দেশে এন্টার্কটিক হুজুর, আর ভারতে এই হিন্দু মহাসভা- এদের দেয়া বিনোদনের কারণে আজকাল স্ট্যান্ডআপ কমেডিতেও হাসি আসে না একদম...
ধরুন আপনাকে আমন্ত্রণ করা হলো একটা লেট নাইট পার্টিতে, ব্যুফে ডিনারের প্রতিটা আইটেম চেখে দেখার বাসনা নিয়ে সামনে এগিয়েই বুঝতে পারলেন, কোন একটা গণ্ডগোল আছে এর মধ্যে, সবগুলো খাবার থেকেই উঠে আসছে গরুর গোবরের তাজা গন্ধ। কারণ খাবারগুলোই তো গোবর দিয়ে তৈরী। খালি পেট নিয়ে আপনি ভাবলেন, একটু ড্রিংক্স কর্নারের দিকে যাওয়া যাক, গলাটা না ভেজালে চলছেই না! সেখানে গিয়ে দেখলেন তাক ভর্তি সাজানো হরেক রকমের পানীয়, একেকটা একেক ফ্লেভারের, কিন্ত প্রতিটাই একটা জিনিস দিয়ে তৈরী- গরুর মুত্র! অবিশ্বাস্য হলেও এই কাণ্ডটাই ঘটতে চলেছে দিল্লিতে। আর এই গোমুত্র এবং গরুর গোবর দিয়ে তৈরী খাবার দিয়ে পার্টি করা হবে করোনাভাইরাসকে ঠেকানোর জন্যে!
হিন্দু মহাসভা নামে একটা সংগঠন আছে ভারতে, আমার ধারণা, দুনিয়ার সবচেয়ে উজবুক কিসিমের মানুষগুলো এই সংগঠন চালায়। নইলে কি আর প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস রুখে দেয়ার জন্যে এরা গরুর গোবর আর গোমুত্রের পেছনে পড়ে? যে মারণ ভাইরাসের থাবা আটকাতে প্রতিষেধক তৈরির জন্য রাত-দিন এক করে ফেলছেন বিজ্ঞানী-গবেষকরা, সেখানে হিন্দু মহাসভার দাবি, করোনা রুখতে একমাত্র ‘মহৌষধি’ নাকি গোমূত্র এবং গোবর! দিল্লিতে যাতে করোনার প্রকোপ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্যই এই ‘গোমূত্র পার্টি’র আয়োজন!
হিন্দু মহাসভার প্রধান যে ব্যক্তিটি, তার নাম চক্রপাণি মহারাজ। তবে তার নাম মহারাজ না রেখে মগারাজ রাখলে বোধহয় বেশি ভালো হতো। এই লোকের মাথায় যে গরুর গোবর ছাড়া আর কিছু নেই, সেটা তার কথাবার্তা শুনলেই বোঝা যায়। মাস খানেক আগে তিনি বলেছিলেন, গোমুত্র খেলে আর গরুর গোবর গায়ে মেখে বসে থাকলে নাকি করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ব্যাপারটা তখন হাসিঠাট্টা করে সবাই উড়িয়ে দিলেও, এই মগারাজ যে জিনিসটা ফাজলামি করে বলেনি, সেটা বোঝা যাচ্ছে এখন। খোদ ভারতের রাজধানীতে চা চক্রের মতো করেই গোমুত্র পার্টির আয়োজন করে ফেলেছে এই সংগঠনটি! প্রাথমিকভাবে দিল্লিতে হিন্দু মহাসভার প্রধান দপ্তরে এই আয়োজন করা হবে৷ পরবর্তী সময়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা গোশালার সঙ্গে যৌথভাবে এই গোমূত্র চক্রের আয়োজন করা হবে। এখান থেকে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হবে করোনাভাইরাস কী এবং কীভাবে গরুর গোবর এবং মুত্র পান করে পণ্য এই রোগ ঠেকানো সম্ভব।
করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে ঘন ঘন হাত ধোয়া, বড় জমায়েত এড়ানো, হাঁচি-কাশির সময় নাকে মুখে রুমাল দেওয়া কিংবা সর্দি জ্বর হলে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছেন ডাক্তারেরা। অথচ এই মাথামোটা চক্রপাণি বলেছেন, এসব কিছু না করে গোমূত্র খান, আর নিরামিষভোজী হয়ে যান, তা হলেই পালাবে করোনা।’’ আর যারা ভেজিটেরিয়ান? তাদের নাকি চিন্তাই নেই। মহারাজ বলেছেন, ‘‘শাকাহারিদের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। এতে (করোনা) তাদের সংক্রমণ হবে না। কিন্তু তবু, সাবধানতা হিসেবে তারাও গোমূত্র খাওয়া শুরু করতে পারেন।’’
খবরটা শুনে বিজেপির পেইড সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর মতো করে বলতে ইচ্ছে হলো- মতলব কুছ ভি? 'ওঁম নমঃ শিবা' বলে গায়ে গোবর মেখে গরুর মুত খেয়ে ফেললে করোনাভাইরাস সেরে যাবে? ছাগলামির তো একটা লিমিট থাকে। ধর্মের নাম করে এসব পাগুলে প্রলাপ বকে যাচ্ছে কিছু গণ্ডমুর্খের দল, ছাগলা টাইপের জনগন সেসব শুনছে দেদারসে, কেউ কেউ তো মেনেও চলছে। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে গোরুর গোবর আর গোমুত্র পান করা মানুষগুলোই কিন্ত আবার গরুর মাংস খাওয়ার 'অপরাধে' অন্য ধর্মের মানুষকে পিটিয়ে মারে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধায়।
দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি, উত্তরপ্রদেশ, বেনারসের মতো জায়গাগুলোতে গায়ে গোবর মেখে গোমূত্র পান করার হিড়িক পড়ে যাবে, দলে দলে লোকজন ছুটে আসবে গোমুত্রের পার্টিতে যোগ দিতে। হিন্দু মহাসভার প্রধান যেহেতু বলেছেন, সেহেতু এই কাজ তো করতেই হবে! করোনাভাইরাস যদি মানুষ হতো, আর জানতে পারতো যে তাকে মোকাবেলার জন্যে গরুর গোবর আর গোমূত্র দিয়ে পার্টি করা হচ্ছে, তাহলে লজ্জায়, ক্ষোভে, অপমানে ভাইরাসগুলো নিজেরাই দলে দলে আত্মহত্যা করতো বোধহয়!
এখনও পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষ মারা গেছেন এই ভাইরাসের আক্রমণে, বিশ্বজুড়ে তিরানব্বই হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। চীনের বাইরে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি ভারতেও পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে অনেক আগেই, কিন্ত এখনও আবিস্কার হয়নি কোন প্রতিষেধক। অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেবে বলে বারবার সতর্ক করছে ইংল্যান্ড-আমেরিকার মতো দেশগুলো, চীনের অর্থনীতি তো একরকম স্থবির হয়ে পড়েছে করোনার আক্রমণে।
আর এরইমধ্যে হিন্দু মহাসভার প্রধান স্বামী চক্রপাণি মহারাজ ফাজলামি শুরু করেছেন। কট্টর হিন্দুত্ববাদের নামে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এমনিতেই সুনাম আছে এই প্রতিষ্ঠানের। এরা এখন তাদের ব্রক্ষ্মাস্ত্র গরুর গোবর আর গোমুত্রকে নিয়ে ভাইরাসের পেছনে লেগেছে। গরুর গোবরের যদি এতই মাহাত্ম্য থাকে, তাহলে এই মুর্খটার সারা গায়ে গোবর মাখিয়ে পাঁচ লিটারের একটা বোতলে গোমূত্র ভর্তি করে তাকে চীনের উহান শহরে ফেলে আসা হোক। তারপর দেখা যাবে কত গোমুত্রে কত এন্টিবায়োটিক।
দেশে এন্টার্কটিক হুজুর, আর ভারতে এই হিন্দু মহাসভা- এদের দেয়া বিনোদনের কারণে আজকাল স্ট্যান্ডআপ কমেডিতেও হাসি আসে না একদম...