পুরস্কার না দেন, একটা ধন্যবাদ তো এই মানুষগুলোকে দিতেই পারেন!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
পাকিস্তান, মরক্কো’র মতো দেশগুলো থেকে উদ্ধারকারী দল পাঠানো যায়নি চীনে, অথচ এই মানুষগুলো ঠিকই জীবনের পরোয়া না করে উহান শহরে উড়ে গেছেন আটকে পড়া বাংলাদেশী নাগরিকদের উদ্ধার করে আনতে...
ছবিতে যে মানুষগুলোকে দেখতে পাচ্ছেন, এদের প্রত্যেকেই একেকজন অসম সাহসী বীর। মৃত্যুকে তারা আলিঙ্গন করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন, কোন স্বার্থ ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার এই সময়ে চীনের উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী এবং পর্যটকদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে যে বিশেষ বিমানটা পাঠানো হয়েছিল, সেটার পাইলট এবং কেবিন ক্রু ছিলেন তারা।
সঙ্গে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর কয়েকজন চিকিৎসকও। তারাও সমান ঝুঁকি নিয়েছেন আক্রান্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে। নিরাপদে প্রায় সাড়ে তিনশো আটকে পড়া বাংলাদেশীকে চীন থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন তারা, সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ঢাকার আশকোনার হজ ক্যাম্পে।
আপনি বলতেই পারেন যে, এটা তাদের কর্তব্য, দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে। কিন্ত দায়িত্বের একটা সীমা আছে, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করার সাহস খুব কম মানুষের থাকে। করোনাভাইরাসের আক্রমনে উহান শহরটা এখন মৃত্যুকূপের মতো একটা জায়গা, কোটি টাকা দিলেও কেউ রাজী হবে না এখানে যেতে। পাকিস্তান, মরক্কো’র মতো দেশগুলো থেকেই যেমন উদ্ধারকারী দল পাঠানো যায়নি চীনে।
পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের দুইটা স্পেশাল বিমানে করে চীনে আটকে পড়া পাকিস্তানী নাগরিকদের ফেরানোর কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্ত সে দেশ থেকে কোন পাইলট বা এয়ার ক্রু চীনে যেতে রাজী হননি। পাকিস্তান এখন চেষ্টা করছে বিমান বাহিনী থেকে পাইলট এবং কেবিন ক্রু ম্যানেজ করার, কিন্ত এখনও আটকে আছে সেই কাজ। সেকারনে ভারত এবং বাংলাদেশ যখন নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে এনেছে, তখন পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা দুঃখভরা চোখে চেয়ে দেখেছেন তাদের চলে যাওয়া।
সাড়ে তিনশো বাংলাদেশী নাগরিককে নিরাপদে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার কাজটা করেছেন ক্যাপ্টেন মাহতাব, ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক, ক্যাপ্টেন ইলিয়াস, ক্যাপ্টেন মেহেদী। তাদের সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েকজন ক্রু এবং কেবিন মেম্বার। তাদের সঙ্গে ছিলেন সেনাবাহিনীর মেজর ডা. মিনহাজ, ডা. ফাতেহা, ৩৩তম বিসিএস কর্মকর্তা ডা. মাহবুব, তারা সেই বিশেষ বিমানে চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে গিয়েছেন জীবনের ঝুকি নিয়ে।
চীনের নতুন বছরকে বরণ করার উৎসব মাটি হয়ে গেছে, লাখ লাখ পর্যটক বাতিল করেছেন নিজেদের ভ্রমণ। কয়েকদিন আগে উহানে গিয়েছিলেন সিএনএনের এক সাংবাদিক, উহানকে ভুতুড়ে একটা শহর বলে মনে হয়েছে তার কাছে। শহরটাকে সিল করে দেয়া হয়েছে, ভেতরে ঢুকতে পারা যাবে, কিন্ত বের হওয়া যাবে না- ভাইরাস যাতে বাইরে না ছড়ায়। বাংলাদেশী নাগরিকেরা ফেসবুকে জানাচ্ছিলেন, তারা বাইরে বের হতে পারছেন না, তাদের খাবার ফুরিয়ে আসছে- সব মিলিয়ে ভয়াবহ একটা অবস্থা তৈরী হয়েছিল।
সেখান থেকে সাড়ে তিনশো মানুষকে বের করে আনাটা প্রচণ্ড ঝুঁকির কাজ ছিল। এই সাড়ে তিনশো জনের মধ্যে একজনও যদি ভাইরাস ইফেক্টেড থাকেন, তাহলে বাকী সবার প্রাণ বিপন্ন হবার সম্ভাবনা আছে। এতকিছু জেনেও মানুষগুলো ছুটে গেছেন উহানে, উদ্ধার করে এনেছেন বাংলাদেশীদের। মৃত্যুকে তারা পরোয়া করেননি। এজন্যে কিন্ত বাড়তি কোন বোনাসও পাননি তারা।
এই মানুষগুলো ফলাও করে নিজেদের বীরত্বের গল্পটা কাউকে বলে বেড়াবেন না, কোন পদকের আশা তারা করবেন না। কিন্ত সাড়ে তিনশো মানুষকে উহান থেকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্যে একটা ধন্যবাদ তো তাদের আমরা দিতেই পারি, তাই না?