গত দেড় মাসে আমরা মাত্র ১৩ হাজার পরীক্ষা করতে পেরেছি। অথচ কল এসেছিল লাখখানেক। ইতিমধ্যেই যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা কেমন চিকিৎসা পাচ্ছেন? আর পরবর্তীতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে সেক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতি কী?

করোনা রোগীদের চিকিৎসা আসলেই কি আমরা যথাযথভাবে করতে পারছি? নাকি আরও কিছু করার আছে? কথাটা বলছি কারণ গত এক মাসে মাত্র ৪২ জন মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এর বিপরীতে মারা গেছেন ৪৬ জন। তার মানে আমাদের সুস্থ হওয়ার চেয়ে মৃত্যু বেশি। আর আক্রান্ত তো বাড়ছে হুহু করে।

আমার মনে আছে, ৫ এপ্রিলের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছিল, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন। নয়দিন পর আজকের সংবাদ সম্মেলনে জানলাম, এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪২ জন। মানে গত এক সপ্তায় মাত্র ৯ জন নতুন করে সুস্থ হয়েছেন। অথচ এক সপ্তাহ আগে রোগী যেখানে একশর ঘরে ছিল এখন সেখানে হাজার ছাড়িয়েছে। যে ৯২৪ জন রোগী এখন চিকিৎসাধীন আছেন তারা কেমন চিকিৎসা পাচ্ছেন?

আচ্ছা রোগী যদি পাঁচ-দশ হাজার হয়ে যায় তখন? এই যে এক মাসে মাত্র ৪২ জন সুস্থ হলো তারা কী চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হলো নাকি এমনিতে? চিকিৎসা পেয়ে যদি সুস্থ হয় তাহলে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা এতো কম কেন? কোথাও কী আমাদের সংকট আছে? থাকলে জানতে চাই। আমাদের চিকিৎসকদের কিছু প্রয়োজন থাকলে তারা জানেন?

প্রথম থেকে বারবার বলছি, দিনে যেখানে আমাদের দশ-বিশ হাজার পরীক্ষা করা দরকার সেখানে গত দেড় মাসে আমরা মাত্র ১৩ হাজার পরীক্ষা করতে পেরেছি। অথচ কল এসেছিল লাখখানেক। এখনো দিনে দুই হাজার পরীক্ষা আমরা করতে পারছি না, অথচ আইইডিসিআরে কল আসছে রোজ প্রায় তিন হাজার। এভাবে করোনার পেছনে ছুটলে রোজ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে।

খুব সহজ করে আগেও বলেছি, ধরুন আজ যদি করোনায় ১০০ জন আক্রান্ত হয় ১০০ জনকেই আজ বা যতো দ্রুত সম্ভব শনাক্ত করে আলাদা করতে হবে। নয়তো এই ১০০ জন থেকে হাজার রোগী হয়ে যাবে। আমরা যখন হাজারজনের পরীক্ষা করবো তখন লাখ হয়ে যাবে। সেটা যেন না হয়। যে করেই হোক করোনার পেছনে ছুটতে হবে।

গতকাল অনলাইনে এক আলোচনায় আমার এক আশঙ্কার কথা বলেছি। আমি বলেছি এমন যেন না হয় আগামী মাসে সারা পৃথিবী করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে কিন্তু বাংলাদেশে শুধু মৃত্যু বাড়ছে, রোগী বাড়ছে। মনে রাখতে হবে, আমাদের ১৭ কোটি লোক এবং ভয়াবহ ঘনবসতির দেশ। আমাদের সৌভাগ্য এখনো ঢাকার বস্তিগুলোতে বা করোনা ছড়ায়নি। সেখানে ছড়ালে অবস্থা ভয়াবহ ভাবে।

রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে, আমরা শুরু থেকে যেমন একের পর এক ভুল করছি তেমনি যখন যে সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার আমরা তার থেকে এক থেকে দুই সপ্তাহ পর নিচ্ছি। অনেকদিন ধরে বলছি এখন জেলায় জেলায় পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়া দরকার। অথচ শুরুর একটি থেকে আমরা মাত্র ১৭ টিতে গেছি। আগামী সপ্তায় হবে আরও ১১ টি। আমি জানি না কতো কিট আমাদের কাছে আছে। আমাদের ৫০ থেকে ৬০ লাখ কিটও দরকার হতে পারে।

আবারও বলছি এই মুহুর্তে আমাদের করোনা পরীক্ষা, শনাক্ত এবং রোগীদের আলাদা করায় সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। এ ছাড়া কিন্তু আর কোন দাওয়াই নেই। আর এই কাজে আমরা যতো পিছিয়ে থাকবো ততো ঝুঁকি বাড়বে। আশা করছি নীতি নির্ধারকরা বিষয়গুলো বুঝতে পারছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বারবার বলছি, করোনার বিরুদ্ধে জিততে হলে করোনার আগেই ছুটতে হবে।

আরেকটা কথা, একটু দয়া করে দেশের স্বাস্থ্যখাতের দিকে নজর দিন। আগে থেকে সর্দি কাশি হলেই বড় কর্তারা বিদেশে ছুটতেন। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যখাতের সত্যিকারের উন্নয়ন মানে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানেসাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী সবাই চিকিৎসা করতে পারেন। আমাদের কিন্তু সেটার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আশা করছি করোনা থেকে আপনারা কিছু শিখছেন। কারণ, করোনা যেভাবে চোখে আঙুল দিয়ে সবকিছু দেখিয়ে দিচ্ছে এভাবে তো আর কেউ কোনদিন দেখায়নি। কাজেই এখনো না শিখলে আর কবে শিখবো আমরা! আল্লাহ আমাদের রহম করুন।

আরও পড়ুন- 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা