বাংলাদেশের সিস্টেমে পরিবর্তন কতটা জরুরী সেটা দেখিয়ে দিলো করোনাভাইরাস!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে ৮০ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন সুলতান মনসুর। লকডাউনের সময় তাকে যখন বলা হলো, এলাকায় এসে ত্রাণ দেবেন না? জবাবে বললেন, এলাকায় আসবো কি তোদের বোনদের বিয়ে করতে?
সুব্রত শুভঃ সিস্টেমে কেন পরিবর্তন জরুরী তার জন্যে সবচেয়ে ভাল দুটি উদাহরণ আমাদের সামনে আছে; ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মনসুর। মোদী সংসার ধর্ম পালন করেন নাই, ছেলেমেয়ে নাই সুতরাং নিজের দুর্নীতি করার প্রয়োজন নাই। তিনি নিজের বেতনও তোলেন না।
এমন সন্ন্যাসীর যখন ক্ষমতায় তাহলে ভারতে তো ইতোমধ্যে সত্যযুগ চলে আসার কথা ছিল। অথচ হয়েছে উল্টো, ভারতের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ, ঋণ খেলাপিও বাদ নেই। দেখা যাচ্ছে মোদী গরীবের সেবা অপেক্ষায় আম্বানী পরিবারের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
কারণ তিনি স্বয়ংসেবক সংঘ ও বর্তমান সিস্টেমের প্রতিনিধি মাত্র। তাই সন্ন্যাসী প্রধানমন্ত্রী পেয়েও সাধারণ জনগণের তেমন কোন উপকার হয় নাই। ভারতের জনগণও আমাদের মতন কিছু বললেই রাগ করে কিন্তু ভারতে যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বস্তি অবস্থিত তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। মুসোলিনি ছিলেন শ্রমিক নেতা কিন্তু ক্ষমতা পাওয়ার পর তিনিই সবচেয়ে শ্রমিক শোষণ করেন।
ভারতের লকডাউনের সময় দেখলাম চাওয়ালা থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া নরেন্দ্র মোদী হাজার হাজার শ্রমিককে পায়ে হাঁটিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছেন। কংগ্রেস তো পরিবার তান্ত্রিক রাজনীতি করে বিজেপি তো তা করে না কিন্তু তারা দুই দলই প্রাইভেট নীতিতে বিশ্বাসী এই কারণে আমাদের মতন তাদেরও ভাগ্যে যেই লাউ তাই কদু।
আওয়ামী লীগের বিপরীতে পাবলিক ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মনসুরকে ভোট দিয়েছেন। তিনি ৮০ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন। তো, লকডাউনের সময় ওনার এলাকার এক লোক তাকে যখন বললেন; আপনে এলাকায় এসে ত্রাণ দেবেন না? জবাবে সে কইল; আমি এলাকায় আসবো কী তোদের বোনদের বিয়ে করতে।
আওয়ামী লীগের এমপির সাথে আসলে সুলতান মনসুর তফাৎ কোথায়। বিরোধী দলে থেকে এই অবস্থা সরকারী দল হলে তো মনে হয় ঐ লোকের বোনসহ পিটুনি দিত। এমপিত্ব যাওয়ার ভয় নাই তাই দেশে যা খুশি তাই বলা যায়।
জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নাই, উন্নত যন্ত্রপাতি নাই, শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্যে ভেন্টিলেটর নাই। বজরঙ্গী ভাইজান ১১ বছর দেশ শাসন করছেন এর আগে ৫ বছর ছিলেন মুন্না ভাই। তো, হাসপাতালের মেশিন নাই এর কারণ এই নয় যে বজরঙ্গী ভাইজান মেশিন বিক্রি করে দিয়েছেন। এর মূল কারণ হল মুন্না ভাইও মেশিন দেয় নাই, বজরঙ্গীও কিনে নাই। আর এই কারণে সিলেটের ডাক্তার মূলত মারা গেছেন।
সিলেটের ডাক্তারদের মতন সিলেটের সব মানুষ কী ঢাকায় আসার ক্ষমতা রাখে? আর জেলা হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা যদি না থাকে তাহলে আর থাকবেটা কোথায়? কারণ উপজেলা, ইউনিয়নের লোকদের কাছে জেলার হাসপাতালই মূলত প্রধান হাসপাতাল। অথচ আমরা দেখলাম জেলা হাসপাতাল উন্নয়নে করার বিপরীতে মুন্না ভাই আর বজরঙ্গী ভাই একই অবস্থানে বিশ্বাসী। দুই জনই চায় মানুষ যেন জমি বিক্রি করে প্রাইভেটে যায়।
কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে ফ্রি চিকিৎসা আর পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের মানুষের স্বাধীনতার ইস্যুতে মানুষ বিভাজন হয়ে যায়। অথচ মানুষের স্বাধীনতা ও ফ্রি চিকিৎসার চমৎকার সমন্বয় করেছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলো। এরা কিন্তু কেউ কমিউনিস্টও না বরং তারা এটা ঘৃণা করে। এরা প্রাইভেটেও বিশ্বাসী কিন্তু রাষ্ট্রে কী কতোটুকু প্রাইভেট ও পাবলিক হবে তা নিয়ে তাদের একটা বোঝাপড়া আছে। এখানে প্রাইভেট ক্লিনিক ও পাবলিক ক্লিনিক কোনটা তা বোঝা মুশকিল। কারণ খরচ সরকারের।
আমাদের মন্ত্রীরা পাবলিক সেক্টরের দায়িত্বে। অথচ তাদের ছেলেমেয়ে, চিকিৎসা সব কিছু হয় প্রাইভেটে। নিজেরাও প্রাইভেট ব্যবসার সাথে জড়িত। তো,তার কী ঠ্যাকা পড়ছে পাবলিক সার্ভিসের উন্নতি করা কারণ সে তো কখনো সেখানে চিকিৎসা নিতে যাবে না কিংবা তার পরিবারের কেউ পড়তে যাবে না পাবলিক ভার্সিটিতে। হয়, দেশে প্রাইভেট ব্যবসা বন্ধ করতে হবে, না হয় সরকারী কর্মকর্তা, মন্ত্রী, এমপির সন্তানরা যেন সরকারী হাসপাতাল, স্কুল-ভার্সিটিতে যেতে বাধ্য এমন আইন পাশ করা।
এই জন্যে দরকার এক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-নীতি। সিস্টেম চেঞ্জ না করে কিংবা সিস্টেম পরিবর্তনের ওয়াদা না করে শুধু ব্যক্তি ও দলের পরিবর্তন মূলত নতুন বোতলে পুরান মদ। আর এই মদে ১৭ কোটি মানুষের কিছুটা নেশা হতে পারে তবে শিক্ষা ও চিকিৎসায় কোন পরিবর্তন আসবে না।।