করোনা যে এই দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা বুঝতে তো কারো আর সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে এতো লুকোচুরি করার মানে কী?

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) এক পরিচালক আজ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তাঁর খুব একটা বয়স হয়নি। কোনো রোগও ছিল না। তিনি স্বাস্থ্যবান মানুষই ছিলেন। এরপরও করোনার কাছে তাকে হার মানতে হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আমরা কি জানতাম, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন?

করোনা আক্রান্ত রোগীর পরিচয় প্রকাশ করার হয়ত প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমরা তো জানি, কয়জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন, ডাক্তার কিংবা নার্স। তিনি তো বিসিএস ক্যাডার ছিলেন। আমাদেরকে তো এর আগে জানানো হয়নি যে বিসিএস ক্যাডারের কেউ করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

গতকাল রাতে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি প্রায় ১০ দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত। আজ জানতে পারলাম লিবিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি বোরিস জনসন

আজই আমার এক পরিচিত ভদ্রলোক জানিয়েছেন, তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হলের বন্ধু, যে কিনা বাংলাদেশে একটা উপজেলার ইউএনও; সে জানিয়েছে তার উপজেলায় ১০ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। অথচ দেশের কোনো তালিকায় এদের নাম নেই! কোথাও নাকি এদের হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না!

এর মানেটা আসলে কী? করোনা যে এই দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা বুঝতে তো কারো আর সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে এতো লুকোচুরি করার মানে কী? যে সরকারি কর্তা ব্যক্তিরা আপনাদের বুদ্ধি দিয়েছিল- সব কিছু চালু রাখতে; যারা আপনাদের বুদ্ধি দিয়েছিল পোশাক শ্রমিকদের গ্রাম থেকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে; তারা নিজেরা করোনা থেকে রক্ষা পাবে তো?

যারা এতোদিন ধরে বলে এসেছে- করোনা তেমন কিছু না। এটা আমাদের কিছুই করতে পারবে না! তারা এখন কোথায়? তারা নিজেরা রক্ষা পাবে তো এখন? মনে রাখবেন, এই ভাইরাস কোনো বৈষম্য করে না। একদম না।

আস্তে আস্তে কোন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা বরং বলি।

আজ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একজন মারা গিয়েছেন; কাল হয়ত পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনী'র কেউ মারা যাবে; এরপর ডাক্তার কিংবা নার্সদের মাঝ থেকেও কেউ মারা যাবে। এমনকি মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কেউ যদি আক্রান্ত হয়ে মোরে যায়, এতেও অবাক হবার কিছু নেই।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে আজ দুদক পরিচালক জালাল সাইফুর রহমান মারা গেছেন

ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এখন হাসপাতালে। এভাবে যখন নানান পেশার মানুষজন আক্রান্ত হবে; তখন তাদের মনোবল ভেঙে যেতে থাকবে। এতে করে তারা কাজ করার স্পৃহা হারিয়ে ফেলবে। অনেকের মাঝে মানসিক সমস্যা দেখা দিবে। এই সবই কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে হচ্ছে।

এদের মনোবল যাতে ভেঙে না পড়ে, এই জন্য এইসব দেশের সরকার নানান ভাবে চেষ্টা করছে তাদের উৎফুল্ল রাখতে। নইলে যে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। আর আপনারা কিনা ব্যস্ত- কীভাবে লুকানো যায়! কীভাবে গার্মেন্টস খুলে কিছু টাকার ফায়দা করা যায়! বেঁচে থাকলেই না টাকা! এরপর যখন অবস্থা আরো খারাপ হবে, তখন টাকা দিয়ে কী করবেন যদি মানুষই বেঁচে না থাকে? টাকা দিয়ে তো কিছু কিনতেও পারবেন না!

এখনই সকল সেক্টরের জন্য প্ল্যান "বি" তৈরি করে রাখুন। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে যদি কর্তা ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয় কিংবা মারা যায়; তাহলে কে হাল ধরবে; কার কাছে দায়িত্ব যাবে; সেই দায়িত্ব কীভাবে পালন করতে হবে ; সেই পরিকল্পনা আগেই নিয়ে রাখুন।

আর যদি সম্ভব হয়, আজ-কালের মাঝেই জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দিয়ে বলুন- এটি একটি যুদ্ধাবস্থা। তাই যুদ্ধের সময় ঠিক যেভাবে চলাফেরা করতে হয়, সেভাবেই আমাদের চলতে হবে, বাঁচতে হবে।

এই যুদ্ধ কবে শেষ হবে, সেটা কারও জানা নেই। মনে রাখবেন, প্রথম মহাযুদ্ধ কিংবা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও সবাই তাদের শত্রুদের দেখতে পেত। এই সব যুদ্ধের সময়ও কিছু নিয়ম সবাই মেনে চলত। এই যেমন যুদ্ধের মাঝেও কোন ভাবেই মানুষ চিকিৎসা দেবার জায়গা হাসপাতালে আক্রমণ করা যাবে না ইত্যাদি।

কিন্তু অদৃশ্য এই ভাইরাস কোন নিয়মই মানছে না। সে সবার আগে উল্টো হাসপাতালেই আক্রমণ করছে সেখানে থাকা চিকিৎসক-নার্সদের। তাই এই যুদ্ধ হবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের চাইতেও কঠিন এক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে। কোন ভাবেই মনোবল হারানো যাবে না। এখন আর সমালোচনার সময় নেই। বিভক্তির সময় নেই। এখন সবাইকে এক হয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে অদৃশ্য এই শক্তির বিরুদ্ধে জয়ী হবার জন্য।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা