লাখ না হোক, এক দিনে দশ হাজার টেস্ট কি আমরা করতে পারি না?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
১৭ কোটি মানুষকে কী আমরা একদিনে পরীক্ষা করতে পারবো? না, আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। কিন্তু আমরা কী একদিনে ১০-২০ হাজার পরীক্ষা করতে পারি না?
করোনা শনাক্তের জন্য পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর দ্বিতীয় কোন বিকল্প এখন নেই। ভেবে দেখেন, একদিনেই ১১২ জন করোনা রোগী শনাক্ত। আচ্ছা এই ১১২ জনই কী গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছিলেন? না। এরা শুধু শনাক্ত হলেন ২৪ ঘন্টায়। এদের কেউ হয়তো তিনদিন আগে, কেউ হয়তো চারদিন আগে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায়। এর আগে তাহলে তাদের কাছ থেকে কতোজান আক্রান্ত হয়েছে? একজনের কাছ থেকে যদি ধরি দশজন তাহলেও হয়তো এক হাজার জন। কম বা বেশিও হতে পারে। এভাবে চললে তো মহাবিদপ। তাহলে উপায় কী? উপায় একটাই। বেশি বেশি পরীক্ষা।
সহজ করে বলি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১১২ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। আগের দুদিন ধরলে তিনদিনেই দুইশজনকে পাওয়া গেছে। এই দুইশজন থেকে কতো হাজার ছড়িয়েছে? করোনায় আক্রান্ত একজন যতোক্ষণ শনাক্ত ও আলাদা না হচ্ছেন ততোক্ষণে তার কাছ থেকে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হবেন। সে কারণেই বলছি, পরীক্ষা বাড়াতে হবে। দ্রুত শনাক্ত করতে হবে।
আরও ব্যাখা করছি। ধরেন এই দেশের ১৭ কোটি মানুষ। কাল একযোগে ১৭ কোটির করোনা পরীক্ষা করলেন। এর মধ্যে ১৭ লাখ করোনা শনাক্ত হলো। এই ১৭ লাখকে আলাদা করে রাখলেই ১৭ কোটি মানুষ নিরাপদ। এখন কথা হলো ১৭ কোটি মানুষকে কী আমরা একদিনে পরীক্ষা করতে পারবো? না আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। কিন্তু আমরা কী একদিনে ১০-২০ হাজার পরীক্ষা করতে পারি না?
ধরেন একদিনে যতো লোক তাদের লক্ষণ দেখে মনে করলেন তাদের করোনা হতে পারে তারা যদি হটলাইনে ফোন করেন সবার কী একদিনে পরীক্ষা করা অসম্ভব? কতো টাকা লাগবে সেটা করতে? এই যে শুরুর দিকে আমরা একটা পরীক্ষাকেন্দ্র রেখেছিলাম সেটা একটা বড় বোকামি। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলেছে, পরীক্ষা। পরীক্ষা। পরীক্ষা।
রাষ্ট্রকে বলবো, এখন অন্তত পরীক্ষার দিনে সর্ব্বোচ্চ নজর দিন। আমার যদি ভুল না হয়, এই মুহুর্তে সারাদেশে ১৭ টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা চলছে। এখনো সব জেলায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। নমুনা সংগ্রহের জন্য জনবল, গাড়ি ও সরঞ্জামের অভাব আছে। এসব সমস্যার সমাধান করা কী সম্ভব নয়? ১৭ টার বদলে একশটা স্থানে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা কী অসম্ভব? অন্তত প্রতি জেলায়।
আমি মনে করি সম্ভব। কয়েকদিন আগে দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, তারা এই পরীক্ষা করতে পারবে। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও একই কথা বলছে। গণস্বাস্থ্য বলছে। করোনা শনাক্তের পরীক্ষা নিশ্চয়ই কোন কঠিন পরীক্ষা নয়। দরকার শুধু কিট। দরকার রিয়েল টাইম পিসিআর মেশিন সেট আপ, ল্যাব, ডাক্তার ও টেকনোলজিস্ট। আমার মনে হয়, এটি খুব কঠিন কাজ নয়। আমার বিশ্বাস আমাদের বড় বড় হাসপাতাল, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার, ঔষধ তৈরির প্রতিষ্ঠান এমন অনেক স্থানেই পরীক্ষাটি করা সম্ভব।
রাষ্ট্রকে বলবো, মেগাপ্রজেক্ট, শিল্প খাতের প্রণোদনা এগুলো কোনটাই এখন গুরুত্বপুর্ণ নয়। এই মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরী করোনা রোগী শনাক্ত করা ও তাদের চিকিৎসা করানো। চিকিৎসার ক্ষেত্রে, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, ডাক্তার কতো কতো সংকট আছে। সেসব দিকে আর নাই বা গেলাম। কিন্তু এই মুহুর্তে বেশি বেশি পরীক্ষা করে আক্রান্তদের আলাদা করা দরকার।
নাগরিকদের বলবো, আপনার মধ্যে করোনার যদি বিন্দুমাত্র লক্ষণ দেখেন সঙ্গে সঙ্গে হটলাইনে ফোন করেন। আপনি একদিন দেরি করা, একদিন ঘর থেকে বের হওয়া মানে আরও দশজনের বিপদ টেনে আনা। কাজেই আপনারা যতো দ্রুত সম্ভব। আর রাষ্ট্রকে বলবো, দিনে যদি ৫ হাজার লোক ফোন করে বলে তাদের করোনা পাঁচ হাজারকেই একদিনে পরীক্ষা করতে হবে। একদিন দেরি করা মানে বিপদ ডেকে আনা। মনে রাখবেন, করোনা আমাদের চেয়ে আগে ছুটছে। আমরা যদি করোনার আগে ছুটতে না পারি তাহলে এই রাষ্ট্রে ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে। কাজেই চলুন আমরা করোনার আগে ছুটি। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক...
আরও পড়ুন-