সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বিষেশজ্ঞরা বলছেন, জীবন্ত পশুর অনিরাপদ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পাশাপাশি; হাঁচি, সর্দি-কাশি, ঠান্ডায় ভুগছে এমন কারো ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে না যাওয়াই শ্রেয়। প্রয়োজনে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। 

শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি। এগুলো হচ্ছে রহস্যময় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হবার প্রাথমিক লক্ষণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এটি করোনাভাইরাস। একাধিক বৈশিষ্টের করোনা ভাইরাসের মধ্যে শুধুমাত্র ছয়টির ক্ষমতা রয়েছে মানুষকে আক্রান্ত করার। করোনাভাইরাস হয়ে থাকলে এটি হবে এই ক্যাটাগরির সপ্তম প্রাণঘাতী সংক্রামক। যা মানবদেহে এর আগে কখনো সংক্রামিত হয়নি।  

তবে প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করার পর তার জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে যা দেখা গেছে তাতে মনে হচ্ছে, বাকি করোনা ভাইরাসের তুলনায় 'সার্স' করোনা ভাইরাসের সাথে এর মিল বেশি। সার্স হচ্ছে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম। ২০০২ সালে এই ভাইরাসে আট হাজার আক্রান্তের মধ্যে প্রায় এক হাজারই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এই ভাইরাসের কারণে রোগীরা খুব সহজে অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়, যাতে মৃত্যুর হার সাধারণের তুলনায় অনেক বেশি।

গবেষকরা বলেছিলেন যারা চীনের ইউহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন প্রথমে। ইউহানের পর চীনের নতুন নতুন শহরেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে আছে বেইজিং এবং শেনঝেন শহরের বাসিন্দারাও। সরকারিভাবে আক্রান্তের সংখ্যা দুইশো বলা হলেও, বেসরকারিভাবে দাবি করা হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে দুই হাজার। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছে ৩ জন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক

যদিও এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব গত ডিসেম্বরে চীনের ইউহান শহরকে কেন্দ্র করেই হয়েছে, তবে থাইল্যান্ডে দুই জন এবং জাপানে একজন আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়াও জানিয়েছে, সেখানে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। পাশের দেশ ভারতে একজন আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছে। চীন এবং ভারত পাশাপাশি হওয়ায় ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আশঙ্কা, তাদের কারো দ্বারা যদি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে যাবে।

করোনাভাইরাস বিশ্লেষণ করে যা জানা গেছে, তাতে শুধুমাত্র পশুর সংস্পর্শ এতো বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার একমাত্র কারণ হতে পারে না। কোন উপায়ে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে সেটি সঠিকভাবে জানা না গেলে এর ভয়াবহতা প্রতিরোধে কোনো পদক্ষেপ নেয়াও সম্ভব নয়। এটি ছোঁয়াচে কিনা সেটিও জানা যায়নি এখন পর্যন্ত! কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোনো মাছের বাজারে যাননি কিংবা কোনো পশুপাখির সংস্পর্শেও আসেননি। রোগটি যদি ছোঁয়াচে হয় সেক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তা এখনো জানানো হয়নি। হাঁচি, কাশি থেকে যদি ভাইরাসটি ছড়ানো শুরু করে তবে তা যেকোনো সময়ে মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। এই কারণে ভাইরাসটিকে হালকাভাবে নেয়া উচিত হবে না।

ইউহান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি প্রায় দুই কোটি যাত্রী ব্যবহার করে থাকেন। চীনা নববর্ষকে সামনে রেখে লাখ লাখ মানুষ ভ্রমণ করছে সেদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাই চলাচলে জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। সংক্রমণ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় সব চীনা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

আইইডিসিআর অর্থাৎ বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। চীন থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া যারা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা যেমন জ্বর, কাশি, গলাবাথ্যা এসব নিয়ে আসছেন তাদেরকেও স্ক্যান করা হচ্ছে। আইইডিসিআর বলছে, কারো শরীরে করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে তারা অবশ্যই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখবেন। এবং এ ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছেন। এজন্য তারা চারটি হটলাইন চালু করেছেন। করোনাভাইরাসের আলামত পাওয়া গেলে ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫ এই চারটি নাম্বারের যেকোনো একটিতে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। 

সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বিষেশজ্ঞরা বলছেন, জীবন্ত পশুর অনিরাপদ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পাশাপাশি; হাঁচি, সর্দি-কাশি, ঠান্ডায় ভুগছে এমন কারো ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে না যাওয়াই শ্রেয়। প্রয়োজনে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। 

তথ্যসূত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিবিসি।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা