রোহানকে দেয়া অডিওবার্তা- করোনা রূপকথা, কিংবা এক জটিল ধাঁধা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
যারা ডাক্তার এবং যারা প্রয়োজনে ডাক্তারদের শরণ নেন তারা জানেন গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়েই ডাক্তারেরা নিশ্চিত না হয়ে সিদ্ধান্ত দেন না। তাই এই অডিওবার্তা আমার কাছে কোন ডাক্তারের বার্তা মনে হয়নি। মনে হয়েছে উদ্দেশ্যমূলক কিছু।
কথিত রোহানকে দেয়া ডাক্তার পরিচয়ধারী কণ্ঠের একটা অডিওবার্তা পেয়েছি ইনবক্সে। বার্তাপ্রেরকরা উদ্বেগে, সন্দেহে; তাই এই বার্তা আমাকেও দিয়েছেন। অনেকেই পেয়েছেন এটা, ধারণা করি।
অডিওবার্তায় উল্লেখ অনেক রোগী মারা যাওয়ার যে তথ্য সেটা তাৎক্ষণিক ভাবে আমাকে থমকে দিয়েছিল। কিছুটা হলেও বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম। বিশ্বাসের কারণ সম্ভাব্য সকল বিপদ আমরা বিনা-যুক্তিতে বিশ্বাস। আমাদের জীবনে সুখের সময় বিচ্ছিন্ন ঘটনা, দুঃখ-জরা-খরা-রোগ-শোক যেন নিয়তি; এমনই ভাবি, এমনটাই ভেবে ভেবে দিন পার করি।
অডিওবার্তায় কথিত ডাক্তার মৃত্যুর তথ্য গোপনের কথা বলেছেন। কেন গোপন করা হচ্ছে সেটা জানেন না বলেও জানিয়েছেন। তিনি দুইজন করোনার রোগী রিফিউজ করেছেন বলে জানিয়েছেন; আরও জানিয়েছেন তিনজন ভর্তি আছে আর আরও দুইজন মারা গেছেন গত সপ্তাহে।
৩৫ সেকেন্ডের এই অডিওবার্তা পেয়ে যে কারও মনে প্রশ্ন জাগবে। প্রশ্নের অব্যবহিত পর বিশ্বাস করতে শুরু করবে যে সত্যি সত্যি অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক বিশ্বাসই। তবে ঘোর কাটার একটা পর্যায়ে বিশ্বাসের ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে গেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বুঝা উচিত যে, জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ হাসপাতালে হাজির হয়ে গেলেই সে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী নয়। আমার একাধিক ডাক্তার বন্ধুর মারফত জেনেছি অন্য অনেক রোগের প্রাথমিক লক্ষণও জ্বর; করোনার ক্ষেত্রেও একই। এজন্যে ডাক্তারেরা রোগ ধরতে পরীক্ষানিরীক্ষার ওপর জোর দেন।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই সময়ে আইইডিসিআর ছাড়া আর কোথাও করোনা শনাক্তের সুযোগ নাই। এটা অ্যাপোলো-ল্যাব এইড, ইউনাইটেড কিংবা আপনার জেলা-উপজেলার রহিমউদ্দিন ক্লিনিক যাই হোক। আর যে ডাক্তারেরা চিকিৎসা দেবেন তারাও নিশ্চিত হতে আইইডিসিআরের শরণাপন্ন হবেন। এখানে ডাক্তারদের কেউ করোনা সন্দেহ করতে পারেন, কিন্তু তাদেরকেও নিশ্চিত হতে হবে ওই পরীক্ষার পরেই। এর আগে কোনোভাবেই নয়।
রোহানের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে কথিত এই ডাক্তার যেভাবে নিশ্চিতভাবেই করোনা আক্রান্ত রোগী বলে সিদ্ধান্ত দিলেন সেটা প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রশ্নের জন্ম দেয় অডিওবার্তায় প্রকাশিত কথাবলার ভঙ্গিও। প্রশ্নের জন্ম দেয় পরিপার্শ্বও যেখানে মনে হয় প্রস্তুতি নিয়েই একটা রেকর্ড সম্পন্ন হলো যেখানে ওপারে আর কেউ ছিল না। এই বার্তার উদ্দেশ্য সচেতনতামূলক বার্তা বলেও মনে হয়নি, আমার কাছে এটাকে উদ্দেশ্যমূলক বলেই মনে হয়েছে।
যারা ডাক্তার এবং যারা প্রয়োজনে ডাক্তারদের শরণ নেন তারা জানেন গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়েই ডাক্তারেরা নিশ্চিত না হয়ে সিদ্ধান্ত দেন না। নিশ্চিত হতে তারা নানা পরীক্ষানিরীক্ষার কথা বলেন, ওসব পরীক্ষানিরীক্ষার তালিকা দেখে রোগী এবং ফেসবুকাররা ডাক্তারদের ‘কসাই’ আর ‘কমিশন খাওয়ার ধান্দা’ বলেও কটূক্তি করে, তবু তারা পিছপা হন না। আর ডাক্তারেরা এখন যখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৈশ্বিক মহামারি মোকাবেলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তখন কী করে তারা পরীক্ষা ছাড়াই কাউকে করোনা আক্রান্ত বলে সিদ্ধান্ত দেন? আমি নিশ্চিত ডাক্তারেরা সেটা দিচ্ছেন না। তাই এই অডিওবার্তা আমার কাছে কোন ডাক্তারের বার্তা মনে হয়নি। মনে হয়েছে উদ্দেশ্যমূলক কিছু।
কী হতে পারে এই উদ্দেশ্য? উত্তর খুঁজতে সম্ভবত হয়রান হতে হবে না; অডিওতেই আছে এর উত্তর!