আজ একটি আশা জাগানিয়া খবর পেলাম।

তানভীর হোসাইন: এই সপ্তাহে ইংল্যান্ডে নভেল করোনাভাইরাসের একটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হতে যাচ্ছে। এতে ৫১০ জন স্বেচ্ছাসেবী অংশগ্রহণ করবেন, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫৫ এর মধ্যে। এই পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটির নাম হলো ChAdOx 1 n CoV -19। এই ভ্যাকসিনটি আবিষ্কার করেছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।

এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রফেসর সারাহ গিলবার্ট (Sarah Gilbert)। উনি একজন প্রখ্যাত ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ। এর আগে উনি MERS ভ্যাকসিন নিয়ে সফলতার সাথে কাজ করেছিলেন। ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণার বহু বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। উনার নেতৃত্বে এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই এই নুতন ভ্যাকসিনটি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিলো। মাত্র চার মাসের মধ্যে নানা ধরনের প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করে ভ্যাকসিনটিকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে তিনি নিয়ে এসেছেন। বলতে গেলে চার বছরের কাজ চার মাসেই করে ফেলেছেন। এটি কীভাবে সম্ভব হলো?

আসলে উনারা করোনাভাইরাস নিয়ে আগে থেকেই কাজ শুরু করছিলেন। কারণ মহামারী তো বলে কয়ে আসে না। মহামারীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রস্তুতি তাঁদের ছিল। পূর্ব পরিচিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রাথমিক কাজটি তাঁরা আগে থেকেই শুরু করছিলেন। নুতন করোনাভাইরাস SARS- CoV- 2 উদ্ভব হবার পর তাঁরা এর জেনেটিক কোড সম্বন্ধে প্রথমে নিশ্চিত হলেন। তারপর তাঁদের প্রাথমিক ভ্যাকসিনটিকে জেনেটিক্যালি মডিফাইড করে এই নতুন ভাইরাসের উপযোগী করে গড়ে তুললেন।

শিম্পাঞ্জি থেকে পাওয়া এক বিশেষ ধরনের এডেনোভাইরাসকে (adenovirus) জেনেটিক্যালি মডিফাইড করে এই নুতন ভ্যাকসিনটি বানানো হয়েছে। এটি করোনাভাইরাসের স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনকে টার্গেট করবে যাতে মানবদেহের এন্টিবডি এই স্পাইকগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে সেগুলোকে অকেজো করে দিতে পারে। করোনাভাইরাসের স্পাইকগুলো হলো মানুষকে ঘায়েল করার মূল অস্ত্র। স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনগুলো কাজ না করলে করোনাভাইরাস মানুষকে আর আক্রমণ করতে পারবে না। করোনাভাইরাস দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষের অ্যান্টিবডি তখন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হবে।

করোনাভাইরাসের স্পাইকগুলোই মূলত মানবদেহ ঘায়েল করে

প্রফেসর গিলবার্টকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, তিনি কতটা আশাবাদী তাঁর এই নতুন ভ্যাকসিন নিয়ে। তিনি বলেছেন, তিনি শতকরা ৮০ ভাগ আশাবাদী। বাকিটা জানা যাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর। ট্রায়াল শেষ হতে প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। তারপর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যাবে। যদি মানবদেহে এর পরীক্ষা সফল হয় তাহলে এই ভ্যাকসিনটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে বলে জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই এই ভ্যাকসিনের এক মিলিয়ন ডোজ উৎপাদিত হবে এবং মানুষকে এর টিকা দেওয়া হবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাতটি কমার্শিয়াল ফ্যাসিলিটিতে এই ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে বলে খবরে প্রকাশ করা হয়েছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলে তবে এ বছর শেষ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিনটির এক বিলিয়ন ডোজ তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে এই ভ্যাকসিন। ‌ দুঃখের দিনে নিঃসন্দেহে এটি একটি আশা জাগানিয়া খবর।

প্রখ্যাত ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ সারাহ গিলবার্ট

মানুষ তো আশা নিয়েই বেঁচে থাকে। করোনার এই দুর্যোগময় সময়ে আশার আলো দেখতে দোষ কোথায়? আমি আশাবাদী মানুষ। প্রফেসর গিলবার্ট এবং তাঁর টিমের শতভাগ সাফল্য কামনা করছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আরো বেশ কয়েকটি করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে। এর কোনো কোনোটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে চলে এসেছে। বিজ্ঞানীরা বসে নেই। অহর্নিশি কাজ করে যাচ্ছেন। ‌ আসুন আমরা সবাই মিলে তাঁদের সবার কাজের সফলতা কামনা করি।

কথা বলুন নিঃসংকোচে

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা