অস্ট্রেলিয়ার হোক, কিংবা নিজ দেশের- এদেশের মাটিতে নারীদের নিরাপত্তা নেই
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ঘটনাটাকে আপাতদৃষ্টিতে খুব সাধারণ মনে হচ্ছে, অনেকেই হাঁফ ছেড়ে ভাবছেন- যাক, খারাপ কিছু তো হয়নি!
আমরা প্রায়শই আক্ষেপ করি, কেন আমাদের দেশে পর্যটকদের ঢল নামে না। কয়েক মাইল লম্বা সী-বীচ দিয়ে থাইল্যান্ডের পাতায়া প্রতি বছর কোটি কোটি পর্যটক টেনে নেয়, অথচ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নিয়েও আমাদের দেশে সারা বছরে সব মিলিয়ে লাখ পাঁচেক বিদেশী পর্যটকও আসেন না! আসা উচিতও নয় অবশ্য। পর্যটন জোনে যে দেশের লোকজন বিদেশী পর্যটককে ধর্ষণের চেষ্টা করে, সেদেশটাকে পর্যটকদের তালিকা থেকে নিষিদ্ধ করে দেয়াই উচিত। এমন ন্যাক্কারজনক কাণ্ড যে দেশের মানুষ ঘটায়, সেদেশে বিদেশীরা আসতে ভয় পাবে- এমনটাই তো স্বাভাবিক।
ঘটনাটা গত পরশু রাতের। অন এরাইভাল ভিসা নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন অস্ট্রেলীয় এক নারী। অনলাইনে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে অবস্থিত মারমেইড ইকো রিসোর্ট সংলগ্ন 'গুড ভাইব রিসোর্ট' নামের একটি রিসোর্টে বুকিং দেন। ১৫ই ডিসেম্বর সেখানে চেকইন করেন তিনি। কিন্ত বেড়াতে এসে যে ভয়াল একটা অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে যাবেন, সেটা হয়তো তার কল্পনাতেও ছিল না।
রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার দিকে তার কক্ষে দুই যুবক প্রবেশ করে। যুবকরা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মুখ চেপে ধরে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে কোনোরকমে ওই নারী আত্মরক্ষা করেন। এরপর তিনি নিজেই কটেজের মালিক ও পুলিশকে বিষয়টি জানান। সংবাদ পেয়ে রামু থানার পুলিশ দ্রুত গিয়ে তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজারে নিয়ে আসে।
পুলিশ জানতে পেরেছে, কটেজের নিরাপত্তাকর্মী নিজেই যুবক গফুর ও বেলাল নামের দুই যুবককে খবর দেয়। তারা সেখানে চুরি করার জন্য প্রবেশ করেছিল। এরপর ওই নারীর মুখ চেপে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। রাতেই পুলিশ গফুরকে আটক করেছে। তবে এখনও পলাতক রয়েছে বেলাল। এই ঘটনায় ওই তরুণী অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুলিশ অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের সঙ্গে কথা বলেছে ইতিমধ্যেই।
ঘটনাটাকে আপাতদৃষ্টিতে খুব সাধারণ মনে হচ্ছে, অনেকেই হাঁফ ছেড়ে ভাবছেন- যাক, খারাপ কিছু তো হয়নি! এইবার শুধু ভাবুন, অস্ট্রেলিয়ান সেই নারীকে ধর্ষণের পর ঘটনা চাপা দেয়ার জন্যে হত্যা করেছে ওই নরপিশাচগুলো- ঘটনাটা যদি এমন ঘটতো, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো? এমনিতেই তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের সুনাম বলতে কিছুই নেই, যা আছে সবই দুর্নাম। এই ঘটনাটা ঘটলে পরিস্থিতি কতটা খারাপের দিকে মোড় নিতো, ভাবুন একবার!
কথায় কথায় ভারতকে আমরা গালিগালাজ করি, ধর্ষণের স্বর্গরাজ্য বলে নাম বিকৃত করে 'রেন্ডিয়া' ডাকি। আমাদের দেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ ভারতে যান বেড়াতে, কিংবা চিকিৎসা আর ব্যবসার কাজে। কখনও শুনেছেন, বাংলাদেশী কোন তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে? আমার কানে অন্তত আসেনি। কথায় কথায় প্রতিবেশী দেশের ছিদ্রান্বেষণ করে বেড়ানো আমরা কি কখনও খোঁজ নিয়েছি, নিজেদের দেশটাতে কতশত ভদ্রবেশী লম্পট ঘুরে বেড়াচ্ছে চারপাশে?
থাইল্যান্ড বলুন, ভারত বলুন, কিংবা পর্যটনে উন্নত যে দেশগুলো, তারা পর্যটকদের সাথে অন্তত ধর্ষকামী আচরণ করে না। অতিথিকে আতিথ্যেয়তা দিতে কার্পণ্য করে না তারা। আর আমরা রাতের বেলায় নারী অতিথির রুমে হানা দেই, ধর্ষণ করতে চাই! এই লজ্জা রাখার কোন জায়গা আছে বলে আমার জানা নেই। এরপরে ভীনদেশী কেউ যদি অনলাইনের কোন ফোরামে বাংলাদেশে বেড়াতে আসার ব্যাপারে সাহায্য চায়, তাকে এক কথায় নিষেধ করে দেবো। ধর্ষকামী পার্ভার্টে ভরা একটা দেশ পর্যটনের জন্যে কোনভাবেই উপযুক্ত হতে পারে না, কখনোই না।