চীনের ৩% মৃত্যু হার, করোনার ভয়াবহতা ও আমাদের অমার্জনীয় ভুল!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
চীনে মৃত্যুহার ৩% ছিল এটা সত্য। ভুলটা হচ্ছে চাইনিজদের সাথে জগতের অন্য কোনো জাতির তুলনা হয় না। বলা হয়ে থাকে দুনিয়াতে চাইনিজরাই হলো একমাত্র জাতি যারা বৃদ্ধ হয় না। একজন ৯০ বছরের চাইনিজ আমাদের দেশের সবচেয়ে শক্ত সামর্থ্য যুবকের চেয়েও গায়ে বেশি জোর রাখে।
করোনার ভয়াবহতা পরিমাপ করতে কয়েকটা জায়গায় বোধহয় বড়ো ভুল হয়ে গেছে। করোনাকে আমরা মারাত্মক মরণঘাতী এখনো ভাবছি না। কারণ হচ্ছে চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনায় মৃত্যু হার ছিল মাত্র ৩%। মানে ১০০ জন আক্রান্ত হলে মারা গেছেন ৩ জন।
এই তথ্যটা বিরাট একটা ফাঁদ। এখানেই সম্ভবত অনেক বড়ো ভুল হয়ে গেছে। ভুলটা কেউ ধরতে পারছেন কিনা বুঝতে পারছি না।
চীনে মৃত্যুহার ৩% ছিল এটা সত্য। ভুলটা হচ্ছে চাইনিজদের সাথে জগতের অন্য কোনো জাতির তুলনা হয় না। বলা হয়ে থাকে দুনিয়াতে চাইনিজরাই হলো একমাত্র জাতি যারা বৃদ্ধ হয় না। একজন ৯০ বছরের চাইনিজ আমাদের দেশের সবচেয়ে শক্ত সামর্থ্য যুবকের চেয়েও গায়ে বেশি জোর রাখে। যারা চাইনিজদের সাথে মিশেছেন, এক সাথে কাজ করেছেন তারা জানেন এই কথার সত্যতা।
চাইনিজদের ইমিউনিটি দিয়ে করোনা ভাইরাসকে মাপা ভুল হয়েছে। করোনা মোটেও ৩% কেস না। করোনাকে যতটা নিরীহ ভাবা হচ্ছে সে ততটা নিরীহ না।
একটা হিসেব দিলে ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে যাবে। করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যার হিসেবে না গিয়ে কতজন রিকোভার করেছেন তার সাথে কতজন মারা গেছেন এই সমীক্ষাটা একটু দেখি।
প্রথমে চীনের উপাত্ত দিই। চীনে মোট ৮০ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ৬৪১১৯ জনই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বিপরীতে মারা গেছেন ৩১৭৭ জন। সুস্থ হওয়ার বিপরীতে মৃত্যুর হার ৪.৯৫%।
ইতালীতে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজার। রিকোভার করেছেন ১২৫৮ জন। মারা গেছেন ১০১৬। রিকভার করার বিপরীতে মৃত্যুর হার ৮০%! স্পেন ১৮৯ জন রিকোভার করেছেন। মারা গেছেন ১২০ জন। রিকোভার করার বিপরীতে মৃত্যুর হার ৬৩%।
ইরানে ৩৫২৯ জন রিকোভার করেছেন, মারা গেছেন ৫১৪ জন। মৃত্যুর হার ১৩%।দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫১০ জন সুস্থ হবার বিপরীতে মারা গেছেন ৭১ জন। মৃত্যুর হার ১৪.৫৬%। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দুইটা উন্নত দেশে।
ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মাত্র ১২ জন। বিপরীতে মারা গেছেন ৬১জন। সুস্থ হবার সাথে মৃত্যুর হার ৫১০%! আমেরিকার মতো দেশে ৩১ জন সুস্থের বিপরীতে ৪১ জন মারা গেছেন। ১৩২% মৃত্যুর হার! চীনের সাথে বাকি দেশগুলোর পার্থক্য ধরা যাচ্ছে?
এখানে একটা ফাঁক থেকে যায় অবশ্য। চীনে মহামরী শেষের দিকে, এজন্য সুস্থ মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বাকি দেশগুলোতে সবচেয়ে এক্টিভ অবস্থায় আছে করোনা, তাই মৃত্যুর হার চীনের তুলনায় বেশি হবারই কথা।
কিন্তু শংকা তাতে কাটবে না। ইতালির কথাই ধরুন। এই মুহুর্ত থেকে তাদের দেশে যদি একজনও মারা না যায়, আক্রান্তদের সবাই সুস্থ হয়ে যায়...তারপরও তাদের মৃত্যুর হার হবে প্রায় ৭% যেটা গড় ৩% এর চেয়ে অনেক বেশি।
কেউ মরবে না, সবাই সুস্থ হয়ে যাবে এটা একেবারেই অলৌকিক আশা। স্পেনে আজ দুপুরে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল ৮৭ জন। এই মুহুর্তে সেটা ১২০ এ গিয়ে ঠেকেছে।
৩৩ জন নতুন মৃতের বিপরীতে সুস্থ হয়েছে কয়জন? একজনও না। সত্যি শুনছেন, এক জনও নতুন করে রিকোভার করেনি। বোঝা যাচ্ছে ভয়াবহতা? আরো কিছু বলি।
মার্চের সাত তারিখ বিশ্বব্যাপী মারা গিয়েছিলেন মোট ১০৫ জন। তার এক সপ্তাহ আগে ফেব্রুয়ারীর ২৭ তারিখ মারা গিয়েছিলেন মাত্র ৩৭ জন। আর গতকাল ১২ তারিখে মারা গেছেন ৩৫৪ জন। তার আগের দিন ১১ তারিখে ৩৩৭ জন। ১০ তারিখ ছিল ২৭১ জন।
কতটা মরণঘাতী হয়ে ধেয়ে আসছে করোনা বোঝা যাচ্ছে? রিকোভার হওয়া কিংবা মারা যাওয়া মোট কেসের মধ্যে দুই দিন আগেও ফ্যাটালিটি ছিল ৬%। দুই দিনের ব্যবধানে এটা ৭% ছাড়িয়ে গেছে।
এই ১% মানে কিন্তু বিরাট বড়ো পরিবর্তন। হয় চাইনিজরা দুনিয়ার বাকিদের চেয়ে আলাদা, নয়তো করোনা আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে গেছে। যেটাই হোক না কেন, করোনার ভয়াবহতা তো টের পাওয়া গেল, তাই না?
এবার করোনা ব্যাপারে একটা ম্যাসিভ ভুলের জায়গা বলি। ফেসবুক জুড়ে অসংখ্য লেখা ও ভিডিও সূত্রে প্রায় সবাই জেনে গেছে করোনা বুড়োদের আজরাইল। আমাদের মতো ইয়াং জেনারেশন সেইফ। এটা জানার পর থেকে সবার মধ্যে কেমন জানি স্বস্তি নেমে এসেছে।
আশ্চর্য! বুড়ো মানুষজন দেশের বাইরের কেউ, পরিবারের বাইরের কেউ নাকি আমাদের বাইরের কেউ? তাদের মৃত্যু আমাদের কেন ভাবাবে না?
উন্নত দেশের বৃদ্ধ মানুষদের চেয়ে আমাদের দেশের বৃদ্ধরা অনেক বেশি ভালনারেবল। খোঁজ নিলে দেখা যাবে দেশের প্রতিটা পরিবারে অন্তত একজন বৃদ্ধ আছেন যিনি হার্ট, ফুসফুস, কিডনি, মস্তিস্ক বা ক্যান্সারজনিত রোগে ভুগছেন। বেশিরভাগ পরিবারে আছেন একাধিকজন। স্বাস্থ্যগত কেয়ারিং এ উন্নত দেশের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে আছি আমরা। পারিবারিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের চিকিৎসা বা কেয়ারিং কেমন হয় সেটা আমরা জানি না?
দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, স্পেন, আমেরিকা, ফ্রান্সের মতো দেশে যদি এই হারে মানুষ মারা যায়, কোন হিসেবে মনে হয় আমরা ছাড় পেয়ে যাব?
আপনার বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী...সবাইকে করোনার হাতে সঁপে দিতে আপনার খারাপ লাগবে না?
আরেকটা আশংকার কথা শোনাই। করোনারা আপডেট সবাই যে সাইট থেকে নিচ্ছেন সেখানে দেখবেন ক্রিটিকাল কেইস বলে একটা সারি আছে। ক্রিটিকাল মানে যাদের অবস্থা খুবই খারাপ, আইসিইউ বা লাইফ সাপোর্ট লাগবে এমন।
ধরুন আমাদের দেশে চীন ইতালি বা ইরান লেভেলে না এলেও স্পেন-জার্মানি বা আমেরিকা লেভেলে একটা হালকা ঝড় আসল করোনার। কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন?
দেশে সরকারি হাসপাতালে তীব্রভাবে আইসিইউ সংকট আছে। স্বাভাবিক অবস্থাতেই রোগীদের তিন স্থরের লাইন পড়ে আইসিইউ এ। মানে যারা সিট পেয়েছেন সেই অভাগা ভাগ্যবানদের পরেও প্রতি সিটের বিপরীতে মাঝে মাঝে দুইজন ক্যান্ডিডেট ওয়েটিং এ থাকেন। সব মিলিয়ে কয়টা সিট আছে সেটা আংগুল গোনেই বলে দেয়া যাবে।
বেসরকারি হাসপাতালে কেমন সিট আছে আমার ধারনা নেই। তবে খুব বেশি যে নেই এ কথা বলে দেয়া যায় এবং দেশের ৯৫% মানুষই এই খরচ সংকুলান করতে পারবেন না।
এবার ভাবুন, যদি হালকা একটা অ্যাটাকও আসে, রোগীদের আর্তনাদ আর স্বজনদের আহাজারিতে অবস্থাটা কই দাঁড়াবে? মাত্র গত বছর ডেংগির হামলা সামাল দিতে গিয়ে ডাক্তার-নার্সদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালগুলো হয়ে গিয়েছিল ঈদের সিজনের লঞ্চ-ট্রেন।
যদি খোদা না করুক করোনা চলে আসে, কে সামাল দেবে এসব? কী প্রস্তুতি আছে আমাদের?
চারটা হাসপাতাল? কয়টা সিট আছে চারটা হাসপাতালে?
পাশাপাশি আরেকটা বোনাস শংকা হলো, ডেংগির সিজন চলে এসেছে। গত বছরেই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এ বছর ডেংগি আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবে। গত মাসেও একই আশংকা করেছেন তারা। বলেছিলেন, মার্চ থেকেই শুরু হবে খেলা।
যদি দুই গজব এক সাথে আসে, সামলানো সম্ভব? ওয়েল, তাহলে করনীয় কী?
সত্যি বলতে আম জনতার তেমন কিছুই করার নেই। এই যে যেসব সতর্কতা আম জনতাকে দেখাতে বলা হচ্ছে, এগুলো হাস্যকর ও কৌতুক ছাড়া কিছুই না।
বলা হচ্ছে দরকার ছাড়া ঘরের বাইরে বের হবেন না। আরে ভাই ঢাকা শহরে কার এমন তেল আছে যে দরকার ছাড়া হাওয়া খেতে বের হবে? আপনি স্কুল-কলেজ- সবই খোলা রাখছেন, মানুষকে বের হতে হবে না?
বাচ্চাকে স্কুলে কে দেবে? কে আনবে? কে বাজার করবে? কে অফিস করবে? এক মিটারের মধ্যে কাউকে আসতে দেবেন না। এই লাইন পড়তে যে সময় লাগবে, ঢাকার রাস্তায় এই সময়ের মধ্যে ৬ জন আপনাকে ধাক্কা দেবে। রাস্তায় বের হলে এসব ফলো করার উপায় আছে?
গণপরিবহন এভইড করুন। আচ্ছা, কার কার বাবার প্রাইভেট হেলিকপ্টার আছে যে গণপরিবহন এভইড করবে? পাবলিক বাস ছাড়া ঢাকার ৯০% মানুষ অচল। গণপরিবহন এড়িয়ে চলার উপায় আছে?
হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মেজে মোছা, হ্যান্ডশেক না করা... বিশ্বাস করুন কোনোটাই মানা সম্ভব না। শুনছি আমাদের দেশের কাগুজে মুদ্রা সবচেয়ে বেশি ত্যানা হয়। একেকটা দশ-বিশ টাকার নোটে হাজার হাজার অনুজীব সংসার করতে পারবে। একজন ব্যবসায়ীর কথাই ধরুন, টাকা গুনে প্রতিবার হাত ধোয়া সম্ভব? মুখে হাত না দিয়ে থাকা সম্ভব?
স্যানিটাইজার বাজার থেকে হাওয়া। যারা ভ্রাম্যমাণ কোর্ট করতেন, সেই তিনজনকে বদলি করার সুপারিশ দিয়েছে কোর্ট। নিরাপদ খাদ্যের জন্য যে সরকারি কর্মকর্তা জিহাদ করে আসছিলেন এতদিন, শুনলাম উনাকেও পদ ছাড়া করা হয়েছে। এগুলো রিলেটেড কিন্তু।
করোনা প্রতিরোধের ভার আম জনতার উপর ছেড়ে দিলে ভুগতে হবে। সরকারের উচিত এখনই উদ্যোগী হওয়া। এখন মানে এখনই।
করোনা ম্যাসিভ আকারে ছড়িয়ে পড়লে দেশ শ্মশান হয়ে যাবে ভাই। আমাদের দেশের ঘনত্ব, মানুষের তুলনায় হেলথ ফেসিলিটি হিসাব করলে আমাদের অবস্থা দুনিয়াতে সবচেয়ে খারাপ হবার কথা। আমরা বিশ্বের দারিদ্রতম দেশ না, আমাদের হেলথ র্যাংকিং ও ভালো আছে...এসব স্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য তৃপ্তিদায়ক হলেও করোনার মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমরা নতজানু হয়ে পড়ব।
এখন করণীয় একটাই। করোনাকে দেশে ঢুকতে বা বাড়তে দেয়া যাবে না। আম জনতা হাত ধুতে থাকুক, দরকার আছে। পাশাপাশি আওয়াজ তুলুন।
এয়ারপোর্ট-বন্দর-কাস্টমস এ স্ক্যানার বসাতেই হবে। জনতাকে আশ্বস্ত করতে হবে যে স্ক্যানার কাজ করছে। করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে যারা আসছে তাদেরকে মনিটর করতে হবে।
গত কালকে আমাদের এলাকায় নিউইয়র্ক প্রবাসী এসেছেন। বাজারের প্রতিটা লোকের সাথে সমানে কোলাকুলি করছেন ভদ্রলোক। কিসের আইসোলেশন, কিসের কি, উনাকে নাকি স্ক্যানই করা হয়নি।
প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউ গুলোতে সরকার সাময়িক হস্তক্ষেপ করুক। জরুরি মুহুর্তে যেন এগুলোকে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা যায় এই ব্যবস্থা করা হোক।
স্কুল-কলেজ এক মাস বন্ধ রাখলে খুব বেশি ক্ষতি হবে? ইউরোপের সব খেলার লীগ বন্ধ। ইন্ডিয়া-অস্ট্রেলিয়ায় খেলা হচ্ছে দর্শকশুন্য মাঠে। আইপিএল স্থগিত। আর আমাদের স্কুলগুলোতে এখনো প্রাত্যহিক সমাবেশ পর্যন্ত করা হচ্ছে।
সংশয়বাদীরা বলছেন দেশে করোনা ব্যাপকভাবেই আছে। সরকার হাইড করে রাখছি। এই দাবীকে যদি পুরোপুরি মিথ্যে বলি, তবুও সতর্ক হতে ক্ষতি কী?
আমরা চীন না, আমরা ইতালি-স্পেন-আমেরিকা এমনকি ইরানও না। আমরা প্রতি বর্গ কিলোতে ১৫০০ জন মানুষের বাংলাদেশ। আমরা বিশ্বের অন্যতম কুখ্যাত নীতি নৈতিকতাহীন দেশ।
আজরাইল আসার পর দোঁড়াদৌড়ি না করে আগে থেকেই দৌঁড়টা শুরু হোক।
আমি কাউকে আতংকিত করতে চাইছি না। একজন ডাক্তার রোগীকে "কিচ্ছু হবে না, ভাববেন না" বলেন সান্ত্বনা দেয়ার জন্য, মনে জোর দেয়ার জন্য। অসুখ যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, তাই বলে ডাক্তারকে বিন্দাস থাকলে কিন্তু হয় না। সম্ভাব্য সকল ঝুঁকি দেখাই একজন আদর্শ ডাক্তারের গুণ।
আমাদের সরকার বা প্রশাসন এখন ডাক্তারের ভূমিকায়। আমাদেরকে আতংকিত না হতে বলছেন, ফাইন। তাই বলে আপনাদের মধ্যে এত ড্যাম কেয়ার ভাব কেন?
কেন "উন্নত দেশের চেয়ে আমাদের প্রস্তুতি ভালো" বলে সার্কাস করছেন? ভয় লাগে না? ইরানের উপ প্রধানমন্ত্রী মারা গেছেন। জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী পজেটিভ। ট্রুডো আছেন আইসোলেশনে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট করোনা আক্রান্ত। আমাদের ওবায়দুল কাদের সাহেব হার্টের রোগী। বয়সও ৫০ প্লাস। করোনা ধরে ফেললে কী হবে?
আমি আতংকিত না। তবে আমার মধ্যে অবশ্যই উদ্বেগ কাজ করছে। আমার ঘরে বৃদ্ধ বাবা মা আছেন। দুজনই অসুস্থ। আমার ধারণা অনেকের পরিবারেই অসুস্থ বাবা মা আছেন। প্রিয় স্বজনের খারাপ পরিণতি ভাবতেই পারছি না। করোনা না আসুক। করোনা নিয়ে যে আশংকা তার কিছুই না ঘটুক।
কিন্তু প্রশাসন থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আশা করছি। মুজিব বর্ষের আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। কৃতজ্ঞতা সংশ্লিষ্ট সবাইকে। আরো কিছু বোল্ড পদক্ষেপ নিন যেটা দেখে অন্তত আশ্বস্ত হই, আমরা করোনা দানবের জন্য প্রস্তুত আছি।
পরিশিষ্ট- পৃথিবীর কেউই ভুল করে নাই। আমরা করেছি। WHO এখন এটাকে pandemic disease ঘোষণা করেছে। কাবা ঘরে যেখানে তাওয়াফ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেখানে আমাদের লোকজন বলছে গরমে করোনা হয় না, মসজিদে খুতবায় বলছে পাঁচবার অজু করলে করোনা হয় না । আমরা সবসময় সবকিছু ফাজলামি মনে করি, এখনো তাই করছি । এয়ারপোর্টে স্ক্যানার নষ্ট । লোকজন রাস্তাঘাটে নির্দ্বিধায় কফ-থুতু ফেলে যাচ্ছে, একজন আরেকজনের সাথে সিগারেট- বিড়ি শেয়ার করে খেয়ে যাচ্ছে, আমরা meme বানাচ্ছি।
আমাদের মত জাতি মনে হয় আর নেই । এই অবস্থায় উচিৎ ছিল বিদেশ ফেরত সকলকে ১৫ দিনের বাধ্যতামূলক কোররেন্টাইন এ রাখা। তা না করে বলা হচ্ছে "আগামী ১৫ দিন বাসার বাইরে যাবেন না।" ব্যস শেষ । বাসায় যেয়ে উনি যে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে করোনা ছড়াবে তা মনে হয় কারো জানা নেই। উচিৎ ছিল রাস্তায় থুতু ফেললেই আইন প্রয়োগ করা। এটার কথা আর না ই বলি । একটা পোস্টে থুতু ফেলার বিরোধিতা করায় আমাকে অনেক তর্ক করতে হয়েছে। লোকজনের কমেন্ট দেখে মনে হচ্ছিল রাস্তায় কফ-থুতু ফেলা সবার মৌলিক নাগরিক অধিকার। এটার প্রয়োগ করতেই হবে।
প্রশাসন নিজে টাইট না দিলে এইসব পোস্ট দিয়ে কোনো লাভ নাই। এসব বাদ দিয়ে চিকিৎসকেরা বরং নিজেদের ঘুম হারাম করে মানবসেবা করার প্রস্তুতি নেন। ভুলেও আবার এপ্রিসিয়েশন আশা করবেন না। বরং কেউ মারা গেলে তার আত্মীয়-স্বজনদের মার থেকে কিভাবে বাঁচবেন সেই বুদ্ধি করেন।
কৃতজ্ঞতা- তৌহিদ আলম ফাহিম