্থন দিলে আপনি নিজেকেও মেরে ফেলার এখতিয়ার দিয়ে দিলেন। অতঃপর, নিরাপরাধী আপনিও হয়ে উঠতে পারেন ভয়ংকর কোনো সন্ত্রাসী। মেনে নিতে পারবেন তো?  

ফ্র্যাংকেস্টাইনের কথা মনে আছে আপনাদের? যে পাগলাটে বিজ্ঞানী এক দানব তৈরি করেছিলেন যা তার নিজের জীব নে বিপর্যয় ডেকে এনেছিলো। ঠিক তেমনি করে ‘ক্রসফায়ার’ নামক যে দানব আমরা তৈরি করেছি সেটিও আমাদের বিপর্যয় ডেকে আনবে।

সংসদ নেতাদের এই আহবানে প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১৫ই জানুয়ারি গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ (আসক)। তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংসদ সদস্যদের এমন বক্তব্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। সংসদ সদস্যদের বক্তব্যে তারা একইসঙ্গে স্বীকার করে নিয়েছেন, সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনী সবসময় দাবি করে এসেছে যে কেবলমাত্র আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি চালাতে বাধ্য হচ্ছে।’

ক্রসফায়ারের প্রতীকী ছবি

আরেকটু ভাবুন, আমাদের নীতিনির্ধাকেরাও কতোটা অসহায় হয়ে গিয়েছেন। তারা বিচারব্যবস্থার কোনো উন্নতি তো ঘটাতেই পারছেন না বরং সরাসরি হত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এমতাবস্থায়, যখন বিচারব্যবস্থায় আস্থাহীনতা চলে আসে তখন যে সঙ্কট তৈরি হয় সেটা থেকে চট করে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। কোনোভাবেই বিচারবহির্ভূত প্রক্রিয়ায় এই সঙ্কট দূর হবে না। পাছে, ক্রসফায়ারের মতো অনৈতক একটি ব্যাপার বৈধতা পেয়ে যাবে। প্লিজ ভাবুন। ভাবার চেষ্টা করুন।

‘আসক’ এর বক্তব্যে আরো জানানো হয়, ‘যে কোনো ব্যক্তির বিচার লাভের অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্টভাবে স্বীকৃত। সংবিধানে আরও বলা আছে, কাউকেই বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলাদিতেও এ অধিকার স্বীকৃত, যেগুলো বাংলাদেশ অনুমোদন করেছে। এছাড়া জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে যেসব সংসদ সদস্য এমন নিষ্ঠুর, অমানবিক ও আইনবহির্ভূত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, তাদের নিজ রাজনৈতিক দলও নির্বাচনি ইশতেহারেও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের অঙ্গীকার করেছিলো। তা সত্ত্বেও সংসদ সদস্যদের এমন দাবি নিঃসন্দেহে প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার লঙ্ঘন। 

স্থায়ী কোনো সমস্যার জন্য সাময়িক সমাধানে হয়তো আপনাদের ভালোই লাগবে। কিন্তু এই সমাধান নিজেই যেন ভয়ংকর সমস্যায় পরিণত না হয়। এবার সিদ্ধান্ত আপনার। 


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা