করোনার চেয়েও ভয়াবহ যে 'ভাইরাস' নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যাথা নেই!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
দিল্লি দাঙ্গায় মারা গেল ৫১ জন, বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসে ৩০০০ জন, এ বছর অস্ট্রেলিয়ার দাবানলে ৩৪ জন, আর সড়ক দুর্ঘটনায় কতজন?
শুভদীপ ছন্দ: 'গত চব্বিশ ঘণ্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন বাইশজন' - এ খবরটিতে কোনো তারিখের দরকার নেই। কারণ সংখ্যাটি প্রতিদিনই ঘুরে ফিরে প্রায় একিরকম। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার কাছে কিছুই না।
অথচ বিষয়টি প্রতিরোধযোগ্য। নিশ্চয়ই আমাদের কোথাও সমস্যা হচ্ছে। আমাদের রাস্তার প্ল্যানিং ডিজাইনিং কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে। আমি বুঝি না আমাদের কর্তাব্যক্তিরা কেন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গুলোকে এখানে জড়িত করে না। যদি রাস্তার ডিজাইনে সমস্যা থাকে তারা ধরতে পারবে। দেখুন খাদিজা নামক মেয়েটি যে মাইক্রোবাসে মারা গেল সেটি রাস্তার পাশে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল। লেন মার্কিং, সাইনেজ, রাস্তার পাশে এসব যমদূতের ন্যায় গাছপালায় যদি সমস্যা থাকে সে-ও তারা ঠিক করতে পারবে।
তারপর নিয়মের আরো কড়াকড়ি করা হোক। ভারত আকাশ পাতাল কড়া সড়ক আইন করলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ট্রল হলো। কিন্তু দিনশেষে সুফল তারা পাচ্ছে। তামিলনাড়ু প্রদেশ এক বছরেই ২২% সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে ফেলেছে। অনেকে বলে এক রোডে সবই চলে, সেজন্য একসিডেন্ট বেশি ঘটে। যেখানে যে অংশে সবই চলে- ঠেলাগাড়ি, রিকশা, ব্যাটারি গাড়ি, সিএনজি, বাস, ট্রাক- সেখানে গতিসীমা কমিয়ে দেয়া হোক। সবাই রিকশার গতিতে চলুক। আমরা তো এমনকিছু করছি না যে সময়ের আগে ছুটতে হবে। উল্টো রিকশা বন্ধ করতে গিয়ে আন্দোলনের চোটে রিকশাও বন্ধ হয় না, দুর্ঘটনাও কমে না!
এ মৃত্যু গুলোর বেশিরভাগ শিকার যুব সম্প্রদায়। একটি দেশ কী তার এত সংখ্যক তরুণের মৃত্যুভার বইতে পারবে? আর যারা পঙ্গু হয়ে বেঁচে রইলেন তাদের চোখের জলের কোনো সীমা পরিসীমা নেই। আমরা কী সে হিসাব কখনো করতে পারব?
অদক্ষ চালক, অযোগ্য সিস্টেম, ফিটনেস বিহীন গাড়ি- এসব কথা যখন বলা হয়, কারো না কারো লেজে পা পড়ে। আমরা ওগুলোকে সরিয়ে বাকিগুলো নিয়ে কাজ করি। পরে ওগুলোকে ধরি।
দশ বছরের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু অর্ধেকে নামিয়ে আনার ব্যাপারে বিশ্বের ১৪০টি দেশ সাইন করেছে। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। কিন্তু আস্থা কী পাচ্ছে? আপনি হাসপাতালে গেলে যত না কল পাবেন, বাসে উঠলে তারচেয়ে বেশি কল রিসিভ করবেন। শুধু শুভকামনা, আর কতদূর, কতক্ষণ- এসব প্রশ্ন। নিকটজন বাসে উঠলে অস্বস্তিতে থাকে ঘরের সবাই।
দিল্লি দাঙ্গায় মারা গেল ৫১ জন, বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসে ৩০০০ জন, এ বছর অস্ট্রেলিয়ার দাবানলে ৩৪ জন, আর সড়ক দুর্ঘটনায় কতজন? এক হিসেবে দেখলাম বিশ্বব্যাপী ১৩ লক্ষ লোক মারা যাচ্ছে প্রতিবছর। তার ৯৩% আমাদের মতো দেশে। সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে প্রধানতম কারন ৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর। পত্রিকা খুলে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি থাকুক না থাকুক, রাজনৈতিক প্যাঁচাল থাকুক না থাকুক, সড়ক দুর্ঘটনা থাকছেই। আমরা সচেতন ভাবে এ খবরগুলো স্কিপ করে যাই। অপেক্ষা করি নিজের টার্ন আসার!
যেভাবে, যা করলে, যত অদ্ভুত কিম্ভুত নিয়ম করেও যদি সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যায় তাই করা হোক। এ মৃত্যুগুলো সহ্য করা যায় না। পাঁচ বছরের খাদিজার আত্মা আমাদের কখনো ক্ষমা করবে না। স্বজন হারানো এ হাহাকার গুলো আকাশ বাতাস ছিঁড়ে ফেলে!