আমেরিকা ইংল্যান্ড সব যায়গায় সুপারমার্কেট ফাকা, একদম ফাকা, আমাদের এখানে তাও এখনও দোকান পাট খোলা আছে। জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যায়।

করোনা নিয়ে কিছু লিখবো না ভেবে রেখেছিলাম, কারন এটা নিয়ে এতো বেশি লেখা হবে যে, সবাই এখন এই বিষয়টা ইগনোর করে যাবে। আপনিও চাইলে ইগনোর করতে পারেন আমার লেখা। 
শুধুমাত্র কিছু সচেতন মানুষের জন্য এই লেখাটা লিখছি, সাধারন আম জনতার জন্য নয়। বাংলাদেশের আম জনতার প্রতি আমার কোন রেসপেক্ট বা সহানুভুতি নাই, কোনদিন ছিলও না। 

অনেকেই সরকারের দোষারোপ করছেন করোনা নিয়ে প্রস্তুতি না থাকার জন্য। তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা একটু কস্ট করে সিএনএন বা বিবিসি দেখে আসুন তারপর দেখেন করোনা নিয়ে কোন দেশের প্রস্তুতি কেমন। আমি এটা বলার চেস্টা করছি না যে অন্যদের নেই দেখে আমাদের থাকবে না কেন। আমি শুধু লজিক্যালি এক্সপ্লেইন করার চেস্টা করছি। 

পেনডেমিক শব্দটা আমরা শুনেছি মাত্র, আমাদের জীবদ্দশায় প্যান্ডেমিক মোকাবেলা করা দূরে থাক, দেখার দুর্ভাগ্য কারো হয়নি। তাই সারা পৃথিবী জুড়ে সব দেশই এক প্যান্ডেমিক মোকাবেলায় হিমিশিম খাচ্ছে। সবাই মনে করেছিল চায়নায় হয়েছে ওদের এই সমস্যা ওই সমস্যা তাই হচ্ছে আমাদের হবে না। 

আবার এই ভাইরাস আসলে কিরকম, কোন পরিবেশে কি আচরন করবে, নিজেকে কতটুকু মিউটেট করতে পারবে, এটা জানা ছিলনা কারোই তাই এই প্যান্ডেমিক মোকাবেলায় ব্যর্থ হচ্ছে প্রায় সবাই। পারসোনাল প্রটেকটিভ গিয়ার কি জিনিস আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেডিক্যাল স্টুডেন্ট শুধু বই পত্রে পড়েছে, ব্যাবহার করা দূরে থাক হাতে নিয়েও দেখেনি কখনও কেউ। এমনকি সাধারন ১০ টাকা দামের সার্জিক্যাল মাস্কের কোন সাইড ভেতরে থাকবে সেটা পর্যন্ত আমরা কেউ জানি না। অথচ হৈ চৈ করছি পিপিই নাই, মাস্ক নাই, গ্লাভস নাই এইসব। 

কয়েকটি দেশের করোনা প্রস্তুতির চিত্র: 

নিউ ইয়র্ক গভর্নর এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প তারা পরস্পর ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের জন্য, মাত্র চারশ ভেন্টিলেটর পাঠিয়েছে, এটা দেখে খেপে গেছেন গভর্নর। সে রেগে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলে দিল আমার দরকার ত্রিশ হাজার আপনি পাঠিয়েছেন মাত্র চারশ, বাকি ২৯,৬০০ লোকের মৃত্যুর জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়ী থাকবেন। এই ঝারি শুনে ট্রাম্প ন্যাশনাল স্টকপাইল থেকে আরো ২০০০ ভেন্টিলেটর পাঠিয়েছে। আবার বলছি তাদের ন্যাশনাল স্টকপাইল থেকে ২০০০ ভেন্টিলেটর পাঠিয়েছে। বুঝেন অবস্থা তাদের স্টকে ২০০০ ভেন্টিলেটর পরে থাকে তাও তারা পাঠায়নি। আর আমাদের সারা দেশে ২০০ আছে কি না সন্দেহ। 

ভেন্টিলেটরের আকাল শুধু আমেরিকায় নয়, ইতালী, স্পেন, ইংল্যান্ড সব জায়গায়। একটা ভালো খবর যে, চায়না ধাক্কা সামলে উঠেছে এবং অলরেডি এসব জিনিসের প্রোডাকশন শুরু করে দিয়েছে, যারা টাকায় কিনবে তারা আগে পাবে, আমরা দয়া ভিক্ষায় পাবো তাই আমাদের একটু দেরি হবে। 

কোয়ারেন্টাইন না মানা: 

কোয়ারেন্টাইন কি এটা উন্নত দেশেও অনেকেই জানে না, পালন করবে দূরে থাক। সত্যি বলতে সমগ্র বিশ্বে এখন যেটা চলছে এটা কোয়ারেন্টাইন না এটা হোম আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন আরো ভয়াবহ। ইতালীর একটা ভিডিও দেখলাম বিভিন্ন শহরের মেয়রেরা রাস্তায় নেমে লোকজনদের বকাবকি করছে বাসায় যাওয়ার জন্য। এক লোক কুকুর নিয়ে জগিং করছিল, তাকে ঐ এলাকার মেয়র তাকে রাস্তায় থামিয়ে ধমক দিয়ে জিজ্ঞেশ করছে তুমি কি উইল স্মিথ হয়ে গেছো, আই আম লিজেন্ড সিনেমার মতো সারা শহরে একমাত্র তুমিই কুকুর নিয়ে ঘুরছো, বাসায় যাও। 

করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে ভীষণ দ্রুত গতিতে

প্যানিক বায়িং: 

শুধু অস্ট্রেলিয়ার প্যানিক বায়িং এর এক্সামপলই এনাফ, টয়লেট পেপারের আকাল লেগে গেছিল অস্ট্রেলিয়ায়। আমেরিকা ইংল্যান্ড সব যায়গায় সুপারমার্কেট ফাকা, একদম ফাকা, আমাদের এখানে তাও এখনও দোকান পাট খোলা আছে। জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যায়। 

এই করোনা পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা একটা বিশাল অভিজ্ঞতা, জাস্ট চার বছর আগে বিল গেটস টেড টক এর একটি অনুষ্ঠানে এরকম কিছুর একটা ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন আমরা এধরনের প্যান্ডেমিক মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত নই। কোন দেশই নয়, একক ভাবে কোন দেশ দূরে থাক সামগ্রিক ভাবে গোটা পৃথিবী এধরনের একটা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে না। 

এর মধ্যে শুনছি এন্টার্ক্টিকা মহাদেশের বরফ গলতে থাকলে প্রি হিস্টোরিক যুগের নতুন ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া (যেগুলো বরফে চাপা থেকে ডরম্যান্ট ছিল) সেগুলো ছড়িয়ে নতুন রোগের আবির্ভাব ঘটাতে পারে। তাই মনে করি এই করোনা আমাদের জন্য একটা ওয়েক আপ কল। আমাদের হেলথ কেয়ার সিস্টেম ঢেলে সাজাতে হবে, শুধু আমাদের না, পৃথিবীর সব দেশকেই একসাথে কাজ করতে হবে। ১৯১৮ সালের ফ্লু পেন্ডেমিক পুরো বিশ্বে ছড়াতে সময় নিয়েছিল প্রায় দুই বছর, অথচ এই করোনা ২ মাসের মধ্যেই পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে ছড়িয়ে গেছে। পৃথিবীর কোন দেশ এককভাবে নিরাপদ নয়। তাই সবাইকেই কাজ করতে হবে সম্মিলিত ভাবে, এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারলে হয়। 

আফটারম্যাথ:

আমার বিশ্বাস, করোনায় যে ই তার আপনজন হারাক না কেন, এই শোক কাটিয়ে উঠতে ছয় মাসের বেশি লাগবে না। এর দুটো কারন- প্রথমত করোনায় অকাল মৃত্যুর পরিমান তুলনামূলক অনেক কম। দ্বিতীয়ত- পেন্ডেমিক শেষ হয়ে গেলে আর্থিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে যথেস্ট পরিশ্রম করতে হবে তাই শোক করার সময় থাকবে না। করোনায় আর্থিক ক্ষতি খুব বেশি হলেও এটা বৈশ্বিক মন্দা তৈরি করবে বলে আমার মনে হয় না, কারন এতে সব দেশ, সব সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সব দেশই চাইবে কোন না কোন উপায়ে স্টিমুলেট করে ইকোনোমির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। গ্লোবাল প্রোডাকশন যেমন কমে গেছে, গ্লোবাল কনজাম্পশনও কিন্তু কমে যাচ্ছে। তাই বছরখানেকের মধ্যেই সারা পৃথিবী ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমার বিশ্বাস।

শেষ করি একটা পুরোনো ডায়লগ নতুন করে দিয়ে- what doesn't kill you makes you stronger. এই করোনা অনেক জীবন কেড়ে নিয়ে যাবে এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক যে পৃথিবী থেমে থাকবে না। আমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা আমাদের চেয়ে আরো একটু বেশি শক্তিশালী হয়েই বাঁচবে। তাদের খেয়াল রাখতে হবে এই পৃথিবীটাও যেন তাদের মতো শক্তিশালী হয়ে বেঁচে থাকে। কারন ২০০ কোটিই হই আর ৭৮০ কোটিই হই কাড়াকাড়ি মারামারি করে থাকতে হবে এই পৃথিবীতেই অন্য কোথাও কিছু নেই, আমাদের রক্ষা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না। ঈশ্বর আমাদের ছেড়ে চলে গেছে অনেক জনম আগেই।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা