সংকটকালীন এই মুহুর্তে আক্রান্ত সকলকে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা সরকার তথা দেশের অর্থনীতির জন্য আর একটি বাড়তি বোঝা। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে এই সুবিধাটা বাদ দেয়া হোক। তবে...

করোনায় আক্রান্ত হলে সরকারের প্রথম থেকে নবম গ্রেডে কর্মরত একজন কর্মকর্তা ১০ লাখ টাকা পাবেন। আর মারা গেলে ৫০ লাখ টাকা। ২৩ এপ্রিল সরকারের এই পরিপত্র জারির কয়েকদিন পরেই আমার ছোটবেলার এক বন্ধু যে এখন সরকারি কর্মকর্তা এবং মোটামুটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা পদে রয়েছে সে আমাকে একদিন ফোন দেয়। তাঁর ফোনের সারমর্ম, দেশের ক্রান্তিকালে এভাবে প্রণোদনা দেয়া অপ্রয়োজনীয়। সরকার বিষয়টা যেন পুনবিবেচনা করে। আমি যেন বিষয়টা নিয়ে লিখি। কথাগুলো শুনে ভীষণ ভালো লাগলো। দেশের এই সংকটে সবার কথা ভাবাটাই তো দেশপ্রেম।

আজকে টাঙ্গাইল সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম -এর একটা পোষ্টের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার দেবাশিস কুমার দাসের চিঠিটা দেখলাম। ভীষণ ভালো লেগেছে।

দেবাশিস টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন- সরকার যে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, সেটি সাধুবাদ পাবার দাবী রাখে। তবে সরকারী কর্মচারীগন এখন খুব ভাল বেতন-ভাতাদি প্রাপ্ত হন। আর দেশের যেকোন ক্রান্তিকালে তারা দায়িত্ব পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। এই মহামারি মোকাবেলা করতে গিয়ে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঝুঁকির মাঝে রয়েছে। একটা বড় জনগোষ্ঠী উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে। তা সত্ত্বেও সরকারের সময়োপযোগী নানা উদ্যোগ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।

দেবাশিষ লিখেছেন, অনেকেই ধারনাপোষণ করেন, এ দুর্যোগ থেকে এত সহজে আমরা পরিত্রাণ পাব না এবং ধাপে ধাপে কম-বেশী সকলেরই আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত সকলকে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা সরকার তথা দেশের অর্থনীতির জন্য আর একটি বাড়তি বোঝা বলে আমি অনুভব করি। কেউ মারা গেলে, তার পরিবারকে ঘোষিত প্রণোদনা অবশ্যই প্রদান করা উচিত। কিন্তু, আক্রান্ত কর্মচারির ক্ষেত্রে আর্থিক প্রণোদনা প্রত্যাহারপূর্বক তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা অধিকতর যৌক্তিক। আমি মনে করি সুস্থ্য হয়ে গেলে আমাকে দশ লক্ষ টাকা প্রদানের চেয়ে রাষ্ট্রের কোষাগারের জন্য এই অর্থ এখন বেশী প্রয়োজন।

ধন্যবাদ দেবাশিষকে। আপনার সাথে পুরোপুরি একমত হয়ে বলছি, কেউ অসুস্থ হলে তাঁর সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা অধিকতর যৌক্তিক। আর কেউ সুস্থ হয়ে গেলে দশ লাখ টাকা প্রদানের চেয়ে রাষ্ট্রের কোষাগারের জন্য এই অর্থ বেশি বেশী প্রয়োজন। কারণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যেটাই ব্যয় করা হোক না কেন, সেটা সাধারণ মানুষের করের টাকা। সংকটকালীন এই সময়ে আমাদের রাষ্ট্রীয় অর্থের খরচ কমাতে পারলে সেটা দেশেরই ভালো।

কাজেই সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে কেউ অসুস্থ হলে তাকে দশ লাখ টাকা, সাত লাখ টাকা বা পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার সুবিধাটা বাদ দেয়া হোক। তবে যে কোন সরকারি কর্মচারী আক্রান্ত হলে তার যেন সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে এই সুবিধা থাকতেই পারে।

একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে, করোনার এই সংকটকালীন সময়ে আমাদের ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী-পুলিশ-প্রশাসনসহ জনপ্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা দারুণ মানবিকভাবে কাজ করছেন। এই রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা। আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই যদি সৎ ও মানবিকভাবে দেশে ও দেশের কথা ভেবে কাজ করি, তাহলে বহু সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ। ভালো থাকুক এই দেশের প্রতিটা মানুষ।

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন

আরও পড়ুন-


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা