করোনাভাইরাস, সৌদি আরবের পরিস্থিতি এবং হজ বাতিলের যত ঘটনা
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

অতীতেও হজ্ব বাতিল হয়েছিল। ইসলাম অবাস্তব কোনো ধর্ম না, এলিয়েনদের জন্য আসা ধর্ম না। এটা মানুষের জন্য আসা ধর্ম। এবং মানুষের সাধ্যের বাইরে এখানে কিছু করতে বলা হয়নি।
সৌদি আরব সমগ্র মক্কা এবং মদিনায় ২৪ ঘণ্টা কারফিউ জারি করেছে। পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এ কারফিউ বলবৎ থাকবে।
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরেই সৌদি আরবসহ অধিকাংশ আরব এবং মুসলিম রাষ্ট্রে মসজিদগুলো বন্ধ আছে। দুই পবিত্র মসজিদে শুধু খুবই সীমিত আকারে অল্প কিছু মানুষের নামাজ পড়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এখন ২৪ ঘণ্টা কারফিউর ফলে সেটা আরো সীমিত হয়ে যাবে।
সৌদি আরব এ বছর হজ্ব বাতিল করার কথাও বিবেচনা করছে। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, এবং আল্লাহ্ না করুক, যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তাহলে হজ্জ্ব বাতিল হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা আছে। সৌদি হজ্বমন্ত্রী মানুষকে এখনই হজ্বের প্রস্তুতি নিতে নিষেধ করেছেন।
হজ্বের মৌসুমের এখনও বেশ দেরি আছে। এবং আশার বাণী হচ্ছে, চীন, ইতালি, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পিকে পৌঁছানোর পর এখন তা নিচের দিকে নেমে আসছে। আশা করা যায়, আমেরিকা, ফ্রান্স-সহ যেসব দেশে নতুন কেসের সংখ্যা এখনও ঊর্ধ্বমুখী, তাদের ক্ষেত্রেও আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এই হার পিকে পৌঁছে এরপর কমতে শুরু করবে।
এরমধ্যে যদি সৌদি আরবের নিজের ঝুঁকিও আরো কমে যায়, তাহলে শেষপর্যন্ত হয়তো এরকম একটা চিত্র হতে পারে যে, হজ্ব হয়তো পুরোপুরি বাতিল করা হবে না, শুধুমাত্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে হজ্বযাত্রীদের আগমন নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
কিন্তু যদি শেষপর্যন্ত হজ্ব বাতিল করতেই হয়, সেটা হবে প্রায় দেড়শ বছরের মধ্যে হজ্ব বাতিলের প্রথম ঘটনা। হ্যাঁ, হজ্ব বাতিল খুবই ব্যতিক্রম ঘটনা। কিন্তু এর আগেও বিভিন্ন সময় হজ্ব বাতিল করা হয়েছিল। প্রথমবার বাতিল হয়েছিল ৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে, আব্বাসীয়দের সময়, ইসমাঈল বিন ইউসুফের মক্কা আক্রমণের কারণে।
এরপর বন্ধ হয়েছিল ৯৩০ সালে। কট্টর শিয়া গ্রুপ কারমাতিদের আক্রমণে সে বছর ৩০,০০০ হাজি শহিদ হয়েছিল। তারা হাজিদেরকে হত্যা করে তাদের লাশ জমজম কুপে ফেলে দিয়েছিল। ফিরে যাওয়ার সময় তারা সাথে করে হাজরে আসওয়াদ বাহরাইনে নিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে হাজরে আসওয়াদ পুনরুদ্ধার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এক দশক হজ্ব বন্ধ ছিল।

৯৮৩ থেকে ৯৯০ সাল পর্যন্ত হজ্ব বাতিল হয়েছিল রাজনীতির কারণে। ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক আব্বাসীয় খিলাফত এবং মিসর ভিত্তিক ফাতেমীয় খিলাফতের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে সেবার ৮ বছর পর্যন্ত হজ্ব বন্ধ ছিল।
শুধু যুদ্ধ-বিগ্রহ না, মহামারীর কারণেও হজ্ব বাতিল হয়েছিল। প্রথমে ১৮১৪ সালে হেজাজ প্রদেশে প্লেগের কারণে ৮,০০০ মানুষ মারা যাওয়ায় হজ্ব বাতিল করা হয়।
এরপর ১৮৩১ সালে ভারত থেকে যাওয়া হজ্বযাত্রীদের মাধ্যমে মক্কায় প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে এবং চারভাগের তিনভাগ হাজী মৃত্যুবরণ করে। ফলে সে বছর হজ্ব বাতিল করা হয়। এছাড়াও ১৮৩৭ থেকে ১৮৫৮ সালের মধ্যে প্লেগ এবং কলেরার কারণে তিন বারে মোট ৭ বছর হজ্ব বন্ধ ছিল।
এবারও যদি হজ্ব বন্ধ হয়, সেটা হবে খুবই দুঃখজনক একটা ঘটনা। কিন্তু একইসাথে এটাও লক্ষ্যণীয়, অতীতেও হজ্ব বাতিল হয়েছিল। ইসলাম অবাস্তব কোনো ধর্ম না, এলিয়েনদের জন্য আসা ধর্ম না। এটা মানুষের জন্য আসা ধর্ম। এবং মানুষের সাধ্যের বাইরে এখানে কিছু করতে বলা হয়নি।
সুতরাং অনেকে যেরকম বক্তব্য দিচ্ছে, মসজিদ গেলে ভাইরাস আক্রমণ করবে না, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নাই। খোদ হারাম শরিফেও আক্রমণ হতে পারে, সেখানে উপস্থিত হাজিরাও মারা যেতে পারেন, তাদের এবং পরবর্তীতে তাদের কারণে বিশ্বব্যাপী আরো বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলে আলেম-ওলামারা হজ্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। যেরকম সিদ্ধান্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলেমরা দিয়েছেন মসজিদে নামাজ না পড়ার ব্যাপারে।
তথ্যসূত্র: হারাম শরিফের ওয়েবসাইট, মিডল ইস্ট আই, টিআরটি, দ্য নিউ আরব।