করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে যেখানে বড় জমায়েত এড়িয়ে চলা জরুরি, সেখানে আমাদের সরকার পরের সপ্তাহে জয় বাংলা কনসার্ট এবং মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বৈশ্বিক জমায়েত করছে।

করোনায় আক্রান্তের পর সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকে রোগীর ফুসফুস। আর ঢাকা শহর হলো-  রিসার্চ করে পাওয়া এই পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে শহরগুলোর মধ্যে একটি, যা ইতোমধ্যে অনেক মানুষের ফুসফুসকে আশংকাজনক হারে খেয়ে ফেলেছে।

কিছুদিন আগে  ইউনিসেফের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল,  ঢাকা শহরের স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের প্রায় ২৫ শতাংশ শিশুর ফুসফুস পূর্ণ মাত্রায় কাজ করছে না, তাদের ফুসফুসের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ করছে।

খোদা না করুক, ঢাকায় আউটব্রেক শুরু হলে সবচেয়ে বাজেভাবে শিকার হবে এই বাচ্চারা। ছেলেমেয়েদের তাই হাইজিন সেন্স সম্পর্কে ধারণা দেয়া যেতে পারে আগে থেকেই। হাত পরিষ্কার রাখা, ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে স্যানিটাইজ করা কিংবা এইসংক্রান্ত যে সব নির্দেশনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বয়ানে মিডিয়াগুলো প্রচার করছে।

এরপরে সবচেয়ে ভালনারেবল গোষ্ঠী সম্ভবত বৃদ্ধরা এবং যাদের ইমিউন সিস্টেম খুব বাজে। ডায়বেটিস আর হার্টের সমস্যার বিবেচনায়ও ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে শহরগুলোর একটি। উনাদেরও স্পেশাল কেয়ার এবং গাইডলাইন ফলো করা দরকার।

এই বয়স ভিত্তিক ক্লাস্টার করা শুধু স্পেশাল ফোকাস গ্রুপ হিসেবে। তাছাড়া করোনা সব বয়সীদের বাজেভাবে ঘায়েল করে, যাদের হার্টের সমস্যা আছে।

গত ২০ বছরে হৃদরোগে মৃত্যুর হার বাংলাদেশি পুরুষের ক্ষেত্রে ৩২ গুণ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৪৭ গুণ বেড়েছে।  সবচেয়ে আতঙ্কের ব্যাপারটি হচ্ছে গত ৫ বছরে ঢাকায় আর চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে; এই হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ১০০ জনের ৬০ জনই তরুণ, যাদের বয়স ৩৫ বছরের কম। তো কেউই ঝুঁকির বাইরে না আসলে।

সরকার কী করছে জানি না, নিজেদের বড় জমায়েত এড়িয়ে চলা জরুরি। ভারত ইতোমধ্যে তাদের 'হোলি' উদযাপন বাতিল করেছে। কেননা বড় জমায়েত হলেই রোগ ছড়ায়। 

এখন অবধি চাইনিজ নববর্ষ উদযাপন থেকে সবচেয়ে বেশী মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়াতে। সেটিও একটি ধর্মীয় উৎসব থেকে। ইউরোপে সবচেয়ে বেশী ছড়িয়েছে ইতালিতে, সেটিও একটি উৎসব উদযাপন থেকে। ভারত তাই এই সপ্তাহের হোলি উৎসব বাতিল করেছে সরকারিভাবে।

আমাদের সরকার যেহেতু অনেক কনফিডেন্ট, তারা পরের সপ্তাহে জয় বাংলা কনসার্ট এবং  মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বৈশ্বিক জমায়েত করছে। এদিকে করোনা শনাক্তের জন্য বিদেশ থেকে কোটি টাকা খরচ করে আনা ৮ টি যন্ত্রের ৫ টিই অকেজো হিসেবে নিউজ আসছে। 

তাই নিজেরাই সবাই সতর্ক থাকুন। প্রার্থনা-দোয়া দরুদ পড়তে থাকুন। জাতির পিতার জন্য তো অবশ্যই, জাতির জন্যও।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা