করোনাভাইরাসের সময়ে মসজিদ খোলা রাখা নিয়ে একজন ইমাম যা বলছেন!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আমরা প্রতিনিয়ত গালি খাই এসব কথা বলেই। এবার এই ইমামকেও মসজিদবিরোধী কিংবা ইসলামবিরোধী বলুন!
আবু ইউসুফ মাহফুজ: করোনাভাইরাস কেন মসজিদে দ্রুত ছড়াবে? মূল বিষয়ে বলার আগে একটু বলে নিই। করোনা ভাইরাস ছড়ায় কীভাবে? সহজ ভাষায়-
(১) আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস বাতাসে কিছুক্ষণ ভাসমান থাকে, সেখানে অবস্থানরত অন্য কেউ শ্বাস নিতে গিয়ে সেটি তার ভিতরে টেনে নেয় এবং আক্রান্ত হয়।
(২) মানুষ হাঁচি দেয় নাক দিয়ে, কাশি দেয় মুখ দিয়ে। নাক এবং মুখ মুখমণ্ডল বা চেহারার অংশ। সে হিসেবে নাক বা মুখ থেকে ছড়ানো করোনা ভাইরাস নিকটবর্তী অঙ্গ নাকের ডগা, গাল এবং কপালে সহজেই লেগে যায় এবং অবস্থান করে। মানুষের সহজাত একটি প্রবৃত্তি হলো মানুষ নিজের অজান্তেই দিনে অসংখ্যবার হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ করে। এরপর সে হাত দিয়ে যা কিছু স্পর্শ করে তাতেও ভাইরাস লেগে যায়। অন্য কেউ সেই একই যায়গা স্পর্শ করলে তার হাতে ভাইরাস স্থানান্তরিত হয়। সেই ব্যক্তি নিজের অজান্তে নিজের নাক-মুখ স্পর্শ করে আক্রান্ত হয় এবং অন্যান্য বিভিন্ন বস্তু স্পর্শ করার মাধ্যমে ভাইরাসটি আরো ছড়িয়ে দেয়।
এবার একটু নিচের বিষয়গুলো চিন্তা করুন-
(১) মসজিদ একটি বদ্ধ যায়গা। সেখানে ভাইরাস বহনকারী কেউ হাঁচি বা কাশি দিলে ভাইরাসটি মসজিদের ভিতরেই ভেসে বেড়াবে। উপরন্তু ফ্যানের বাতাসের কল্যাণে নামাজরত সকল মুসল্লির নাকের ডগায় ভাইরাসটি খুব দ্রুত পৌছে যাবে সন্দেহ নেই।
(২) সেজদার সময় দু'হাত মাটিতে বিছাতে হয়, নাক ও কপাল মাটিতে রাখতে হয়। হাত, নাকের ডগা ও কপাল থেকে কত সহজে ভাইরাস টাইলস বা কার্পেটে লেগে যাবে সেটা বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয়। পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজে সেই স্থানে হাত আর নাক-মুখ স্পর্শ করবে আরেক মুসল্লি। বুঝতেই পারছেন।
মসজিদ ও অন্যান্য স্থানের তুলনা অযৌক্তিক-
(১) বাজারে, মার্কেটে বা ব্যাংকে একজন লোককে দৈনিক পাঁচবার যেতে হয় না। সপ্তাহে একবার বা তারও কম গেলে চলে। সেখানে এত স্পর্শ করা-করির বিষয় নেই।
(২) বাজারে না গেলে মানুষ না খেয়ে মরবে, ব্যংকে না গেলে টাকা পাবে কোথায়? বেতন তুলবে কোত্থেকে? শপিং সেন্টারে না গেলে অবশ্য সাধারণ মানুষের কোন সমস্যা হবার কথা নয়। ব্যবসায়ীদের এবং অর্থনীতির ক্ষতি হবে। পক্ষান্তরে, মসজিদে না যেতে পারার কারণে বাসায় নামাজ পড়লে সওয়াব একটুও কমবে না।
(৩) সে-ই প্রকৃত মুসলিম, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদে/শান্তিতে থাকে (আল-হাদিস)। বর্তমান পরিস্থিতিতে মসজিদে গেলে ভাইরাস বহনকারীর মুখমণ্ডল এবং হাতের দ্বারা মুসল্লি মুসলিমরাই বেশি আক্রান্ত হবে।
এই সহজ হিসেবটা বুঝে আসে না! এত দুর্বল কেন আমাদের চিন্তাশক্তি? আমাকে মসজিদ-বিরোধী প্রমাণের বৃথা চেষ্টা করবেন না। আমি মসজিদের ইমাম। আমার মসজিদের অনেক মুসল্লি আমার কাছে মসজিদ চালু করার ফতোয়া চাচ্ছিল। আমি পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতির আগ পর্যন্ত মসজিদ বন্ধ রাখার ফতোয়া দিয়েছি।
প্রিয় পাঠক, করোনার এই দিনগুলিতে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হতেই পারেন আপনি। সেটা হতে পারে অর্থনৈতিক, মানসিক- বা অন্য কিছু। আপনার সমস্যার কথা জানান আমাদের, আমরা চেষ্টা করব সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করার, যাতে বেরিয়ে আসে সমাধানের পথ।