যারা প্রথাগত ট্যুরিস্ট না, এডভেঞ্চার প্রিয়, তাদের জন্য এমন একটা রুটের সন্ধ্যান দেয়া যেতে পারে, যে রুট ফলো করলে নৌপথেও যাওয়া সম্ভব কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনে...

বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। এই দেশে নদীর অপরুপ সৌন্দর্য এতটাই মোহনীয় যে, জলকে যারা ভালবাসে না তারাও নৌভ্রমণের প্রেমে পড়ে যায়। নৌপথে যাওয়া যায় অনেক জায়গাতেই। তবে, ঢাকা থেকে কেউ যদি নৌপথে কক্সবাজার বা সেন্টমার্টিন যেতে চায়, তাহলে কি সম্ভব?

সত্যি বলতে প্রচলিত নৌভ্রমণে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই, ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন যেতে হলে সড়ক পথই ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু, যারা প্রথাগত ট্যুরিস্ট না, এডভেঞ্চার প্রিয়, তাদের জন্য এমন একটা রুটের সন্ধ্যান দেয়া যেতে পারে, যে রুট ফলো করলে নৌপথেও যাওয়া সম্ভব কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনে। কীভাবে? সেটাই বলছি।

যা যা নিতে হবে সাথে

অবশ্যই বমির ট্যাবলেট, শুকনা খাবার সাথে রাখবেন, বিশেষ করে চট্টগ্রামের পর সমুদ্রের ভেতর এগুলো আপনাকে বেশ কাজে দেবে। জামা কাপড় দিয়ে ব্যাগ বোঝাই করা অনুচিত হবে। দরকারি পোশাক ছাড়া বাড়তি কাপড় না নেয়াই শ্রেয়। তাড়াহুড়ো করা যাবে না, হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজাতে হবে। ঝড়, তুফানের সময়টা এই জার্নির জন্য একটু ঝুঁকির, আবহাওয়ার দিকদারি বুঝেশুনে বেরিয়ে পড়ুন। 

প্রথম ধাপ- আপনাকে যেতে হবে ঢাকার সদরঘাটে। সদরঘাট চমৎকার এক জায়গা। কত যে জাহাজ এখানে! আপনি অবশ্য সব জাহাজ ধরতে পারবেন না। আপনাকে ধরতে হবে হাতিয়া যাওয়ার লঞ্চ। এই লঞ্চ ধরতে হলে বিকেলের মধ্যেই আপনাকে থাকতে হবে ঘাটে। সাধারণত ৫-৫.৩০ এর মধ্যেই হাতিয়ার লঞ্চগুলো ঘাট ছাড়ে।

প্রথমে সদরঘাট থেকে হাতিয়ার লঞ্চে উঠতে হবে

রাতের জাহাজে ঢাকার দূষণকে পেছনে ফেলে অদ্ভুত মোহনীয় একটা আবেশ ছড়িয়ে লঞ্চ আপনাকে সকালে পৌঁছে দেবে হাতিয়ায়। সকাল সাতটায় লঞ্চ থেকে নেমে আপনার প্রথম কাজ ভাল মতো একটা ব্রেকফাস্ট করা। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন, পরের জাহাজ কি আজই ধরবেন নাকি কাল? যদি তাড়াহুড়ো না থাকে তাহলে চলে যেতে পারেন, নিঝুম দ্বীপ, চুপি চুপি নির্জনে প্রকৃতির মোহে মুগ্ধ হতে পারার এমন সুযোগ আর কোথায় মেলে! তাড়া থাকলে হাতিয়াতেই অবস্থান করুন, সকাল দশটায় শুরু হবে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।

দ্বিতীয় ধাপ- হাতিয়া থেকে পরবর্তী গন্তব্য চট্টগ্রাম। হাতিয়া থেকেই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে জাহাজ ছাড়ে, সকাল দশটায়। জাহাজ চলার কিছুক্ষণ পরেই আপনি দেখবেন সমুদ্র, সমুদ্রের জল কেটে কেটে জাহাজ যাবে চট্টগ্রামের পথে। যেতে যেতে বিকেল হয়ে যাবে। যখন আপনি চট্টগ্রাম সদরঘাটে চলে আসবেন, তখন আপনার তেমন কিছুই করার নেই। রাতটা চট্টগ্রামেই কাটিয়ে দিন, সকাল হবার আগে আপনার পরের গন্তব্য শুরু হবে না। চট্টগ্রামে লোকাল খাবারের স্বাদ দারুণ, ট্রাই করে দেখতে পারেন৷ 

তৃতীয় ধাপ- পরদিন ভোর সাতটা। আপনাকে এখন যেতে হবে কুতুবদিয়া। না সড়ক পথে নয়, এই জার্নিটাও নৌপথেই। চট্টগ্রাম সদরঘাট থেকেই সকাল ৭টায় কুতুবদিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রলার। চট্টগ্রাম থেকে আনোয়ারা হয়ে, মগনামাঘাট হয়ে দুপুর ১ টার দিকে আপনি কুতুবদিয়া পৌছাবেন। এর ভেতরেই আপনার দেখা হয়ে যাবে উত্তাল সমুদ্রের রুপ। তবে বেশি উত্তাল হলে আর দেখতে হবে না, জীবনের ঝুঁকি হয়ে যাবে একদম।

দুপুর একটায় যখন আপনি কুতুবদিয়া নামবেন, তখন আবারও আপনি স্বাধীন। পরেরদিনের আগে আর কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই। এখানে আপনি হোটেলে থাকতে পারবেন রাতে, খরচ বেশি নয়, হাজারখানেকের মধ্যেই মিলবে মোটামুটি ভাল মানের রুম। ঘুরে দেখতে পারেন কুতুবদিয়া দ্বীপ, এখানেই আছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখানে লবন চাষ হয় বিশাল জায়গাজুড়ে, আছে লাইটহাউজ, আছে কুতুব আউলিয়ার মাজারও। 

অতঃপর কক্সবাজার- কুতুবদিয়া দ্বীপে রাত কাটিয়ে পরদিন ফ্রেশ মুডে যাত্রা শুরু হবে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। সকাল নটায় কুতুবদিয়ার ঘাট থেকে ট্রলার ছাড়ে, এই ট্রলার ভাসতে ভাসতে যায় আরেকটু সুন্দর দ্বীপ মহেশখালীতে। দুপুর দুইটায়। এখান থেকে একই ট্রলারই অবশ্য কক্সবাজার পৌঁছে৷ আপনার শরীরে যদি এখনো ক্লান্তি না আসে, তাহলে মহেশখালী দ্বীপ আর সোনাদিয়া দ্বীপ একসঙ্গে ঘুরে দেখে কক্সবাজার যেতে পারেন।

কক্সবাজার পৌঁছে চাইলে নৌযাত্রাটাকে দীর্ঘায়িতও করা যায়...

তবে, চাইলে যে ট্রলারে কুতুবদিয়া থেকে এসেছেন, তাতে করেই কক্সবাজার চলে যেতে পারেন৷ পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আপনার পা পড়লো ঢাকা নামক শহর থেকে, গোটা যাত্রা সমুদ্র পথে, আপনি পেরেছেন এই দুরন্ত যাত্রা শেষ করতে! অভিনন্দন আপনাকে। তবে... 

চাইলে সেন্টমার্টিনও- তবে, আপনি চাইলে এই জার্নিটা আরো দীর্ঘায়িত করতেই পারেন৷ যেতে পারেন, সেন্টমার্টিনে। সেক্ষেত্রে আপনাকে একটু বাহাস করতে হবে। সিজন বুঝে, সময় বুঝে প্ল্যান করলে সেন্টমার্টিন যাওয়া সম্ভব হতে পারে। কক্সবাজার থেকে অনেক ট্রলারই গভীর সমুদ্রে যায় মাছ ধরতে। এরা আবার ফিরে আসে দুপুরেই। এদেরকেই ম্যানেজ করে বলতে হবে সেন্টমার্টিন পৌঁছে দেওয়ার জন্যে। যদি কেউ রাজি হয়ে যায়, তাহলে তো ভালই। আপনি টালমাটাল সমুদ্রে টলতে টলতে রাতে পৌঁছে যাবেন সেন্টমার্টিন, সময় লাগবে ৫/৬ ঘন্টার মতো।

এই ধকলটা একটু কমানো যায়, যদি সড়ক পথে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যান এবং সেখান থেকে ট্রলার বা জাহাজ ধরে সেন্টমার্টিন যাত্রা করেন। তবে, পুরো রাস্তা যখন নৌপথে আসলেন, তখন শেষে এসে সড়কের সাহায্য আর না-ই বা নিলেন! জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা, আছে কি জীবনে! এডভেঞ্চারটা করেই ফেলুন, সঙ্গী সাথী নিয়ে। একটু সময়সাপেক্ষ হলেও খরচ বেশি হবে না, ৭/৮ জনের গ্রুপ করে গেলে চার হাজার টাকাতেই হয়ত সব খরচ মিটে যাবে, তাতে যে অভিজ্ঞতা যোগ হবে সেটা অবশ্য একেবারেই অমূল্য!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা